Smart Phones

নেশাগ্রস্ত

বিশেষজ্ঞেরা সাবধান করিতেছেন, রাত্রিতে ঘুমাইবার পূর্বে স্মার্টফোনে মগ্ন থাকিলে নিদ্রা-জাগরণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি বিপর্যস্ত হইয়া পড়ে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২১ ০৮:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

অতিমারি-পূর্ব এবং অতিমারি-উত্তর বিশ্ব আর কখনও এক হইবে না। পরিবর্তন নানা দিকে, এবং বহুবিধ। তবে, সর্বাপেক্ষা আলোড়ন বোধ হয় আসিয়াছে স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে। আক্ষরিক অর্থেই, ‘ভার্চুয়াল’ দুনিয়া প্রবেশ করিয়াছে বাস্তব জগতে, যাহা অ-ভূতপূর্ব। অবশ্য, ক্ষুদ্র যন্ত্রটির ভবিষ্যৎ যে শুধুমাত্র যোগাযোগ রক্ষা এবং বার্তা বিনিময়ের স্বল্প পরিসরেই সীমাবদ্ধ থাকিবে না, তাহা পূর্বেই বুঝা গিয়াছিল। এখন, লকডাউন-উত্তর বিশ্বে সমগ্র মানবসমাজের অস্তিত্বই তাহার উপর নির্ভরশীল। যত গণ্ডিবদ্ধ হইয়াছে মনুষ্যজীবন, যত কমিয়াছে সামাজিক মেলামেশার সুযোগ, তত মানুষের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হইয়াছে ছয় ইঞ্চির স্ক্রিনে। সমীক্ষায় প্রকাশ, ২০১৯ সালে স্মার্টফোনে অতিবাহিত সময়ের পরিমাণ ছিল দিনে গড়ে ৪.৫ ঘণ্টা। ২০২০ সালে সেই পরিমাণ দাঁড়াইয়াছে ৭ ঘণ্টা। এক বৎসরে বৃদ্ধি প্রায় ৩৯ শতাংশ।

Advertisement

ঘর হইতে কাজ, অনলাইন শিক্ষার দুনিয়ায় স্মার্টফোন এখন অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। অবস্থা এমনই, যে গৃহে অন্তত একটিও স্মার্টফোন নাই, সেই গৃহের শিশু শিক্ষা হইতে বঞ্চিত থাকিবে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের বহুবিধ বিড়ম্বনায় পড়িতে হইবে। সুতরাং, এই বস্তুটির ব্যবহার যে বাড়িবে, তাহা প্রত্যাশিত। বিপদ অন্যত্র। প্রয়োজন এখন এক বিরাট সংখ্যক মানুষের নিকট নেশায় পর্যবসিত। বস্তুত, স্মার্টফোনের বিপজ্জনক নেশা লইয়া বিশেষজ্ঞেরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বে সর্বাধিক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। সেখানে ১০ হইতে ১৯ বৎসর বয়সিদের মধ্যে অত্যধিক স্মার্টফোন-নির্ভরতার প্রমাণ মিলিয়াছে। অনেককেই পাঠাতে হইয়াছে নেশা ছাড়াইবার সরকারি কেন্দ্রে। অন্যত্রও দেখা গিয়াছে, স্মার্টফোনের স্ক্রিনে মানুষ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ভুলিতেছেন। নষ্ট হইতেছে পারস্পরিক সম্পর্ক। ফোনই যদি কর্মস্থল হইতে নির্দেশ পাইবার, প্রেমালাপ সারিবার মাধ্যম এবং চিত্ত বিনোদনের উপকরণ হইয়া উঠে, তবে অপর পক্ষের সশরীর উপস্থিতির প্রয়োজন পড়ে না। একই ভাবে, যিনি ‘সেলফি’ তুলিয়া নেট-নাগরিকদের প্রশংসায় অভ্যস্ত, তিনি যখন জ্বলন্ত বাড়ি কিংবা দুর্ঘটনাস্থলের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আপন ছবি তুলিতে ব্যস্ত থাকেন, তখন তাঁহার অ-মানবিকতায় আশ্চর্য বোধ হয় না। তিনি তো বাস্তব জগতেই নাই। ‘ভার্চুয়াল’ দুনিয়ায় মানবিকতা, সহানুভূতিশীলতা— সবই আপেক্ষিক।

স্মার্টফোনে সরাসরি শারীরিক ক্ষতিও কম নহে। বিশেষজ্ঞেরা সাবধান করিতেছেন, রাত্রিতে ঘুমাইবার পূর্বে স্মার্টফোনে মগ্ন থাকিলে নিদ্রা-জাগরণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি বিপর্যস্ত হইয়া পড়ে। শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার পক্ষে যাহা বিপজ্জনক। তাঁহারা পরামর্শ দিতেছেন, রাত্রিতে ঘুমাইবার অন্তত এক ঘণ্টা পূর্বে বন্ধ করিতে হইবে যাবতীয় ডিজিটাল সামগ্রী। দিনের কিছু সময়ের জন্য ফোন বন্ধ রাখিবার কৌশলটি রপ্ত করিতে হইবে। এবং যান্ত্রিক যোগাযোগ নহে, মুখোমুখি সাক্ষাৎ বৃদ্ধি করিতে হইবে আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে। কিন্তু এই সকল পরামর্শ অতিমারি-ধ্বস্ত বিশ্বে কত দূর কার্যকর হইবে, কেহ জানে না। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকিলে প্রযুক্তির মুষ্টি আরও দৃঢ় হইবে। এবং সেই পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হইবে। কিন্তু প্রযুক্তির জালে যাহাতে নিজ অস্তিত্ব না বিপন্ন হইয়া পড়ে, সেই পথও খুঁজিতে হইবে। অবিলম্বে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন