Shanghai Cooperation Organisation

স্পষ্ট কথা

২০২০ সালের জুনে গলওয়ান সংঘর্ষের পরে এই প্রথম আবার ভারত এবং চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অপরের মুখোমুখি হলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ০৫:৩২
Share:

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ফাইল ছবি।

বিদেশনীতিতে কখনও কখনও স্পষ্ট ভাবে উচিত কথাটি জানিয়ে দেওয়া যথার্থ পদক্ষেপ। চিনের ক্ষেত্রে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মতোই সম্প্রতি সেই পথ নিতে দেখা গেল ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকেও। নয়াদিল্লিতে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন-এর সম্মেলনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু-কে সাফ জানিয়ে দেন, বেজিং-এর তরফে সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত ‘ক্ষয়’ করেছে। ফলে, সীমান্ত-সমস্যার সমাধান না হলে দু’দেশের সম্পর্ক পুনরায় সুস্থির হওয়া সম্ভব নয়। ২০২০ সালের জুনে গলওয়ান সংঘর্ষের পরে সেপ্টেম্বরে মস্কোয় লি-র পূর্বসূরির সঙ্গে বৈঠকের পরে এই প্রথম আবার দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অপরের মুখোমুখি হলেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ-হেন মন্তব্য এবং বৈঠকে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দন না করা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ভারত তার অবস্থানে অনড় থাকতে চায়।

Advertisement

বৈঠকে চিনের বক্তব্যের পুরোটাই হয়তো ভুল নয়— বর্তমানে সীমান্তে পরিস্থিতি সাধারণ ভাবে স্থিতিশীল। তাদের অবস্থান, সীমান্ত-সমস্যা নিয়ে ভাবলেই চলবে না। বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক আদানপ্রদান চলার মাঝে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া খুঁজতে হবে। প্রশ্ন হল, চিন যে ‘স্থিতি’র আশা করছে, তা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? কারণ, সীমান্ত-বিবাদ নিরসনের ক্ষেত্রে ভারত তৎপরতা দেখালেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির কাজকর্মে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বরং সীমান্ত সংক্রান্ত যতগুলি চুক্তি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা বিভিন্ন সময়ে লঙ্ঘিত হয়েছে। রাজনাথ জানিয়েছেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে সীমান্তের যে দু’টি স্থানে এখনও দুই দেশের সেনার মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে (ফ্রিকশন জ়োন), সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। ফলে, দু’তরফেরই প্রায় লক্ষাধিক সেনাকে সীমান্ত এলাকা থেকে সরে আসতে হবে। গত তিন বছরে, সীমান্তের যে পাঁচটি সংঘর্ষের এলাকা থেকে সেনারা সরে এসেছে, তাদের বেশ কয়েকটিতে বাফার জ়োন বা নিরপেক্ষ অঞ্চল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার এখনও সম্ভবপর হয়নি, কারণ পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন স্থানে সেনা ছাউনি ও অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি করে রেখেছে চিন। তা ছাড়াও নানা সময়ে ভারতীয় সেনাকে কৌশলগত ডেপসাং এবং ডেমচকে টহল দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি অরুণাচলেরও বিভিন্ন স্থানকে নিজেদের বলে দাবি করে সেগুলির নাম পরিবর্তন করে পরোক্ষে ভারতের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ভুটানের উত্তরে ডোকলাম মালভূমে যে ভাবে চিন ক্রমশ আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং অঞ্চল-বিবাদ মেটাতে চিনের সঙ্গে বৈঠকে ভুটানের যে আগ্রহ দেখা গিয়েছে, তা নিরাপত্তা সূত্রে ভারতের পক্ষে বিশেষ উদ্বেগের।

ইঙ্গিতটি সুতরাং স্পষ্ট। সীমান্ত-বিবাদের বরফ অদূর ভবিষ্যতে গলার সম্ভাবনা নেই। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পুনঃপ্রচেষ্টা থেকে বেজিং যতই সীমান্ত-বিবাদের প্রশ্নকে আলাদা করার চেষ্টা করুক, কাজটা সহজ নয়। আগের তুলনায় বেজিং-এর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখনও ‘স্বাভাবিক’ হয়নি। সীমান্ত-বিবাদের উত্তেজনা না কমালে সেই স্বাভাবিকতায় ফেরা মুশকিল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন