KMC

বোধোদয়?

উপরোক্ত সংবাদ দু’টি দুই ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের। কিন্তু যোগসূত্রটি এক— শহরের পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক উদ্যোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫১
Share:

—ফাইল চিত্র।

কলকাতার পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পুকুর সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা যে অত্যধিক, সে কথা বহুশ্রুত। কলকাতা পুরসভাও ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ‘একটিও পুকুর বোজাতে দেব না’-গোছের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তাতে বাস্তবচিত্র পাল্টায়নি। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, বিধাননগর পুর এলাকায় পুজোর ছুটি চলাকালীন একটি জলাভূমি ভরাট করে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়ে বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ করে জলাভূমিটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেটিকে পূর্বাবস্থায় ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এই ঘটনা সেই এলাকায় নতুন নয়। ইতিপূর্বেও একাধিক ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুর পূর্বাবস্থায় ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে পুর-প্রশাসন। আপাতদৃষ্টিতে জলাভূমি বাঁচিয়ে রাখতে পুর-উদ্যোগে ঘাটতি নেই। উদ্যোগ প্রসঙ্গেই ওই একই দিনের অন্য একটি সংবাদও উল্লেখ্য। উত্তর দমদম পুর এলাকায় নগরায়ণের ধাক্কায় ফিকে হয়েছে সবুজের উপস্থিতি। অবশিষ্ট সবুজ রক্ষা করতে তাই পুরসভার পক্ষ থেকে সচেতনতা প্রচার, চারা রোপণ-সহ নানাবিধ কর্মসূচির পাশাপাশি পুরনো গাছ চিহ্নিত করা এবং তার পরিচর্যার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। পুরনো গাছ সংরক্ষণের প্রয়োজন শুধুমাত্র সবুজ রক্ষার তাগিদেই নয়, বাস্তুতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে গাছগুলিতে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখাও অত্যাবশ্যক।

Advertisement

উপরোক্ত সংবাদ দু’টি দুই ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের। কিন্তু যোগসূত্রটি এক— শহরের পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক উদ্যোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি। তা সত্ত্বেও অবশ্য কিছু অপ্রিয় প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। প্রথম প্রশ্নটি ক্ষতি পূরণের। জলাশয়, এবং প্রাচীন গাছ সংরক্ষণ— উভয়ই পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। এবং কলকাতায় উভয় বিষয়ই সমান অবহেলিত। ফলে, এত দিনে যে পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা পূরণ করা কার্যত অসম্ভব। এই উদ্যোগ হয়তো ভবিষ্যৎ ক্ষতির গতি স্তিমিত করবে, কিন্তু যে ধ্বংসলীলা ইতিমধ্যেই চলেছে, তার ফল নাগরিককে ভুগতেই হবে। ইতিপূর্বে কলকাতায় কখনও রাস্তা সম্প্রসারণ, কখনও গাড়ি চলার পথে বাধা, নগরায়ণ— নানাবিধ অজুহাতে অসংখ্য পুরনো গাছ হয় কেটে ফেলা হয়েছে, নয়তো ডালপালা ছেঁটে অতি-দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। যশোর রোডের ধারের তিনশোরও অধিক প্রাচীন গাছ উন্নয়নের স্বার্থে কেটে ফেলার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা, সভা, গণস্বাক্ষর— কিছুই বাদ পড়েনি। কিন্তু সিদ্ধান্তের নড়চড় হয়নি। সেই প্রাচীন মহীরুহদের কি সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল না? এই ক্ষতি পূরণ হবে কোন মন্ত্রে?

দ্বিতীয় প্রশ্নটি একেবারেই গোড়ার। ক্ষতি হওয়ার পর তা মেরামতের তুলনায় পূর্বেই সেই ক্ষতি রুখে দেওয়া অধিক জরুরি নয় কি? পুকুর এক বার বোজানো হয়ে গেলে তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ যথেষ্ট ঝক্কির, ব্যয়সাপেক্ষও বটে। তুলনায় গোড়া থেকেই কঠোর নজরদারি চালিয়ে পুকুর ভরাটের অপচেষ্টা রোখা এবং দোষীদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিদান অধিক কার্যকর হত। তাতে আগামী দিনের অপরাধের সংখ্যা কমতে পারত। সেই পথে না গিয়ে শুধুমাত্র পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা বালিতে মুখ গুঁজে রাখার শামিল। যেখানে প্রয়োজন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং আইনের উপযুক্ত প্রয়োগ, সেখানে জোড়াতালি বন্দোবস্ত আদৌ ফলপ্রসূ হবে কি?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন