Traffic Violations

পথের বিপদ

এই সমস্ত পরিসংখ্যানই পুলিশকর্তাদের কাছে মজুত থাকে। তৎসত্ত্বেও অনভিপ্রেত ঘটনা এড়ানো যায় না। তাঁরা যে কোনও ব্যবস্থা করেন না, তেমনটা নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

এই বঙ্গে উৎসবের সঙ্গে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার সম্পর্কটি বেশ নিবিড়। উৎসবের রাত যত গভীর হয়, শহরে গতিসীমা ভেঙে, হেলমেট না পরে, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর সংখ্যা এবং সেই হেতু পুলিশি ধরপাকড় উভয়েই লক্ষণীয় বৃদ্ধি পায়। এই বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। দীপাবলির সপ্তাহান্তে যেমন মদ্যপ হয়ে গাড়ি চালানোর অপরাধে শাস্তিপ্রাপকের সংখ্যা ঠিক তার পূর্বের সপ্তাহান্তের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ মোটরবাইক চালক। উচ্ছৃঙ্খলতার কারণ অবশ্য শুধুই দীপাবলি নয়, বিশ্বকাপকে ঘিরে ক্রিকেট অত্যুৎসাহীদের উচ্ছ্বাসও বটে। মনে রাখা প্রয়োজন, দীপাবলি-বিশ্বকাপের সময়টুকু ব্যতিক্রম নয়, প্রতি বছর দোল-দুর্গোৎসবের সময়ও মত্ত অবস্থায় গাড়ি এবং বাইক চালানোর অপরাধে যত জনকে ধরা হয়, সেই সংখ্যাটি যথেষ্ট উদ্বেগের। রাতের কলকাতায় ঘটা দুর্ঘটনাগুলির অনেক ক্ষেত্রেই কারণ হিসাবে উঠে আসে মদ্যপ অবস্থায় চালকের গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো। আসন্ন বড়দিন এবং ইংরেজি নতুন বছরের আগমনে এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা। সাধারণ নাগরিকের সন্ত্রস্ত হওয়ার সঙ্গত কারণ আছে।

Advertisement

এই সমস্ত পরিসংখ্যানই পুলিশকর্তাদের কাছে মজুত থাকে। তৎসত্ত্বেও অনভিপ্রেত ঘটনা এড়ানো যায় না। তাঁরা যে কোনও ব্যবস্থা করেন না, তেমনটা নয়। এই বিপুল জনসংখ্যার ভিড়ে যান নিয়ন্ত্রণের কৃতিত্বটিকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। কিন্তু এটাও অনস্বীকার্য, যে পরিমাণ শাস্তিপ্রাপকদের সংখ্যা তাঁরা প্রতি বছর তুলে ধরেন, বাস্তবে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার সংখ্যাটি তদপেক্ষা কয়েক গুণ বেশি। এবং এর একটি বড় অংশ পুলিশের চোখের সামনেই ঘটে। উৎসবের দিনে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়, জরিমানা আদায়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায় সহজবোধ্য কারণেই, কিন্তু সারা বছর এই তৎপরতা চোখে পড়ে না। ফলে, আইন ভেঙেও যে পার পাওয়া যায়, সেই ধারণাটি জনমানসে বদ্ধমূল হয়েছে। মদ্যপ চালকদের প্রতি সারা বছরই কঠোর হওয়া একান্ত প্রয়োজন, কারণ এর সঙ্গে নাগরিকের জীবনের প্রশ্নটি জড়িত। উৎসব এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে না। বছরভর কড়া নজরদারি এবং কঠোর জরিমানাই একমাত্র শহরে মদ্যপ চালকদের উপদ্রব কমাতে পারে।

শুধুমাত্র মদ্যপ চালকদের ক্ষেত্রেই নয়, কলকাতার মতো ঘন বসতিপূর্ণ শহরে যান চলাচল মসৃণ রাখতে এবং পথচারীদের নিরাপত্তায় সার্বিক ভাবে ট্র্যাফিক আইন মেনে চলা এবং মেনে চলতে বাধ্য করা, উভয়ই অত্যন্ত জরুরি। যদিও বাস্তবে তা অনেকাংশেই অনুপস্থিত। বহু পুরনো কাঠামো, তাপ্পি দেওয়া টায়ার নিয়ে গণপরিবহণ অবাধে রাস্তায় নামে, সিগন্যাল ভাঙে, ফলত জরিমানার পাহাড় জমে। সম্প্রতি সেই জরিমানা না মেটালে দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হবে না— এই মর্মে নির্দেশ জারি হয়েছে। এই ঘোষণা আত্মঘাতী। ট্র্যাফিক জরিমানা এবং দূষণ— দু’টিই কলকাতার শিরঃপীড়ার কারণ, অতএব দু’টিকে পৃথক ভাবে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এমনিতেই কলকাতায় কত সংখ্যক গাড়ি যথাযথ নিয়মে দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র জোগাড় করে, তাতে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। সেইটুকুতেও শর্ত চাপানো হলে শহরের স্বাস্থ্যের প্রতি তা বিপজ্জনক। একের বিপদ কমাতে অন্য বিপদ ডেকে আনা কাণ্ডজ্ঞানের লক্ষণ নয়।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন