Digital Personal Data Protection Bill

সুরক্ষার আড়ালে

ছ’বছর আগে সংবিধানের নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার অধিকারকে একটি মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য করার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ০৪:২৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বহু টালবাহানার পরে অবশেষে ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল বা ব্যক্তিগত তথ্যসুরক্ষা বিল-কে ছাড়পত্র দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সংসদে আসন্ন বাদল অধিবেশনে বিলটি পেশ হওয়ার কথা। বিলটি আইনে পরিণত হলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির সঙ্গে, যাদের ‘জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রুলস’ বিশ্বের অন্যতম নিশ্ছিদ্র ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষাব্যবস্থা হিসাবে খ্যাত। গত বছর নভেম্বরে বিলের একটি খসড়া সংসদে পেশ করা হয়েছিল। তারই কিছু অদলবদল করে বর্তমানে সেটি সংসদে পেশ করা হচ্ছে। কিন্তু বিলের কিছু বিতর্কিত অংশ এখনও থেকে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন মহলে বাড়ছে উদ্বেগ।

Advertisement

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক রয়েছে এই বিলের কিছু ছাড় নিয়ে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকারের অধিকার রয়েছে তথ্য ফাঁসের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা, বিদেশি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কিংবা জনসাধারণের শৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থে তার কোনও সংস্থাকে এর আওতার বাইরে রাখার। কোনও আইন তখনই গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করতে পারে, যদি সে ক্ষেত্রে কোনও বৈধ উদ্দেশ্য থাকে। শুধু তা-ই নয়, সেই উদ্দেশ্যের কোনও যুক্তিসঙ্গত যোগসূত্রও থাকতে হবে। এবং এমন পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট অধিকার প্রাপককে প্রভাবিত করবে না। আশঙ্কা, নিতান্ত ঠুনকো অজুহাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন কোনও বিভাগ তথ্য নিরাপত্তা আইনের বিধিনিষেধ এড়িয়ে যেতে পারবে ‘জাতীয় স্বার্থ’ রক্ষার্থে। অন্য দিকে, প্রয়োজনীয়তা ফুরোলেও উড়িয়ে না দিয়ে ‘জাতীয় সুরক্ষা’-র স্বার্থে তথ্যের মালিকের অনুমতি ছাড়াই কোনও তথ্য সরকারের কাছে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংগৃহীত রাখার কথাও রয়েছে বিল-এ। এ ক্ষেত্রেও সরকারের হাতে সুযোগ থাকছে নিজেদের স্বার্থে এই তথ্য ব্যবহার করার। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকারের ডেটা প্রোটেকশন বোর্ডের সদস্যদের নিয়োগের বিষয়টিও নিরপেক্ষ না হওয়ারই সম্ভাবনা প্রবল। প্রসঙ্গত, একবিংশ শতকে যে পরিমাণ ‘ডেটা’ বা তথ্য ইতিমধ্যেই সংগৃহীত রয়েছে সরকারের কাছে, তা রক্ষা করার সামর্থ্য কি তাদের আছে? অভিজ্ঞতা তা বলে না। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু তথ্য ফাঁসের ঘটনা স্মরণীয়, যার সাম্প্রতিকতম কো-উইন অ্যাপে একশো কোটির বেশি টিকাগ্রহণকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ। এই ধরনের ঘটনা দেশের ডিজিটাল পরিকাঠামোর ধারাবাহিক দুর্বলতারই ইঙ্গিতবাহী।

ছ’বছর আগে সংবিধানের নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার অধিকারকে একটি মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য করার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অথচ, তা লঙ্ঘন করার প্রবণতা বারে বারেই দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। নাগরিকের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করার এত আগ্রহ কেন সরকারের? উদ্দেশ্য কি একটি নজরদারি রাষ্ট্র গড়ে তোলা, যেখানে নাগরিকের প্রতিটি মুহূর্তের খবর রাষ্ট্রের অতন্দ্র নজরদারির অধীনে থাকবে? কিন্তু এমন ব্যবস্থা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। এক দিকে শাসক দলের হাতে লাগামহীন ক্ষমতা, আর অন্য দিকে বিরোধীদের স্বর দমন, নাগরিক পরিসর খণ্ডন— গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে তা দুঃসংবাদ। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত পরিসরে নজরদারির সম্ভাব্য বিপদটি নাগরিকের মাথায় রাখা জরুরি।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন