Rama Navami

দায়িত্ব

রাজনৈতিক বা ধর্মীয়, মিছিল যে চরিত্রেরই হোক না কেন, শাসক বা বিরোধী দল যে কেউই তা করুক না কেন, পুলিশের অনুমতি বাধ্যতামূলক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:২৪
Share:

পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীর মিছিল ঘিরে অশান্তি। প্রতীকী ছবি।

যার পোশাকি নাম ‘শোভাযাত্রা’— বহু মানুষের একত্রে সমারোহের সঙ্গে পথ হাঁটা— তা কতটা অশোভন হয়ে উঠতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীর মিছিলই প্রমাণ। শিবপুর, ডালখোলা বা রিষড়ায় যা হল, তাকে স্রেফ গন্ডগোল বললে কম বলা হবে— জনজীবনের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার সমূহ বিপর্যয়ই তার প্রকৃত ব্যাখ্যা। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহও চলেছে বাঁধা গতে: শাসক দল ও বিরোধী দলের পারস্পরিক দোষারোপ, পুলিশের পরিস্থিতি সামলাতে না-পারার ব্যর্থতা, বিরোধীদের কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে তদন্তের দাবি, আদালতে মামলা ইত্যাদি। রামনবমীর পরে হনুমান জয়ন্তীতে গোলমাল এড়াতে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়েছে, আদালত রাজ্য সরকারকে নিরাপত্তা রক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপেরও নির্দেশ দিয়েছিল।

Advertisement

রাজনৈতিক বা ধর্মীয়, মিছিল যে চরিত্রেরই হোক না কেন, শাসক বা বিরোধী দল যে কেউই তা করুক না কেন, পুলিশের অনুমতি বাধ্যতামূলক। পুলিশ চাইলে মিছিলের পথ ও সর্বোচ্চ লোকসংখ্যা বেঁধে দিতে পারে, বাইক বা অস্ত্রপ্রদর্শন নিষিদ্ধ করতে পারে— হনুমান জয়ন্তীতে যেমন হল। রাজনৈতিক মিছিলের ক্ষেত্রে যোগদানকারীর সংখ্যা নিয়ে পুলিশের কাছে তথ্য থাকে, তাতে প্রস্তুতি সহজ হয়। রামনবমীর মিছিলের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে, মাঝখান থেকে অগণিত লোক মিছিলে ঢুকে গিয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে, পুলিশ সামলাতে পারেনি। এ পুলিশের ব্যর্থতা নিঃসন্দেহে— মিছিল-শোভাযাত্রা’সহ যে কোনও জমায়েতে শৃঙ্খলা তথা শান্তি রক্ষার তাৎক্ষণিক ও সার্বিক দায়িত্বটি পুলিশেরই, খোদ পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেও পুলিশের একাংশের ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। উল্টো দিকে, মিছিলে তাণ্ডব করল যারা, তাদের অনেককে ধরা হয়েছে, শাস্তির ব্যবস্থা হচ্ছে।

কিন্তু, দায়িত্ব শুধু পুলিশেরই নয়। কলকাতা হাই কোর্ট স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, শোভাযাত্রায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় আয়োজকদের উপর বর্তাবে। কথাটি এতই স্বাভাবিক যে, তা আলাদা করে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। পুলিশের কাছে যিনি শোভাযাত্রা আয়োজনের আবেদন করবেন, মিছিলের ঘটনাক্রমের দায়িত্ব তাঁর উপরে বর্তাবে তো বটেই— যে শোভাযাত্রায় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তাণ্ডব করা লোকজন দেখা যায়, সেই মিছিলের অনুমতি পুলিশের কাছে যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁদের অবশ্যই সেই দায় নিতে হবে। যে মিছিলের জেরে ভাঙচুর বোমাবাজি হল, আতঙ্ক তৈরি হল পাড়া থেকে রেলস্টেশনে, তার দায় অবশ্যই নিতে হবে মিছিলের অনুমতিপত্রে নাম থাকা ব্যক্তি বা তাঁর পিছনে থাকা সংগঠন বা দলকে। এ ক্ষেত্রে একটি ব্যবহারিক আপত্তি উঠতে পারে— অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মিছিলের আবেদন করেন কোনও মেজো-সেজো সংগঠক, যাঁর সাধ্য নেই এমন মিছিলের দায়িত্ব নেওয়ার। সে ক্ষেত্রে এমন নেতাকে মিছিলের অনুমতি আদৌ দেওয়া যায় কি না, সে বিবেচনা পুলিশের। আবেদনকারীকে যথেষ্ট সক্ষম বলে মনে না হলে তাঁকে অনুমতি না দেওয়াই বিধেয়। কিন্তু, অনুমতিদাতা হিসেবে পুলিশের যেমন দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার, অনুমতি প্রাপকেরও সেই একই দায়িত্ব। রাজনীতি ক্রমে দায়িত্বজ্ঞানবিবর্জিত হয়ে উঠছে বটে, কিন্তু সেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন