Narendra Modi's Decision To Form NRF

বহ্বারম্ভ?

ভারতে গবেষণা খাতে ব্যয় দেশের জিডিপি-র মাত্র .৭ শতাংশ, বিশ্বে যে দেশগুলি গবেষণায় সবচেয়ে কম খরচ করে তাদের অন্যতম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ০৫:৪৫
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

অজাযুদ্ধ, ঋষিশ্রাদ্ধ, প্রভাতে মেঘডম্বর বা দাম্পত্যকলহ, সংস্কৃত শ্লোকে ‘বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া’-র উদাহরণ হিসাবে এগুলি উদ্ধৃত। অর্থাৎ বিরাট ঘটাপটা করে যার শুরু, কিন্তু ফল নামমাত্র বা নগণ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতে ‘ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (এনআরএফ) তৈরির ঘোষণা সেই তালিকায় নবতম সংযোজন কি না, বলার সময় এখনও আসেনি। তবে এ যে বহ্বারম্ভ তা মানতেই হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘গবেষণায় নতুন দিশা-নির্দেশ’-এর লক্ষ্যে, দেশের ‘অর্থনীতির অগ্রগতির প্রয়োজনমতো’ গবেষণায় উৎসাহ দিতেই এই ফাউন্ডেশন গড়া, আগামী পাঁচ বছরে তার জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ— এ সব শুনে গর্বে বুক ফুলে ওঠারও কথা: জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পেতে গবেষণার, বিশেষত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে গবেষণার যে বিরাট ভূমিকা, কেন্দ্র তা শুধু স্বীকারই করছে না, সেই পথে পদক্ষেপও করছে। সংস্থার মাথায় খোদ প্রধানমন্ত্রীর থাকাও তারই পরিচায়ক!

Advertisement

তবু কিছু প্রশ্ন জাগে, সঙ্গত কারণেই। যে প্রধানমন্ত্রী গণেশের ঘাড়ে হস্তিমুণ্ডকে প্রথম প্লাস্টিক সার্জারি বলেছিলেন, যাঁর অধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং দেশের প্রধান বিজ্ঞান সংস্থার কেষ্টবিষ্টুরাও নানা সময় পৌরাণিক কালে ভারতীয় বিজ্ঞানের উৎকর্ষ নিয়ে উল্লসিত বিবৃতি দিয়েছেন, এ যুগের বিজ্ঞান-গবেষণায় সেই ‘অতীত ভারতগৌরব’কেই তুলে ধরা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, আইআইটি-র মতো দেশের প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিক জীবন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে গরুর ভূমিকা নিয়ে আলোচনাচক্র করছে— তাঁদের নেতৃত্ব ও পৃষ্ঠপোষণায় ভবিষ্যতের বিজ্ঞান-গবেষণায় কোন ‘নতুন দিশা’ আসবে, সন্দেহ। এনআরএফ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে সব গবেষণায় সমাজের তেমন ‘লাভ নেই’, সেখানে অর্থ অপচয় বন্ধ হবে। এই ‘লাভ’ ঠিক করবেন কে— এনআরএফ-এর পরিচালন বোর্ড, কার্যনির্বাহী পরিষদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা? গোমূত্র আর জিনোম বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর গবেষণার মধ্যে কোনটি ‘লাভজনক’ তা যদি আজকের ভারতের শাসক দল ও তাদের সরকারের বশংবদদের কথায় নির্ধারিত হয়, তা হলে এই বহ্বারম্ভের অমোঘ পরিণাম লঘুক্রিয়া হতে বাধ্য।

উল্টো দিকে, ভারতে ইদানীং বিজ্ঞান-গবেষণায় ব্যয়-বরাদ্দ, বৃত্তি এমনকি সম্মাননা প্রদানও কোন তলানিতে ঠেকেছে, প্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষণার পরিকাঠামো, উপকরণ, গবেষণাভাতা ইত্যাদি পেতে গবেষকদের কী দশা হচ্ছে, তার খতিয়ান পেলে এনআরএফ-এর এই হাঁকডাক হাস্যকর ঠেকবে। ভারতে গবেষণা খাতে ব্যয় দেশের জিডিপি-র মাত্র .৭ শতাংশ, বিশ্বে যে দেশগুলি গবেষণায় সবচেয়ে কম খরচ করে তাদের অন্যতম। যে দেশে গবেষকদের ইউজিসি বা সিএসআইআর-এর বরাদ্দ ভাতা নিয়মিত পেতেই কালঘাম ছোটে; সর্বাধুনিক পরিকাঠামো দূরস্থান, গবেষণার কাজে দূরভ্রমণের অর্থ পর্যন্ত অমিল, সেখানে দেশকে প্রগতিপথে এগিয়ে দেওয়ার মতো গবেষণার স্বপ্ন আকাশকুসুম। সবার আগে দরকার পদে পদে দেরি আর লাল ফিতের ফাঁস থেকে গবেষণাকাজকে মুক্তি দেওয়া, এই খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ, সার্বিক সহযোগিতার আবহ নিশ্চিত করা। অন্যথায় এই সবই অসার।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন