Cholera Epidemic

আগাম সতর্কতা

নিঃসন্দেহে এক সময় কলেরা প্রাণঘাতী রূপ নিলেও বর্তমানে গোটা দেশেই তার প্রকোপ অনেক কম। তবে একেবারে নির্মূল যে তাকে করা যায়নি, এটাই চিন্তার।

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:৪৯
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বঙ্গজীবনে অতিমারির তালিকায় কোভিড-১৯ নাম তোলার ঢের আগেই অন্য যে রোগটি ছিল, তার নাম কলেরা। উনিশ শতক থেকে একাধিক বার বঙ্গবাসী কলেরা সংক্রমণের এক নতুন ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে। ঘন ঘন ভেদবমির পরই দ্রুত মৃত্যুমুখে ঢলে পড়া— কলেরার এই রূপটি বার বার উঠে এসেছে বাংলার ইতিহাসে, এবং তার থেকে বাংলা সাহিত্যের পাতাতে। যশোর জেলা থেকে শুরু হয়ে এই ‘এশিয়াটিক কলেরা’ বিশ্বায়নের হাত ধরে এশিয়া মহাদেশে, এবং পরবর্তী কালে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে সেই সময়। সুতরাং এত পথ পেরিয়ে এসে, এই একুশ শতকের তৃতীয় দশকেও যখন খাস কলকাতার পিকনিক গার্ডেনের যুবক কলেরা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, উদ্বেগের কারণ থেকে যায়। আপাতত তিনি স্থিতিশীল। এখনও পর্যন্ত এলাকার অন্য বাসিন্দাদের মধ্যে রোগ ছড়ানোর খবর মেলেনি।

নিঃসন্দেহে এক সময় কলেরা প্রাণঘাতী রূপ নিলেও বর্তমানে গোটা দেশেই তার প্রকোপ অনেক কম। তবে একেবারে নির্মূল যে তাকে করা যায়নি, এটাই চিন্তার। মূলত জলবাহিত রোগ হওয়ায় বর্ষাকালে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, দূষিত খাবার-জলের সান্নিধ্যে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে স্থানীয় ভাবে। এই বছর যেমন ওড়িশার জাজপুরে কলেরায় ১১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে রাজ্য সরকার বাড়ির বাইরে একত্র খাওয়াদাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, বাসিন্দাদের কঠোর ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও পরামর্শ দিয়েছে। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাতেও প্রায় প্রতি বছর কলেরা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই থাকে, তবু উদ্বেগ কাটে না। কারণ, এই রোগ সংক্রমণের তীব্রতা এবং এর মারণক্ষমতা বিরাট। তাই, আক্রান্ত কম সংখ্যক হলেও সর্ব রকমে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমে পড়া জরুরি।

উল্লেখ্য, কলেরার সাম্প্রতিক ঘটনাটিতে আক্রান্ত যুবক শহরের বাইরে যাননি বলে জানা গিয়েছে। খাদ্য এবং পানীয় বিষয়েও যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। তা সত্ত্বেও রোগাক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, কলেরার প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন জোরদার নজরদারি, পানীয় জল, নিকাশির মানোন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সারা বছর এই কর্মসূচি মেনে চললে শুধুমাত্র কলেরা নয়, যে কোনও জলবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ। অথচ, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় শুধু কলেরা নয়, হামেশাই ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধিরও খবর মেলে। একটি জায়গায় অনেক আক্রান্তের খবর পাওয়ার পর পুরসভার দল গিয়ে পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করে, পরীক্ষায় কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া বা কলেরার জীবাণুর সন্ধান পাওয়া যায়। অতঃপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়। অথচ, কোভিড অতিমারি শিখিয়েছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা। সেই পথে পুরসভা যে এখনও হাঁটেনি, প্রতি বর্ষায় জলবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত তার প্রমাণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই রোগ স্থানীয় ভাবে যেমন ছড়াতে পারে, তেমনই মহামারিও ডেকে আনতে পারে। সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে অক্ষমতা কী বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে করোনার ডেল্টা রূপটি তার প্রমাণ। বার বার সেই ভুল না করাই বাঞ্ছনীয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন