Sister Practitioner

নূতন ভূমিকা

‘সিস্টার প্র্যাকটিশনার’ কী কী দায়িত্ব পাইবেন, তাঁহার ভূমিকা ঠিক কী হইবে, কী তাঁহাদের সীমাবদ্ধতা, এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনামা এখনও প্রকাশ পায় নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:১৫
Share:

প্রতীকী চিত্র।

নূতন পদ ঘোষণা করিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— ‘প্র্যাকটিশনার সিস্টার’। অভিজ্ঞ, দক্ষ নার্সদের উপর বাড়তি দায়িত্ব ন্যস্ত হইবে, যাহাতে চিকিৎসকের অভাবে রোগীর দুর্ভোগ কিঞ্চিৎ লাঘব হয়। নীতির দৃষ্টিতে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাইতে হয়। প্রায় সত্তরটি দেশে ‘নার্স প্র্যাকটিশনার’ পদটি স্বীকৃত হইলেও ভারতে নহে। অথচ, চিকিৎসকের অভাব ভারতকে, বিশেষত গ্রামগুলিকে কতখানি বিপন্ন করিয়াছে, তাহা অজানা নহে। যে সকল দেশে চিকিৎসক-নাগরিক অনুপাতের নিরিখে ভারতের চাইতে উন্নত, তাহারাও স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ক্রমশ বিকেন্দ্রিত করিয়াছে। চিকিৎসক-নির্ভরতা কমিয়াছে, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা অধিক দায়িত্ব লাভ করিয়াছেন। ইহাতে রোগীর প্রয়োজনে আরও দ্রুত সাড়া মিলিয়াছে, দীর্ঘ সময় অচিকিৎসিত থাকিবার ঝুঁকি কমিয়াছে, হাসপাতাল-সর্বস্ব চিকিৎসা জনমুখী হইয়াছে। মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের এই পথটি গ্রহণ করিতে ভারত কেন এত বিলম্ব করিল, সেই প্রশ্নটি বরং উঠিতে পারে। তাহার অন্যতম কারণ চিকিৎসক সংগঠনগুলির বাধা। নার্স প্রভৃতি স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা এবং দায়িত্ব বৃদ্ধির প্রস্তাব যখনই উঠিয়াছে, তখনই বিতর্ক-ধূমে দেশবাসীর দৃষ্টি ঘুলাইয়া গিয়াছে, বিবেচনার আলো চাপা পড়িয়াছে। অথচ, ‘দুর্বল পরিকাঠামো’ দর্শাইয়া চিকিৎসকদের কয়েক প্রজন্ম শহরবাসী হইয়াছেন, অগত্যা গ্রামবাসী ডিগ্রিহীন গ্রামীণ চিকিৎসকের দুয়ারে দাঁড়াইয়াছেন। এমন পরিস্থিতি চলিতে পারে না। প্র্যাকটিশনার সিস্টার-এর ব্যবস্থাটি সমাধানের একটি পথ হইতে পারে।

Advertisement

তবু প্রশ্ন থাকে। প্রথমটি মুখ্যমন্ত্রীর কথা হইতেই উঠিয়াছে। তিনি বলিয়াছেন, অনেক নার্স ‘চিকিৎসকদের মতোই’ কাজ করিয়া থাকেন। ‘চিকিৎসকদের মতো’ আর ‘চিকিৎসক’— এই দুইটির পার্থক্য প্রশাসনের বুঝিবার কথা। ‘সিস্টার প্র্যাকটিশনার’ কী কী দায়িত্ব পাইবেন, তাঁহার ভূমিকা ঠিক কী হইবে, কী তাঁহাদের সীমাবদ্ধতা, এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনামা এখনও প্রকাশ পায় নাই। অথচ, কাজের শর্তগুলি প্রকাশ না পাইলে বস্তুত এই উদ্যোগের ভাল-মন্দ বিচার সম্ভব নহে। প্রশ্ন কেবল রোগীর ঝুঁকির নহে, নার্সদেরও ঝুঁকি থাকিতে পারে। ভারতের বর্তমান আইনে ‘নার্স প্র্যাকটিশনার’ পদটি বৈধ নহে। তাহাকে বৈধতা দান করিয়া একটি প্রস্তাবিত আইন (জাতীয় নার্সিং ও ধাত্রীবিদ্যা কমিশন বিল) সংসদে এখনও বিবেচনাধীন। ফলে, ঔষধ লিখিয়া নার্সরা আইনি ফাঁদে পড়িবেন, সে আশঙ্কা থাকিয়া যায়।

ভারতে নার্সদের ঘাটতিও প্রবল— প্রয়োজনের তুলনায় অন্তত ২০ লক্ষ কম। অতএব যে পরিষেবা এখনই ভারাক্রান্ত, তাহার সদস্যদের ‘প্র্যাকটিশনার নার্স’ করিলে দৈনন্দিন নার্সিং পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হইবে না কি? নার্সকে রোগীর প্রতি মুহূর্তে প্রয়োজন। নিয়মিত পরিষেবা দুর্বল হইলে হাসপাতালগুলি বিপন্ন হইবে। সকল বিতর্কের শেষে যে শঙ্কিত প্রশ্নটি নাগরিকের মনে ঘা দিয়া যায়, তাহা বড়ই করুণ— গ্রামে থাকিতে ডাক্তারবাবু রাজি হন নাই, নার্সদিদি হইবেন কি? অভিজ্ঞ, দক্ষ নার্সদের নিকট গ্রামের হাসপাতালের অধিক দায়িত্ব কি বাস্তবিকই ‘পুরস্কার’ বলিয়া বোধ হইবে? না কি তাঁহাদেরও দিন কাটিবে বদলির তদ্বির করিয়া? রাজ্যের স্বাস্থ্যদিগন্তে আজ সূর্যোদয়, না কি সিঁদুরে মেঘ, এখনও স্পষ্ট হয় নাই।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন