5G

সম্ভাবনা

কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকেই ‘ডিজিটাল ভারত’ গড়ার উপরে জোর দিয়ে এসেছে। এখন অধিকাংশ সরকারি পরিষেবাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২২ ০৫:৩৬
Share:

সম্প্রতি ফাইভ-জি প্রযুক্তির টেলিকম পরিষেবা চালুর জন্য স্পেকট্রাম নিলামের প্রস্তাবে সায় দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এর ফলে দেশের টেলিকম পরিষেবায় বিপুল পরিবর্তন ঘটবে বলেই প্রত্যাশা। বর্তমান ফোর-জি নেটওয়ার্কের তুলনায় নতুন প্রযুক্তি প্রায় দশ গুণ গতিসম্পন্ন। ফলে যে সমস্ত পরিষেবার ক্ষেত্রে দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন, ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের সাহায্যে তা দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতেও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ বছরের শেষে দেশের কুড়ি থেকে পঁচিশটি বড় ও ছোট শহরে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

যদিও এই পরিষেবা ও নিলাম নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কও। ন্যূনতম দরে এই নিলাম থেকে সরকারের ঘরে ৪.৩ লক্ষ কোটি টাকা আসতে পারে। তবে এই দর নিয়ে খুশি নয় টেলিকম সংস্থাগুলি। তারা দর যতখানি কমাতে চায়, ট্রাই তাতে সম্মত নয়। এমনিতেই টেলিকম সংস্থাগুলির বিপুল টাকা ঋণ রয়েছে। ফোর-জি পরিষেবায় লগ্নি করা টাকা তুলতে টেলিকম সংস্থাগুলিকে গত ছ’মাসে পরিষেবা শুল্ক বাড়াতে হয়, যার ফলে বহু গ্রাহকই সমস্যায় পড়েছেন। আপত্তি উঠেছে যে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ফাইভ-জি স্পেকট্রাম কিনতে হলে সংস্থাগুলির ঋণের বোঝা বাড়বে। তার ফলে বিঘ্নিত হবে পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগ। ফাইভ-জি পরিষেবার মাসুল বহু গ্রাহকের সাধ্যাতীত হবে, এমন আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। অন্য দিকে, সরকার প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য ফাইভ-জি পরিষেবা চালুর নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারেও প্রবল আপত্তি তুলেছে টেলিকম সংস্থাগুলি। তাদের দাবি, এতে প্রতিযোগিতার বাজারে সবাইকে সমান সুবিধা দেওয়ার নীতি লঙ্ঘিত হবে। তবে, এই ক্ষেত্রে বৈশ্বিক উদাহরণ মাথায় রাখা ভাল। বহু দেশেই এই পরিষেবা সরাসরি প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে বরাদ্দ করা হয়েছে। এবং, সেই পথে রাজকোষে বিপুল অঙ্ক জমা পড়ে।

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকেই ‘ডিজিটাল ভারত’ গড়ার উপরে জোর দিয়ে এসেছে। এখন অধিকাংশ সরকারি পরিষেবাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। তা ছাড়া কোভিড কালে ডিজিটাল পরিষেবার গুরুত্ব বহুলাংশেই অনুভূত হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ফাইভ-জি পরিষেবা চালুর উদ্যোগ ইতিবাচক, সন্দেহ নেই। কিন্তু, এই পরিষেবার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হলে সরকারকে এই পরিষেবার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপরে জোর দিতে হবে, যাতে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলির মানুষও এই নতুন নেটওয়ার্কের সুবিধা পেতে পারেন। একই সঙ্গে সরকারকে নজর রাখতে হবে, যাতে অন্যায্য মুনাফা লাভ করতে অযথা পরিষেবার দাম বাড়িয়ে না রাখে টেলিকম সংস্থাগুলি। স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে কৃষি, শক্তি, গাড়ি ইত্যাদি শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ইন্টারনেট অব থিংস-এর প্রয়োগের পাশাপাশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করবে এই পরিষেবা। দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যতের স্বার্থে এই সুযোগ কোনও মতেই হাতছাড়া করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে আরও একটি আশঙ্কার কথা অনিবার্য— ফাইভ-জি পরিষেবার বণ্টনের অধিকার যদি কার্যত সাঙাততন্ত্রের কুক্ষিগত হয়ে থাকে, তবে এই প্রযুক্তি-বিপ্লবের সুফল দেশবাসীর কাছে পৌঁছবে না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন