NIRF

উদ্বেগ ও হতাশা

বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি গোটা রাজ্যের কাছে বেদনাদায়ক। শাসন করা প্রশাসকেরই কাজ, কিন্তু অপরকে দমনের উদ্দেশ্যে যে শাসন, তা করেন অপশাসকরা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২২ ০৫:২১
Share:

এক বছরে চৌত্রিশটি ঘর অতিক্রম করেছে বিশ্বভারতী, তবে সেটার অভিমুখ পিছন দিকে— ২০২১ সালে সারা ভারতে তার স্থান ছিল চৌষট্টি, এ বছর আটানব্বই। ২০১৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানই ছিল একাদশতম স্থানে। কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষাতেই কেবল নয়, ২০১৫ সালের তুলনায় জাতীয় মূল্যায়ন সংস্থা ‘নাক’-এর পরিদর্শনেও গত বছর বিশ্বভারতীর ‘গ্রেড’ কমেছে। প্রতিষ্ঠানের এ-হেন অবনতি দুশ্চিন্তার কারণ, কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভাবিয়ে তোলে কর্তৃপক্ষের অবস্থান। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এই অবস্থায় আত্মসমীক্ষা করছেন, তার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। বরং তিনি বলেছেন, বিশ্বভারতী কিছু খারাপ করেনি, অন্যরা এগিয়ে গিয়েছে, এই যা। তিনি অবশ্যই বলেননি যে, বিশ্বভারতীকে এগিয়ে যেতে বারণ কে করেছিল, বাধা কে দিয়েছিল! এই চমৎকারা তুলনার পাশাপাশি চলছে সেই অভ্যাস— যে কোনও ব্যর্থতার অভিযোগে বার বার দোষ চাপানো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের উপর। ইতিপূর্বে নানা সময়ে শিক্ষকদের বিভিন্ন ‘বিচ্যুতি’ উল্লেখ করে উপাচার্য প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছেন, খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি কালেও অনবরত শিক্ষক ও আধিকারিকদের শো-কজ়, সাসপেনশন, পদচ্যুতি ও বরখাস্ত করে চলেছেন। হয়তো তাঁর ও তাঁদের আশা, এই ভােবই প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনা যায়। স্পষ্টতই এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে, একের পর এক মামলায় শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাস্তবিক, বিশ্বভারতী এখন এক উদ্বেগের নাম। যে প্রতিষ্ঠান অতীতে আপন স্বাক্ষর রাখত সঙ্গীত ও শিল্পের মঞ্চে, প্রদর্শশালায়, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের সম্মেলনে, এখন তার সংবাদ মেলে আদালতের প্রতিবেদনে, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সংঘাতের চিত্রে, রাজনৈতিক অস্থিরতায়।

Advertisement

বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি গোটা রাজ্যের কাছে বেদনাদায়ক। শাসন করা প্রশাসকেরই কাজ, কিন্তু অপরকে দমনের উদ্দেশ্যে যে শাসন, তা করেন অপশাসকরা। নিরন্তর ক্ষমতার প্রয়োগ যে জ্ঞানচর্চার বাধা হয়ে দাঁড়ায়— গবেষক-শিক্ষক উপাচার্য তা জানেন নিশ্চয়। এ দিকে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্প থেকে বিশ্বভারতীকে বিযুক্ত করতে সচেষ্ট হয়েছেন তিনিই: গত মে মাসে উপাচার্যকে ‘অসম্মান’ করার অভিযোগে পদার্থবিদ্যার এক শিক্ষককে সাসপেন্ড করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অতঃপর তিনিই কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকে চিঠি দিয়ে বিবেচনা করতে বলেন, ওই শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষককে ‘সার্ন’-এর অধীনে বিশ্বসৃষ্টির রহস্য-সম্পর্কিত গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত রাখা চলে কি না। বিজ্ঞান মন্ত্রকে ওই প্রকল্পের অনুদান আটকে যায়।

কলকাতা হাই কোর্ট অবশ্য মন্ত্রককে পাঠানো উপাচার্যের চিঠিতে ‘পক্ষপাতদুষ্ট মানসিকতা’ দেখেছে, এবং সেটি খারিজ করেছে। কিন্তু এই ধরনের সংবাদ যেন শিক্ষকের উপর প্রতিষ্ঠানের আস্থাকেই খারিজ করে। শিক্ষকদের দায়িত্ব নিশ্চিত করা জরুরি কাজ, কিন্তু কোন পথে তা করা সম্ভব ও বিধেয়, সেটা ভাবা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। মামলা-মকদ্দমা করে শিক্ষকদের শাসন করার পদ্ধতিটি দুর্ভাগ্যজনক। ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের নিরন্তর সংঘাত এবং পঠন-পাঠনের মানে দ্রুত অবনতি— এই দু’টি ঘটনা সম্পর্কহীন হতে পারে না। বিশ্বভারতীকে মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি: মা কী ছিলেন, আর কী হয়েছেন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন