Kamala Harris

বহুত্ববাদী

এই দুই কাহিনিই আসলে বাইডেনের ভাষায় ‘আমেরিকার গল্প’— বিচিত্র অভিবাসনের সঙ্গমস্থল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০৩:১২
Share:

কমলা হ্যারিস।

উৎসবে মাতিয়াছে তুলাসেন্দ্রাপুরম। তামিলনাড়ুর এই ক্ষুদ্র জনপদটি কমলা হ্যারিসের মায়ের আদি নিবাস— ভারতের সহিত কমলার যোগসূত্র। ভূমিকন্যা আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হইবার পর বাজি, সঙ্গীত, দেওয়াললিখনে সম্মান জানাইতেছেন বাসিন্দারা। স্থানীয় মন্দিরে পূজাও অর্পিত হইয়াছে। কমলার জন্য গ্রামবাসী গর্বিত, তাঁহার কৃতিত্বকে আপনার করিয়া লইতেই এই উৎসব। ভৌগোলিক দূরত্ব অগাধ হইলেও সমরূপ উৎসাহের ছবি ধরা পড়িয়াছে আয়ারল্যান্ডের ছোট শহর ব্যালিনাতেও। আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পূর্বপুরুষেরা এই শহরেই বাস করিতেন। গাড়িতে বেলুন বাঁধিয়া, রাস্তায় ভিড় জমাইয়া লোকসুরের ঝর্নাধারায় মাতিয়াছে ব্যালিনা।

Advertisement

এই দুই কাহিনিই আসলে বাইডেনের ভাষায় ‘আমেরিকার গল্প’— বিচিত্র অভিবাসনের সঙ্গমস্থল। বহু ও বিচিত্র সম্ভাবনাকে লালন করিতে পারিবার ক্ষমতা। যে কোনও সমাজের শক্তিই তাহার গঠনের উপর নির্ভরশীল। বিবিধ বৈচিত্রের মিলনে আমেরিকার সমাজ নির্মিত। উহাই তাহার সম্পদ, মূল শক্তি। সেই কারণেই আমেরিকায় দুই রাজনীতিবিদ ভোটে জিতিবার পরে বিশ্বের অপর দুই সুদূর প্রান্তে তাহা উদ্‌যাপিত হয়। এযাবৎ কাল ইহা বাস্তব হইলেও, এবং তৎসূত্রে বহু-সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস অটুট থাকিলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে আমেরিকার সমাজের অভ্যন্তর হইতেই বহুত্ববাদী ধারণার পাল্টা বক্তব্য জোরদার হইয়াছে। বস্তুত, সেই দেশের সমগ্র সমাজটি দ্বিধাবিভক্ত হইয়া যাওয়াই ট্রাম্পের সমর্থনের ভিত্তি। এবং, রাষ্ট্রীয় সহানুভূতির সুযোগে বিভেদকামী শক্তিও মাথাচাড়া দিয়াছে। অপর কোনও প্রেসিডেন্টকে তাঁহার ন্যায় লাগাতার বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করিতে দেখে নাই আধুনিক আমেরিকার ইতিহাস। প্রায় প্রতিটি অবকাশেই তিনি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদকে ইন্ধন দিয়াছেন, প্রতিবেশী মেক্সিকানদের বিরুদ্ধে কুমন্তব্য করিয়াছেন, আপন দেশে মুসলমানদের স্বাধীন চলাফেরার গতি রুদ্ধ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। তাঁহার সমর্থকেরাও বৈচিত্রমূলক গঠনকে প্রশ্ন করিবার মতো একটি মঞ্চ পাইয়াছেন। এমত পরিস্থিতিতে আমেরিকার সরকারের দুই শীর্ষ স্থানাধিকারীর জয়ের বিশ্বজনীন উদ্‌যাপন বহু সংস্কৃতির শিকড়টিকে পুনরায় স্মরণ করাইয়া দেয়।

২০০৮ সালের বিজয় বক্তৃতায় বারাক ওবামার বার্তা ছিল, আমেরিকার বহুবিধ মানুষ কেবলমাত্র ব্যক্তির সমষ্টি নহেন, বিবিধ বয়স-বিত্ত-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গ-চরিত্রের সংগ্রহও নহেন, তাঁহারা সকলে মিলিয়া একটি যুক্তরাষ্ট্রের বুনন করিয়াছেন। বার্তাটি নূতন কিছু নহে, বহু দিনের বহু-উচ্চারিত কথা। তবু যেন তাহা বিস্মৃত ও অপসারিত হইতেছে আজিকার আমেরিকায়। বাইডেন-হ্যারিসের জয়ের ফলে কথাগুলি যেন ফের মূর্ত হইয়া উঠিল। ইহাও সত্য যে, আমেরিকা ব্যতীত অন্য কোনও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ভোটপ্রার্থীর জয়ে এমন কাণ্ড সহসা ভাবা কঠিন। আমেরিকার শত দুর্বলতা ও অন্তর্বিরোধকে গণ্য করিয়াও ইহা অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং, শেষাবধি, আমেরিকার প্রধানতম সম্পদ বহু-সংস্কৃতিকে রক্ষা করিতে না পারিলে তাহার অর্ধেক গুরুত্বই খর্ব হইয়া যায়। তাহাকে যে কোনও মূল্যে বাঁচানো যে হেতু সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ, এই বারের জয় সুসংবাদ।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন