—প্রতীকী চিত্র।
যতখানি ভাল ভাবা যেতে পারে, ততখানি ভাল যে এই গোটা ব্যবস্থাটা নয়, সে আমাদের অনেকেরই কম-বেশি জানা। কিন্তু যতখানি খারাপ ভাবা যেতে পারে, ব্যবস্থাটা যে তার চেয়েও খারাপ হতে পারে, তা সব সময়ে বোঝা যায় না। পুলিশ-প্রশাসনে অসাধুতার যে অভিনব আখ্যান সামনে এল এ বার অভিযোগের আকারে, সে আখ্যান স্তম্ভিত করে। প্রশ্ন জাগে— কর্তব্যের বদলে অসাধুতার সাধনাই কি চরম ও পরম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে একাংশের কাছে?
অভিযোগ হল, বেআইনি খাদান থেকে ট্রাক ভরে ভরে নিরন্তর পাচার হয়ে যাচ্ছে বালি, পাথর। অভিযোগ হল, বহনক্ষমতার চেয়ে অনেক অনেক বেশি পরিমাণ বালি বা পাথর নিয়ে সড়ক বেয়ে ছুটছে ট্রাকগুলো। অভিযোগ হল, পুলিশের সঙ্গে পাকাপোক্ত চুক্তির সুবাদে আইনের ফাঁস নিশ্চিন্তে এড়িয়ে যাচ্ছেন বেআইনি কারবারিরা।
পুলিশের সঙ্গে এই বেআইনি কারবারিদের পাকাপোক্ত বন্দোবস্তটা কী রকম? রাস্তায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে ঘুষের লেনদেন আর নয়। চারিদিকে সিসিটিভি রয়েছে, নজরদারির নানা ব্যবস্থা হয়েছে— অতএব রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাকা নেওয়ার খুব ঝুঁকির কাজ। তাই থানায় গিয়ে মোটা মাসোহারা জমা দিলেই মিলছে সাঙ্কেতিক কার্ড। বহনক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য এবং বেআইনি পণ্য নিয়ে রাস্তায় উঠে পড়তে আর কোনও সমস্যাই নেই। চেকপোস্টে সাঙ্কেতিক কার্ড দেখালেই সামনের রাস্তা মসৃণ। অভিযোগ অন্তত এ রকমই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
বেআইনি খাদানের বাড়বাড়ন্ত ধ্বংস করে দিচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, শেষ করে দিচ্ছে একের পর এক নদ-নদীকে। অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যাতায়াত নষ্ট করছে রাস্তা, বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনা। বেআইনি খাদান এবং বহনক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যাতায়াতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগসূত্র না থাকলে কী ভাবে দিনের পর দিন অবাধে চলতে পারে এই সব অসাধু কারবার? প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতেও অসাধু কারবারে লাগাম কষা গেল না,বরং আরও চতুর বন্দোবস্ত তৈরি হয়ে গেল! বিস্ময়ের আর অবধি থাকে না!
আরও পড়ুন: মাফিয়া-পুলিশের ‘আঁতাঁত’! থানা থেকে সাঙ্কেতিক কার্ড কিনলেই ছাড় পাচ্ছে লরি
মহাসড়কগুলোয় নিয়মিত চলাচল করেন যাঁরা, পুলিশি হাঁকডাকের আঁচ পেতে তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই অভ্যস্ত। ট্রাকের সারি দাঁড় করিয়ে পুলিশি উঁকিঝুঁকির দৃশ্য বেশ সহজলভ্য ওই সব সড়কে। পুলিশের সেই ‘কর্তব্যনিষ্ঠা’ অনেক সময় লম্বা জ্যাম লাগিয়ে দেয় রাস্তায়। কিন্তু অসাধু কারবার রোখার জন্য পুলিশের ওই তৎপরতাকে অত্যন্ত জরুরি ধরে নিয়ে আমরা জ্যামের পীড়ন সয়ে নিই। আসলে ওই উঁকিঝুঁকি বা ওই জ্যামের পীড়ন যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্দোবস্তের বাইরে থাকা ব্যবসায়ীদের চাপে ফেলার স্বার্থে, সে উপলব্ধি আমাদের ক’জনেরই বা হয়?
বিশ্বাসভঙ্গের এই বেশরম আখ্যানে যদি পূর্ণচ্ছেদ না টানা যায়, ভবিষ্যতে আরও নানা রূপে অবতার নেবে প্রশাসনিক অসাধুতা। পুলিশ-প্রশাসনে সবাই অসাধু, এমন কথা বলা বাতুলতা মাত্র। কিন্তু অসাধুদের বাড়বাড়ন্ত যে সাধুতাকে ম্লান করছে, তা অনস্বীকার্য। এই বাড়বাড়ন্তে রাশ টানার দায় কিন্তু রাজনৈতিক প্রশাসনের। শুধু হুঁশিয়ারি বা ধমকে যদি কাজ না হয়, তা হলে অন্য দাওয়াই খুঁজতে হবে। কিন্তু উপযুক্তটা দাওয়াইটা যে রাজনৈতিক প্রশাসনকেই খুঁজে বার করতে হবে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না।