State news

অর্গলহীন এই নৈরাজ্যে সর্বনাশ কিন্তু রাজনীতিরই

রাজনীতির ময়দানে সংগ্রামের উপস্থিতি চিরন্তন। সঙ্ঘাত তীব্রতর হয়ে ওঠাও অস্বাভাবিক ঘটনা নয় মোটেই। কিন্তু সঙ্ঘাতের পথ বেছে নেওয়ার নামে নৈরাজ্যকে ছাড়পত্র দেওয়ার অধিকার কারও নেই। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে সেই নৈরাজ্যেরই রমরমা এখন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৮
Share:

মধ্য কলকাতার মহাত্মা গাঁধী রোডে তৃণমূলের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

রাজনীতির ময়দানে সংগ্রামের উপস্থিতি চিরন্তন। সঙ্ঘাত তীব্রতর হয়ে ওঠাও অস্বাভাবিক ঘটনা নয় মোটেই। কিন্তু সঙ্ঘাতের পথ বেছে নেওয়ার নামে নৈরাজ্যকে ছাড়পত্র দেওয়ার অধিকার কারও নেই। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে সেই নৈরাজ্যেরই রমরমা এখন। গ্রেফতারির জেরে উত্তেজনার যে স্ফূরণ, তাকে রাজনৈতিক লড়াইয়ের বৈধ সড়কে চালিত করার ইচ্ছা কোনও পক্ষেই দৃশ্যমান নয়। প্ররোচনা এবং পাল্টা প্ররোচনায় মত্ত দুই শিবিরই।

Advertisement

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাজনিত কি না, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আবার বলছি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতার বন্দি হওয়ার ঘটনা নিয়ে বিতর্ক বা সংশয়ের অবকাশ যথেষ্টই রয়েছে। সে বিতর্কের মীমাংসা দু’টি পথ ধরে হতে পারে— আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এবং রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর আইনি লড়াইটা তো স্বাভাবিক নিয়মেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিসরে যে লড়াইটা মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে এবং এখনও চলছে, তা আসলে কোনও রাজনৈতিক লড়াই নয়, তা হল নৈরাজ্যকে ছাড়পত্র দেওয়ার নামান্তর।

তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা বিজেপির সদর কার্যালয় ঘেরাও করতে যাচ্ছেন, বিজেপি কর্মীরা প্রতিস্পর্ধায় লাঠি-সোটা বার করছেন, কলকাতার রাজপথ রণক্ষেত্র হয়ে উঠছে, অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে, জেলায় জেলায় অশান্তি ছড়াচ্ছে— এ দৃশ্য তো ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হল শীর্ষ নেতৃত্বের হুমকি, পাল্টা হুমকি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, পাল্টা গ্রেফতার তিনিও করতে পারেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের শাসানি, বিজেপি চাইলে দিল্লিতে ঢুকতে পারবেন না তৃণমূল সাংসদরা, বাংলার বাইরে পদার্পণ করতে পারবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

এ কি সত্যিই কোনও রাজনৈতিক লড়াইয়ের নমুনা? সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির প্রতিবাদে ক্ষোভ ব্যক্ত করার, আন্দোলন গড়ে তোলার বা ধিক্কার জানানোর সব অধিকার তৃণমূলের রয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদের নামে বেলাগাম আক্রোশ চরিতার্থ করা কোনও রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে পড়ে না। আবার বাংলার বাইরে গেলেই তৃণমূলনেত্রীকে বা তৃণমূল সাংসদদের কতটা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ফেলার সক্ষমতা বিজেপির রয়েছে, সে নিয়ে শাসানি দেওয়াও রাজনৈতিক রুচিবোধের পরিচায়ক নয়।

দুই রাজনৈতিক দলের বেলাগাম সঙ্ঘাতে শুধু রাজনৈতিক রুচিবোধের ক্ষতি হচ্ছে বা নৈতিকতার বিসর্জন ঘটছে, এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয় বিষয়টি। এই হিংসার মাঝে আটকে পড়া সাধারণ নাগরিকের সন্ত্রস্ত মুখটাও ভেসে উঠছে দৃশ্যপটে।

তৃণমূল এবং বিজেপি— দুই দলই এই মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দল। দু’দলের কাছ থেকেই অনেক বেশি দায়িত্বশীলতা কাঙ্খিত। কিন্তু সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি উত্তর পরিস্থিতিতে ঠিক বিপরীত চিত্রটাই ফুটে উঠছে।

রাজধর্মে ফিরুন। নৈরাজ্যের দরজাটা খুলে যাচ্ছে দেখেও অর্গলটা বন্ধ করার কোনও প্রচেষ্টা আজ কোনও তরফে নেই। যদি হাট হয়ে খুলে যায় দরজাটা, তা হলে রাজনীতির ময়দানটা ভবিষ্যতে কতখানি বিপদসঙ্কুল হয়ে উঠবে, সেটা অনুভব করার চেষ্টা করুন। নচেৎ, বিপদটা কিন্তু সর্বাগ্রে হানা দেবে রাজনীতিকদের ঘরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন