Local News

সমাজের স্বাভাবিক মুখটা এই রকমই

নতুন প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধ কমে গিয়েছে, এ যুগের সমাজ থেকে সামাজিকতার বোধ অন্তর্হিত হয়েছে, আজকালকার মানুষের মধ্যে স্বার্থপরায়ণতা বেড়ে গিয়েছে— এই রকম চর্চা বেশ বাজার চলতি আমাদের চারপাশে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৭
Share:

প্রসেনজিৎ দে ও আদর্শ তিওয়ারি। ফাইল চিত্র।

জীবন যদি এক ঠাসবুনট হয়, তা হলে সে বুনটে ইতি-নেতির সহাবস্থান রয়েছে। সবটাই ইতিবাচক নয়। গোটাটা নেতিবাচকও নয়। এ সত্য সকলেরই জানা। কিন্তু জীবনের পথে চলতে চলতে ধুলোর আস্তরণ জমে অনেক সময় সত্যের উপরে, মলিন হয় আশাবাদের ঔজ্জ্বল্য, নৈরাশ্যের ছায়াপাত প্রশস্ত হতে থাকে। সেখানেই মোড় ঘোরে আখ্যানের, আচমকা একরাশ খোলা হাওয়া ওঠে, উড়িয়ে নেয় নেতির মেঘ, আড়াল সরে হাসিমুখে ধরা দেয় ইতির ঝলমলে আকাশটা।

Advertisement

বার বার ঘটে এই ঘটনা। সামাজিক প্রবাহে, পারিপার্শ্বিকতায় বা ঘটনা পরম্পরায় যে সামগ্রিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, সে প্রবণতা যে কখনওই আদ্যন্ত নেতিবাচক হতে পারে না, সে কথা বার বার প্রমাণ হয়ে যায়। দীর্ঘ কাল মনে রাখার মতো এক একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হয়। সে দৃষ্টান্ত অনুপ্রেরণা দেয়, সাহস বাড়ায়, ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনার রসদ জোগায়।

নতুন প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধ কমে গিয়েছে, এ যুগের সমাজ থেকে সামাজিকতার বোধ অন্তর্হিত হয়েছে, আজকালকার মানুষের মধ্যে স্বার্থপরায়ণতা বেড়ে গিয়েছে— এই রকম চর্চা বেশ বাজার চলতি আমাদের চারপাশে। পথে-ঘাটে, ট্রেনে-বাসে, হাটে-বাজারে একটু কান পাতলেই ছিটকে আসে এই সব টুকরো টুকরো নেতি। আমরাও একাত্ম হই সে সবের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। প্রসেনজিৎ দে আর আদর্শ তিওয়ারি— দুই কিশোর এক রাতে ছিঁড়ে দিল নেতির সেই সুবিস্তৃত জাল। কিছুই শেষ হয়ে যায়নি, কোনও মূল্যবোধই ফুরিয়ে যায়নি, আসলে অনাকাঙ্খিত কোনও আস্তরণ মলিন করে তুলেছিল সদর্থক ভাবনাকে— প্রমাণ করে দিল দুই কিশোর।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, নারী নির্যাতনের খবর প্রায়ই লজ্জায় নুইয়ে দেয় মাথা। উৎসবের মরসুমে শঙ্কা বেড়ে যায়। বর্ষবরণের রাত নির্বিঘ্নে কাটবে তো? ত্রস্ত থাকতে হয়। বিপদ যদি ঘনায়, পাশে পাওয়া যাবে না কাউকে, আর্তিতে কেউ সাড়া দেবে না, অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনও উপায় মিলবে না— এমন ধারণা আজকাল বদ্ধমূল অনেকের মধ্যেই।

আরও পড়ুন: ভাবলাম যা হয় হোক, শেষ দেখে তবে ছাড়ব

আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে বর্ষবরণের রাতে বিপদটা সেই ঘনালই। দক্ষিণ কলকাতার এক সুনসান হয়ে আসা রাস্তায় হেঁচকা টানে গাড়িতে তোলা হল মহিলাকে, ছুটিয়ে দেওয়া হল গাড়ি, আক্রান্ত মহিলার দিশাহারা সঙ্গী পথ হারালেন। কিন্তু দুই উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া সামাজিক কর্তব্যের বোধ হারাল না, আক্রান্ত মহিলাকে নিয়ে দুষ্কৃতীর গাড়ি অনেক দূরে মিলিয়ে যেতে চাইছে দেখে দুই কিশোর বাড়ির পথ ধরল না। ধাওয়া করল দুষ্কৃতীকে, পথ আটকাল তার, উদ্ধার করল আক্রান্ত মহিলাকে, সঙ্গ দিল প্রশাসনের দরজা পর্যন্ত।

সাবাস প্রসেনজিৎ, সাবাস আদর্শ। দৃষ্টান্ত তৈরি করল দুই কিশোর। অত্যন্ত সরলীকৃত চিন্তাভাবনায় ভেসে একটা গোটা প্রজন্মকে যে নেতিবাচক রঙে চিত্রিত করা যায় না, গোটা সামাজিক প্রবাহের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা যায় না, দুই কিশোর তা প্রমাণ করল। তরুণ, যুবক, মধ্যবয়স্ক, প্রৌঢ়, প্রবীণ— সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠল তাঁরা।

প্রসেনজিৎ দে আর আদর্শ তিওয়ারি কিন্তু কোনও ব্যতিক্রম নয়। তাঁরাই স্বাভাবিক বরং। সামাজিকতার স্বাভাবিক প্রবাহটা প্রসেনজিৎ-আদর্শদের নিয়েই বহমান। কিছু অস্বাভাবিকতা, কিছু ব্যতিক্রম, কিছু সঙ্কীর্ণতা, কিছু মূল্যবোধহীনতা ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্ব নিয়ে ভেসে ওঠে বারবার। নেতির ছায়াপাত প্রশস্ত হয় সেই কারণেই। কিন্তু ভুললে চলে না সমাজের স্বাভাবিক রূপটা ওই রকম নয়। সমাজের স্বাভাবিক মুখটা প্রসেনজিৎ আর আদর্শদের মতোই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন