Newsletter

একটা আদিম গন্ধ এখনও রয়েছে

আপাতদৃষ্টিতে আজকের ভারত আধুনিকতায় আলোকিত। বহিরঙ্গে এই ভারত অত্যন্ত উজ্জ্বল। আধুনিক শিক্ষা, আধুনিক মূল্যবোধ, আধুনিক বিজ্ঞান, আধুনিক প্রযুক্তি, আধুনিক জীবনযাত্রা— ভারতে এ সবই রয়েছে। কিন্তু অন্তরঙ্গে এখনও এক আদিম গন্ধ রয়ে গিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০০:৩৯
Share:

সবরীমালায় ঋতুমতী নারীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরাল সর্বোচ্চ আদালত।

আধুনিক পৃথিবী, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক ভারত। তাল মেলাতে পেরেছি ভেবে বেশ শ্লাঘা বোধ করি আমরা। কিন্তু আদৌ কি পেরেছি? আদৌ কি আধুনিক সভ্যতার আত্তীকরণ ঘটাতে পেরেছি? না কি যাবতীয় আধুনিকতা বহিরঙ্গেই? দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়ের পরে এই প্রশ্ন মাথা চাড়া দিচ্ছে।

Advertisement

আদালত ইতিবাচক রায়ই দিয়েছে। কেরলের সবরীমালার প্রখ্যাত মন্দিরে ঋতুমতী নারীর প্রবেশ যে ভাবে নিষিদ্ধ রাখা হয়েছিল যুগ যুগ ধরে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে। নারী ও পুরুষ, উভয়েই যখন ঈশ্বরের সৃষ্টি, তখন মানুষ কেন ঈশ্বরের দরজায় দু’জনকে দু’রকম চোখে দেখবে? প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। সব বয়সের পুরুষ যেমন সবরীমালার মন্দিরে ঢুকতে পারেন, সব বয়সের নারীও তেমনটাই পারবেন— জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদিম এক প্রথার অবসান ঘটল বলে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু এই প্রথাটার অবসান ঘটানোর জন্য আজও আমাদের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত ছুটতে হল! বিস্ময়কর, লজ্জাজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক।

ভারতীয় সমাজে সংস্কার আনার লড়াইটাতো বহু বহু বছর আগে শুরু হয়েছে। নবজাগরণের মূল্যবোধের সঙ্গে এ দেশের সমাজকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার লড়াই সেই ১৮০০ শতক থেকে চলছে। রাজা রামমোহন রায় লড়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লড়েছেন। যতটা প্রতিকূলতার মুখে তাঁদের পড়তে হয়েছিল সে দিন, আজকের ‘আধুনিক’ ভারতেও সম্ভবত প্রতিকূলতা ততটাই। সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করতে তত্কালীন ব্রিটিশ সরকারের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত ছুটে যেতে হয়েছিল রামমোহনকে। সবরীমালায় ঋতুমতী নারীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরাতেও আজ সর্বোচ্চ আদালতেই যেতে হল। সে ছিল ১৮০০ শতক, ব্রিটিশ ভারত, আধুনিক শিক্ষার আলো ভারতীয় সমাজের অনেক স্তরকেই স্পর্শ করেনি সে সময়ে। আর এ হল ২০১৮ সাল, সাত দশক ধরে স্বাধীনতা ভোগ করতে থাকা ভারত, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলির অন্যতম হয়ে ওঠা ভারত। কিন্তু আধুনিক শিক্ষার আলো যে আজও ভারতীয় সমাজের সব স্তরে পৌঁছয়নি, সরবীমালার ঘটনাপ্রবাহ তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: ঋতুমতীরাও ঢুকতে পারবেন সবরীমালা মন্দিরে, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

আপাতদৃষ্টিতে আজকের ভারত আধুনিকতায় আলোকিত। বহিরঙ্গে এই ভারত অত্যন্ত উজ্জ্বল। আধুনিক শিক্ষা, আধুনিক মূল্যবোধ, আধুনিক বিজ্ঞান, আধুনিক প্রযুক্তি, আধুনিক জীবনযাত্রা— ভারতে এ সবই রয়েছে। কিন্তু অন্তরঙ্গে এখনও এক আদিম গন্ধ রয়ে গিয়েছে। ভারতীয় আর্থ-সামাজিকতার উপরের স্তরে ঘোরাফেরা করলে সে গন্ধ নাকে আসবে না। সমাজের একটু গভীরে বা একটু নীচের স্তরে ডুব দিলেই আদিম ঘ্রাণটা টের পাওয়া যাবে। সেই আদিমতাই এখনও নারী-পুরুষে বৈষম্য করে, সেই আদিমতাই জাতপাতের বিভেদ-বিদ্বেষ জিইয়ে রাখে, সেই আদিমতাই আইন-কানুন-গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে অন্ধ সংস্কারে সমাজকে ডুবিয়ে রাখতে চায়, সেই আদিমতাই নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করতে চায়।

একবিংশ শতকে এসেও আমাদের লড়তে হচ্ছে আদিমতার ছায়ার বিরুদ্ধে, এ বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। তবু লড়াই জারি থাকা দরকার। সর্বোচ্চ আদালতের রায় সে লড়াইকে উত্সাহিতই করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন