Editorial News

প্রশ্ন উঠছে, জবাব খুঁজতে খুঁজতে এগোতে হবে আমাদের

দু’দেশের মধ্যে আলোচনা বন্ধ, কূটনৈতিক আদান-প্রদান তলানিতে। শ্বাসরোধের এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমের জা়নলা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া এল সামান্য হলেও। বিলেতের মাঠে ফের মুখোমুখি হল ভারত-পাকিস্তান। ক্রিকেটের সেতু বেয়ে অসামরিক আদান-প্রদানটা অন্তত ফের দেখা গেল দুই প্রতিবেশীর মধ্যে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ০৪:১৯
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

গলদ গোড়া থেকেই রয়েছে। জন্ম থেকেই ভারত আর পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপড়েন বিস্তর। কিন্তু দুই প্রতিবেশীর পারস্পরিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে যে রকম, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ছাড়া ততটা অন্ধকার মরসুম ভারত-পাক সম্পর্কের ইতিহাসে কমই এসেছে।

Advertisement

নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তাপ চরমে, রোজ গোলাবর্ষণের শব্দ, বারুদের কটূ গন্ধে রোজ ভারাক্রান্ত বাতাস, রোজ ধ্বংসলীলা, রোজ মৃত্যুর খবর। দু’দেশের মধ্যে আলোচনা বন্ধ, কূটনৈতিক আদান-প্রদান তলানিতে। শ্বাসরোধের এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমের জা়নলা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া এল সামান্য হলেও। বিলেতের মাঠে ফের মুখোমুখি হল ভারত-পাকিস্তান। ক্রিকেটের সেতু বেয়ে অসামরিক আদান-প্রদানটা অন্তত ফের দেখা গেল দুই প্রতিবেশীর মধ্যে।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া এই ক্রিকেট ম্যাচ কোনও দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট নয়। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সুবাদেই এজবাস্টনে দু’দেশের ক্রিকেট দলকে মুখোমুখি হতে হল। ভারত এবং পাকিস্তান নিজেদের উদ্যোগে ক্রিকেটীয় আদান-প্রদানের আয়োজন করল, এমন নয়। কিন্তু ভারত-পাক ক্রিকেট সম্পর্ককে ঘিরে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা-উত্তেজনা-আবেগ বহু দশক ধরে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ বিরতি যে তাকে বিন্দুমাত্র মলিন করেনি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এই ম্যাচে তা ফের প্রমাণ হয়েছে। সেটুকুকে অন্তত প্রাপ্তির খাতাতেই রাখতে পারি আমরা।

Advertisement

ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে যে সন্ধিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে এই ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে প্রভূত বিতর্কের জন্মও হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। রক্তপাত এবং ক্রিকেট একসঙ্গে চলতে পারে না, বক্তব্য ভারতীয় জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশের। নিয়ন্ত্রণরেখায় দু’দেশের বাহিনীর মধ্যে রোজ যে ধরনের আদান-প্রদান চলছে, তার পাশে ক্রিকেটীয় আদান-প্রদানকে বেমানান মনে হচ্ছে সম্ভবত অনেকেরই। সীমান্তে ভারতীয় সেনা নিত্য যে আত্মত্যাগ করছে, এই ক্রিকেট ম্যাচ কি তার প্রতি অসম্মান নয়? প্রশ্ন উঠছে এমনই নানা নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। ভারত-পাক সম্পর্কের আবর্ত এই মুহূর্তে এতই জটিল যে জট ছাড়ানোর জন্য প্রশ্নগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়াও জরুরি। অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই সমাধানের পথে এগনো জরুরি। সমাধানের প্রশ্ন যখন ওঠে, তখন লক্ষ্য কিন্তু স্থির করতে হয় শান্তি আর সুস্থিতির মাইলফলকেই। কোনও সভ্য দেশ কখনও অনন্ত বৈরিতার পথকে সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিতে পারে না। এ কথা মাথায় রেখেই ফের দরজা-জানলাগুলো খোলার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি পক্ষের নাম যখন ভারত আর পাকিস্তান, তখন যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সমীকরণ গঠনে ক্রিকেট যে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হয়ে উঠতেই পারে, সে নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়। উত্তপ্ত সামরিক আদান-প্রদানের জেরে প্রথাগত কূটনৈতিক সংযোগের দরজা যখন প্রায় বন্ধ, তখন ক্রিকেট কূটনীতির জানলাটা কিন্তু খুলে রাখাই উচিত। সব দরজা-জানলা বন্ধ রাখা হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ আরওই অন্ধকার। কোনও পক্ষের কাছেই নিশ্চয়ই তা কাম্য নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন