Racism

বিষাক্ত বিদ্বেষ

বর্ণবিদ্বেষের এই আকস্মিক স্ফুরণে মার্কিন দেশ এখন উত্তাল ও দ্বিখণ্ডিত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০০:০৫
Share:

ছবি: রয়টার্স।

আট মিনিট ছেচল্লিশ সেকেন্ড। আমেরিকায় বর্ণবিদ্বেষবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে এই সময়টুকু চিরকালের জন্য খোদিত হইয়া গেল। জর্জ ফ্লয়েড নামের যে মধ্যবয়সি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষটির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হইল, তাহাকে হাতকড়া পরাইয়া রাস্তার ধারে শুয়াইয়া আট মিনিট ছেচল্লিশ সেকেন্ড তাঁহার ঘাড়ে হাঁটু দিয়া চাপিয়া রাখিয়াছিলেন মিনিয়াপোলিসের এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। জর্জ বারংবার বলিতেছিলেন যে তিনি শ্বাস লইতে পারিতেছেন না, যন্ত্রণায় মাকে স্মরণ করিতেছিলেন। জর্জকে পুলিশ ধরিবার কারণ তিনি সিগারেট কিনিতে গিয়া একটি নকল বিশ ডলারের নোট দিয়াছিলেন! অপরাধ, সন্দেহ নাই। কিন্তু এই অপরাধের এই শাস্তি দেখিয়া গোটা বিশ্ব কাঁপিয়া উঠিয়াছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও সহায়ক ভিডিয়ো সাক্ষী, জর্জ প্রতিবাদ করেন নাই, পলাইতে যান নাই, এমন কিছু করেন নাই যাহাতে পুলিশ কোনও চরম পন্থা লইতে পারে। তাহার পরেও হাঁটু দিয়া ঘাড় চাপিয়া শ্বাসরোধ করিয়া নৃশংস হত্যা প্রমাণ করে, ইহা আসলে সম্ভাব্য অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনরক্ষকের পদক্ষেপ নহে, কালো মানুষের বিরুদ্ধে সাদা মানুষের বিদ্বেষ ও ঘৃণার চরম বহিঃপ্রকাশ। কোভিড অতিমারি তো নূতন আমদানি, এই বর্ণবিদ্বেষের অতিমারি আমেরিকায় শতকের পর শতক ধরিয়া চলিতেছে।

Advertisement

বর্ণবিদ্বেষের এই আকস্মিক স্ফুরণে মার্কিন দেশ এখন উত্তাল ও দ্বিখণ্ডিত। এক দিকে দেশ জুড়িয়া পথে নামিয়াছে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ মিছিল, জর্জের অন্তিম শব্দগুচ্ছ ‘আই কান্ট ব্রিদ’ হইয়া উঠিয়াছে দেশব্যাপী প্রতিবাদীদের স্লোগান। জর্জ উপলক্ষ মাত্র, প্রতিবাদীদের মুখে উঠিয়া আসিয়াছে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের উপরে এত দিন ধরিয়া চলিয়া আসিয়া বঞ্চনা ও বৈষম্যের ভূরি ভূরি উদাহরণ। অন্য দিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপরেও নামিয়া আসিয়াছে পুলিশের পীড়ন। ভিডিয়োয় দেখা গিয়াছে, পুলিশ প্রতিবাদীদের উপর পদাঘাত করিতেছে, কাঁদানে গ্যাস বা লঙ্কাগুঁড়ার স্প্রে ছড়াইয়া দিতেছে, গুলিচালনায় প্রতিবাদীদের মৃত্যুও হইয়াছে। সাংবাদিকরা বিক্ষোভের ছবি তুলিতেছেন, তাই তাঁহাদের উপর নির্যাতন বিষম আকার ধারণ করিয়াছে। চল্লিশটিরও বেশি শহরে কার্ফু জারি হইয়াছে। কোভিড-বিধ্বস্ত দেশে বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী আন্দোলন যেন আগুন জ্বালাইয়া দিয়াছে।

এবং সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দিতেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেবল ফ্লয়েড হত্যা ও দাঙ্গা পরিস্থিতি নহে, প্রেসিডেন্টের এই অভূতপূর্ব ভূমিকাও মার্কিন ইতিহাসে খোদিত হইয়া রহিল। পুলিশি অত্যাচারের ক্ষোভ প্রশমনের বদলে, সামাজিক সংহতি ফিরাইবার বদলে তিনি টুইট করিয়া প্রতিবাদীদেরই শাসাইলেন। হোয়াইট হাউসের সামনে যখন প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলিতেছে, তখন তিনি বাঙ্কারে লুকাইয়া থাকিয়া আস্ফালন করিয়া বলিলেন, কী কঠোর ও ভয়ঙ্কর উপায়ে বিক্ষোভকারীদের উচিত শিক্ষা দিবেন। নাগরিক বিক্ষোভকে তিনি সন্ত্রাস আক্রমণ বলিলেন, নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে নামাইতে চাহিলেন সামরিক শক্তি বা ন্যাশনাল গার্ড। সর্বতো ভাবেই যাহাকে দেশের জাতীয় সঙ্কটকাল বলা যাইতে পারে, তাহার সঙ্কট মোচন না করিয়া, সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা হাওয়ায় উড়াইয়া, বিদ্বেষী বিভাজনকারীদের প্রভূত উসকানি দিয়া ট্রাম্প দেখাইলেন, মার্কিন রাজনীতি কোন সঙ্কীর্ণতার অতলে নিমজ্জিত হইয়াছে। এ যাবৎ ট্রাম্পের উদাহরণ দিয়া রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা দক্ষিণপন্থী কর্তৃত্ববাদের বিশ্লেষণ করিতেন। এখন হইতে ট্রাম্প প্রশাসন স্মরণীয় হইয়া থাকিবে তাহার প্রত্যক্ষ বিদ্বেষবিষাক্ত কার্যক্রমের জন্য। সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পথ পরিহার করিয়া, আইনশৃঙ্খলা ও শাসননৈতিকতাকে কাঁচকলা দেখাইয়া দেশের জনসমাজকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করিতেছে আজিকার হোয়াইট হাউস।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন