মাস চারেক আগে নিয়ন্ত্রণ রেখার ও পারে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হয়েছিল। তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দেশে এবং বিদেশে খুব হইচই হয়েছিল। এখন অবশ্য সেটা নিয়ে আর হইচই তেমন হচ্ছে না। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর রাজনৈতিক রেশটা কেটে গিয়েছে। কিন্তু, উত্তরপ্রদেশ-সহ মোট পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন পর্ব চলছে। এই সময়ে দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদের নামে রৈ-রৈ কাণ্ড বাঁধানো না গেলে চলবে কী করে! অতএব আবার সার্জিক্যাল-সার্জিক্যাল রব তোলার চেষ্টা শুরু হয়ে গেল।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এক সাক্ষাৎকারে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। পাকিস্তানকে সতর্কবার্তা দিলেন— সন্ত্রাসের রফতানি বন্ধ হলে ভাল। না হলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ‘আবার’ হতে পারে।
রাজনাথ সিংহ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কথা বলার অধিকার তাঁর অবশ্যই রয়েছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হবে কি না, সে প্রসঙ্গে তিনি কথা বলতেই পারেন। কিন্তু ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’ রাজনাথের বদলে ‘উত্তরপ্রদেশের হাইপ্রোফাইল বিজেপি নেতা’ রাজনাথ যখন পাকিস্তানকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের হুঁশিয়ারি দেন, তখন পটভূমিকায় রাজনৈতিক অভিসন্ধি দৃশ্যমান হয়।
বিজেপি-র রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। ভারতীয় রাজনীতির প্রবাদ— দিল্লি পৌঁছনোর সব রাস্তা উত্তরপ্রদেশ হয়েই যায়। গত লোকসভা নির্বাচনে সংশয়হীন ভাবে উত্তরপ্রদেশের দখল নিয়েছিল বিজেপি। সেই সমর্থন যে বহাল রয়েছে, তা প্রমাণ করা বিজেপি-র পক্ষে খুব জরুরি আজ। কিন্তু কংগ্রেস-সপার যৌথ লড়াই যে উত্তরপ্রদেশের হাওয়াটাকে বিজেপি-র পক্ষে কিছুটা অসুবিধাজনক করে তুলেছে, তা বুঝতে বিজেপি নেতৃত্বের খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। তার উপরে আবার কালো টাকার বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে গিয়ে গরিব মানুষের উঠোনেই স্ট্রাইকটা হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে হাওয়া প্রতিকূল কিছুটা। এই প্রতিকূল হাওয়াটাকে অনুকূলে আনতে একটা তুমুল জিগির দরকার। দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদের নামে সেই জিগিরটাই তোলার চেষ্টা করলেন রাজনাথ সিংহ। সন্ত্রাস রুখতে তাঁর এই জিগির কতটা কার্যকরী হবে, সে বিষয়ে রাজনাথ সিংহ নিশ্চয়ই খুব একটা ভাবিত নন। রাজনৈতিক বিরোধীদের জন্য এই জিগির কতটা ক্ষতিকর হবে, রাজনাথ সিংহেরা সেই হিসেবই কষছেন এখন।
পোড় খাওয়া রাজনীতিক রাজনাথ সিংহ কোনও অসাংবিধানিক কথা বলেননি। তাই তাঁকে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দায়ে ফেলা যায় না। কিন্তু তাঁর এই জিগির যে আসলে বিজেপি-র অন্দরে জন্ম নেওয়া অস্বস্তিরই প্রতিফলক হয়ে উঠেছে, সে কথাটা মনে করিয়ে দেওয়াই যায়।