National news

কোবিন্দের বার্তা কিন্তু প্রণবের যোগ্য উত্তরসূরির মতোই

প্রণব মুখোপাধ্যায় সরকারকে মনে করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন রাজধর্মের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা। ঠিক একই উচ্চারণ এল রামনাথের কাছ থেকেও। এল রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর কার্যকাল শুরু হওয়ার দিনেই।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৪:৪০
Share:

রামনাথ কোবিন্দ। —ফাইল চিত্র।

যেখানে শেষ করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, ঠিক সেখান থেকেই শুরু করলেন রামনাথ কোবিন্দ। বৈচিত্র, বহুত্ব, বিবিধতা— ভারতীয়ত্বের মূল কথা এইগুলোই— রাষ্ট্রপতি ভবন ছাড়ার আগের মুহূর্তেও মনে করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন প্রণব। সরকারকে মনে করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন রাজধর্মের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা। ঠিক একই উচ্চারণ এল রামনাথের কাছ থেকেও। এল রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর কার্যকাল শুরু হওয়ার দিনেই।

Advertisement

একটা অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসলেন রামনাথ কোবিন্দ। গোটা দেশের বাতাসে যেন একটা প্ররোচনা রয়েছে, একটা অসহিষ্ণু আগুন উস্কে দেওয়ার অপচেষ্টা রয়েছে। এ সন্ধিক্ষণ কিন্তু ক্ষণিকের নয়, বরং প্রলম্বিতই। এর সূত্রপাত হয়েছিল প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে থাকাকালীনই। অভিজ্ঞ রাজনীতিক অভ্রান্ত বুঝে নিয়েছিলেন, সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ঠিক কী। তাই নিজের কার্যকালে দেশের সরকারকে বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন— বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি। ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা নয়, নানা মতের আত্তীকরণই ভারতীয়ত্বের সারকথা— রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ দিন পর্যন্ত এই উচ্চারণেই অটল থেকেছেন তিনি। এ বার সে দায়িত্ব বর্তাল রামনাথ কোবিন্দের কাঁধে। কোবিন্দও শপথ নিয়েই আভাস দেওয়ার চেষ্টা করলেন, পূর্বসূরির দেখানো পথের সঙ্গে কোনও ঘোষিত বিরোধ অন্তত তাঁর নেই।

কোনও সাংবিধানিক পদে আসীন হওয়ার পর অনেক রাজনীতিকই ভুলে যান যে ওই পদ কোনও ব্যক্তির নয়, কোনও দলের নয়, ওই পদ সমগ্র ভারতের। প্রণব মুখোপাধ্যায় ভোলেননি। রামনাথ কোবিন্দ বোঝাতে চাইলেন, তিনিও ভুলবেন না। আজীবন কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিতে অভ্যস্ত প্রণবের পক্ষে বিবিধতা আর বহুত্বের হয়ে সওয়াল করা যতটা স্বাভাবিক, প্রায় গোটা রাজনৈতিক জীবনটা বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের অন্তরতম বৃত্তে কাটিয়ে আসা কোবিন্দের পক্ষে কিন্তু বিষয়টা ততটা স্বাভাবিক নয়। হিন্দুত্ব বা কট্টর জাতীয়তাবাদেই বেশি অভ্যস্ত কোবিন্দরা। রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার পর কোবিন্দ যে বার্তা দিলেন, তা কিন্তু সেই কট্টরবাদের চেয়ে অনেক দূরবর্তী।

Advertisement

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিকের যোগ্য উত্তরসূরি কি রামনাথ কোবিন্দের পক্ষে হওয়া সম্ভব? সংশয় প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। কোবিন্দ কিন্তু প্রথম দিনেই বুঝিয়ে দিলেন, রাজধর্মের রক্ষাকবচ হয়ে ওঠার কাজটা অত্যন্ত সুচারু ভাবেই করতে চান তিনি। যে উচ্চারণকে সঙ্গী করে কোবিন্দ কাজ শুরু করলেন, তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। আশা রাখব, কোনও দলের বা গোষ্ঠীর হয়ে নয়, কোবিন্দ কাজ করবেন গোটা দেশের প্রতিনিধি হিসাবেই এবং দেশ বলতে মূলত শতাধিক কোটির এই বিরাট জনগোষ্ঠীকেই বুঝবেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন