Editorial News

বিরল সঙ্কটে গণতন্ত্রের সদাজাগ্রত প্রহরী

এই দৃশ্যপট কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। শুধু নজিরবিহীন বললে অবশ্য তাৎপর্যটাই অধরা থেকে যায়। এই দৃশ্যপট আসলে ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকও। গণতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বিচার বিভাগ।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫০
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রায় একই রকম একটা ছবি তৈরি হয়েছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্‌হার বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি। আমরা উদ্বেগ এবং আগ্রহ নিয়ে নজর রেখেছিলাম ঘটনাপ্রবাহে। কিন্তু প্রায় একই রকম ঘটনা কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতেও যে ঘটবে, তেমনটা কল্পনার সুদূর পরাহত পরিসরেও আসেনি।

Advertisement

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের চার বরিষ্ঠ বিচারপতি সাংবাদিক সম্মেলন করে অনাস্থা প্রকাশ করলেন প্রধান বিচারপতির প্রতি। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পীঠস্থানে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে না, অভিযোগ করলেন তাঁরা। এই ধারা বহাল থাকলে গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকবে না দেশে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করলেন চার বিচারপতি।

এই দৃশ্যপট কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। শুধু নজিরবিহীন বললে অবশ্য তাৎপর্যটাই অধরা থেকে যায়। এই দৃশ্যপট আসলে ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকও। গণতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বিচার বিভাগ। ভারতীয় বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং কর্তব্যনিষ্ঠাই আইনসভাকে বিপথগামী হতে দেয়নি এ যাবৎ। ভারতীয় বিচার বিভাগের দার্ঢ্য এবং ঋজুতাই প্রশাসনকে আনখশির দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়তে দেয়নি এখনও। বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণের শ্রদ্ধা-সম্ভ্রম তাই অনেকটাই। সেই বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পীঠস্থানকে ঘিরে যে অভূতপূর্ব বিতর্কের মেঘ ঘনাল, তাতে অনেক কিছুই ঝাপসা, অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট হয়ে উঠল। এই সঙ্কট শুধু সুপ্রিম কোর্টের সঙ্কট নয়, এই সঙ্কট শুধু বিচার বিভাগের সঙ্কট, এ হল গোটা জাতির সঙ্কট।

Advertisement

আরও পড়ুন
বিচার বিভাগে ‘বিদ্রোহ’, নিশানায় প্রধান বিচারপতি

সুবিশাল ভারতীয় জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই সুপ্রিম কোর্টকে জন-অধিকারের অন্যতম প্রধান রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখে আসছে। সাধারণের বিশ্বাস অর্জনের কৃতিত্ব সুপ্রিম কোর্টেরই। ন্যায়ের, আইনের শাসনের এবং নাগরিক অধিকারের সদাজাগ্রত প্রহরী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সফল হয়েছে বলেই ভারতের শীর্ষ আদালত জনসাধারণের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছে। শ্রদ্ধার সেই বোধ, সেই পরম্পরা আজ আচমকা এক বিরাট প্রশ্নচিহ্নের মুখে, এক সংশয়ের আবহে। এই পরিস্থিতি সর্বৈব অনাকাঙ্খিত ছিল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

অনেকেই কিন্তু এই সঙ্কটকালগুলোর সুযোগ নিতে চান। তাঁরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চান, তাঁরা নীতি-নৈতিকতার বিপ্রতীপ মেরুতে দাঁড়িয়ে স্বার্থসর্বস্বতার সাধনা করেন। কিন্তু হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের অতন্দ্র ভূমিকা তাঁদের সফল হতে দেয় না সব সময়। বিচার বিভাগের আকাশে আজ ঘোর কালো মেঘ জমতে দেখে তাঁরা নিশ্চয়ই উল্লসিত হচ্ছেন। অসীম শক্তিধর গণতান্ত্রিক স্তম্ভটি দুর্বল হলে স্বার্থসিদ্ধির নানা অনৈতিক পথ সুগম হয়ে উঠবে— এমন কল্পনায় চোখ হয়তো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে তাঁদের। সঙ্কটের আশু নিরসন তাই অত্যন্ত জরুরি। সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদার স্বার্থে শুধু নয়, ভারতীয় জনগোষ্ঠীর তথা গণতন্ত্রের নিরাপত্তার স্বার্থে, আইনের শাসনের স্বার্থে, এই সঙ্কটের নিরসন জরুরি। গোটা জাতি কিন্তু সে দিকেই তাকিয়ে এই মুহূর্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন