সম্পাদকীয় ২

তাঁহারা জানেন না

রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বলিয়া যে ঘটনাটি ইতিমধ্যে রাজ্যের বাস্তবে পরিণত হইয়াছে, এই খেলা তাহার সহিত আগাপাছতলা জড়িত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০০:৪২
Share:

কলেজে কলেজে ভর্তির পর্ব চলিতেছে। টাকার খেলাও চলিতেছে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বলিয়া যে ঘটনাটি ইতিমধ্যে রাজ্যের বাস্তবে পরিণত হইয়াছে, এই খেলা তাহার সহিত আগাপাছতলা জড়িত। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা কলেজ নামক জায়গাটিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দুর্বৃত্তদের আঁতুড়ঘর বলিয়া চেনে, এবং ইহাও জানে যে, এই আঁতুড়ঘর হইতে পদে পদে বহুবিধ পদ্ধতিতে বিরাট পরিমাণ অর্থনিষ্কাশন সম্ভব। তাই কলেজ ভর্তির এই ঋতুতে তাহারা অত্যন্ত বেশি মাত্রায় সক্রিয়। এই অভিযোগ অতিমাত্রায় প্রবল যে, এই অবারিত তৎপরতার পিছনে প্রশ্রয় ও আশ্রয়ের ছাতা ধরিয়া থাকে মহামহিম রাজনৈতিক দল, কার্যক্ষেত্রে যাহারা রাজ্যের সরকারি দলও বটে। ইহা এই জমানার নূতন নিয়ম নহে, পূর্ববর্তী জমানাতেই ইহার উদ্ভব, তবে এখন বিষবৃক্ষ সম্পূর্ণ বিকশিত হইয়াছে। সুতরাং সরকারি দলের ছাত্রনেত্রীর সামনেই কলেজের সদ্য-স্কুল-পাশ ছেলেমেয়েদের লাইনে টাকার থলি এ হাত ও হাত হয়। প্রচারমাধ্যমে বারংবার বিষয়টির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হইলেও কোনও হেরফের হয় না, কেহ ভয় পায় না, কাহাকেও ভয় দেখানো হয় না, সকলেই জানে, সবার উপর দল সত্য।

Advertisement

সুতরাং স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী অনায়াসে ভাবিয়া লন, তিনি যখন কলেজের অধ্যক্ষদের দিকে অভিযোগটি ঠেলিয়া তাঁহাদের এই ব্যাপক দুর্নীতির জন্য পরোক্ষে কাঠগড়ায় দাঁড় করাইতেছেন, রাজ্যবাসী সকলেই নিশ্চয়ই সোনামুখে তাহা বিশ্বাস করিয়া লইবে, এবং তাঁহার অসহায়তার প্রতি ঘরে ঘরে বিস্তর অনুকম্পা প্রকাশিত হইবে। সত্যই তো, শিক্ষামন্ত্রী অধ্যক্ষদের নিজেদের কলেজের ‘গুন্ডামি’ ঠেকাইতে বলিয়াছেন, সে কাজ তাঁহারা না করিলে মন্ত্রিবর কী-ই বা করিবেন! তিনি নিশ্চয় এত শত খবর রাখেন না যে, দূর এবং সাম্প্রতিক অতীতে বহু বার অধ্যক্ষরা কলেজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখিতে চাহিলে তাঁহাদের ছাত্রগুন্ডা ও বহিরাগত গুন্ডা যৌথ বাহিনী মিলিয়া শাসানি দিয়াছে, ঘেরাও করিয়াছে, এমনকী প্রহারও করিয়াছে, মাটিতে ফেলিয়া মারিয়াছে। শিক্ষামন্ত্রী কী করিয়া জানিবেন যে, কোনও অজ্ঞাত কারণে অধ্যক্ষরা সকলে বিশ্বাস করেন, আক্রান্ত হইলে প্রশাসন মোটেই তাঁহাদের বাঁচাইতে আসিবে না। তাঁহাদের অবসর-পরবর্তী সুযোগসুবিধাও সম্ভবত বিপন্ন হইবে। তাই নিশ্চেষ্ট থাকিয়া নৈরাজ্য ও দুর্নীতি মানিয়া লওয়াই মঙ্গল।

‘মানিয়া লইতে’ প্রস্তুত এই সমাজ রাজ্যের শিক্ষা পরিস্থিতিকে কী ভাবে ছারখার করিয়া দিতেছে, তাহাই বা শিক্ষামন্ত্রী কী করিয়া জানিবেন! কলেজে ঢুকিবার সময়েই এই চিত্র দেখিয়া ছেলেমেয়েরা যদি ভয় পাইয়া যায়, যদি অন্য রাজ্যের অন্য কলেজের দিকে ধাবিত হয়, তিনি ও তাঁহারা তাই বলিবেন, এই ব্রেন-ড্রেন অহেতুক। মুখ্যমন্ত্রী তাই আগ বাড়াইয়া কৃতী ছাত্রছাত্রীদের বলিবেন, রাজ্যের মধ্যেই পড়াশোনা করিতে, অন্য কোথাও যাওয়া কেন। তাঁহারা কী ভাবে জানিবেন, কলেজে কলেজে ক্যাম্পাসে প্রবেশমাত্র ছাত্রনেতাদের প্রাত্যহিক গর্জন অনাচার ও আস্ফালন দেখিয়া সতেরো-আঠারো বৎসরের উৎকর্ষকামী শিক্ষাগ্রহী মন কী ভাবে বিকল হইয়া যায়। আহা, কী নিদারুণ নেতা-মন্ত্রীদের এই অজ্ঞতা!

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন