সম্পাদকীয় ২

কদর্যতার বৃত্ত

সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ থাকিতে পারে না যে ইহা অতি হীন আচরণ। স্যান্ডার্স ঠিকই বলিয়াছেন, এই ভাবে তাঁহাকে অসম্মান করিলেন যাঁহারা, তাঁহাদেরই মনের দীনতা এতদ্দ্বারা প্রকাশিত হইল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০০:৩৩
Share:

সপরিবারে রেস্তরাঁয় খাইতে বসিয়াছিলেন, এমন সময় রেস্তরাঁর মালিক আসিয়া জানাইলেন, পত্রপাঠ তাঁহাদের বাহির হইয়া যাইতে হইবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনে কর্মরত কোনও ব্যক্তিকে তাঁহাদের দোকানে বসিয়া খাইতে দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভার্জিনিয়া প্রদেশে এমনই দুর্ভোগ পোহাইতে হইল হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স-এর। স্যান্ডার্স বিষম রাগে ফুঁসিতে ফুঁসিতে তৎক্ষণাৎ সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় লন। তাঁহার টুইট-বচন গোটা বিশ্বে তোলপাড় ফেলিয়া দেয়। অধস্তন কর্মীর এ হেন অপমানের কথা শুনিয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও চুপ করিয়া থাকেন নাই— ওই রেস্তরাঁটি বাহিরে-ভিতরে সর্বৈব ভাবে কত জঘন্য, বিশ্ববাসীকে তাহা জানাইয়া ছাড়েন। স্বভাবতই নিন্দার ঝড় সর্বত্র। অন্যতম প্রধান প্রগতিশীল মার্কিন সংবাদপত্রেরও সম্পাদকীয় মন্তব্য: এমন বিদ্বেষমূলক ব্যবহার একেবারেই অসমীচীন। সামাজিক বা রাজনৈতিক মতের বিরোধিতার কারণে এমনতর ব্যক্তিগত আক্রমণ হীন কাজ।

Advertisement

সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ থাকিতে পারে না যে ইহা অতি হীন আচরণ। স্যান্ডার্স ঠিকই বলিয়াছেন, এই ভাবে তাঁহাকে অসম্মান করিলেন যাঁহারা, তাঁহাদেরই মনের দীনতা এতদ্দ্বারা প্রকাশিত হইল। তবে কিনা, স্যান্ডার্সের পরবর্তী মন্তব্যটি ভাবাইয়া তুলিবার মতো। বলিয়াছেন, অন্য ব্যক্তির সহিত, বিশেষত নিজের বিরুদ্ধ মতাবলম্বী ব্যক্তির সহিত কী ভাবে সম্মানসহকারে ব্যবহার করিতে হয়, তাহা শিখিবার বস্তু। বক্তব্যে ভুল নাই। কিন্তু বক্তব্যের প্রেক্ষিতটি গোলমেলে। মার্কিন সমাজ যে আজ এই বিন্দুতে আসিয়া পৌঁছাইয়াছে যেখানে খাওয়ার মাঝে কাউকে টানিয়া বাহির করিয়া দিতে হয়, সেই সমাজ তৈরির পিছনে কি স্যান্ডার্সদের কোনও দায়িত্ব নাই? যে প্রশাসনে তিনি কর্মরত, তাহা কি সত্যই ভিন্ন ধরনের বা ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষদের প্রতি সম্মান দেখাইয়া থাকে? প্রসঙ্গত, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিভিন্ন সেনেটর মন্তব্য করিয়াছেন, ভালই হইয়াছে, এই ভাবেই দিকে দিকে ট্রাম্পের সহকারীদের গোটা দেশ ‘একঘরে’ করুক! মার্কিন দেশের পরতে পরতে এখন কতখানি রাগ, বুঝিতে কষ্ট হয় না। প্রশাসনের অমানবিকতার নজিরসমূহ প্রেসি়ডেন্ট ও প্রশাসনের প্রতি এই বিপুল ঘৃণাকেও ক্রমে অমানবিকতার দিকে ঠেলিতেছে, একটি কদর্য বৃত্ত রচনা করিতেছে। যে প্রশাসনের নীতি— সীমান্তের কাঁটাতার দিয়া হাজার হাজার মা ও শিশুকে আলাদা করিয়া দেওয়া, সেখানে এই তীব্র তিক্ত প্রতিক্রিয়া জমিবে‌ই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কুরুচিকর টুইটে স্পষ্ট, প্রতিক্রিয়া কেন যে এত উচ্চগ্রামে, সে বিষয়ে কোনও সম্যক বোধ নাই।

সামগ্রিক চিত্রটি অতীব উদ্বেগজনক। রাগে ঘৃণায় যদি ক্রমে এই বোধ সমাজ হইতে লুপ্ত হয় যে, পাবলিক সার্ভিস বা প্রশাসনিক জনপরিষেবার কাজে যাঁহারা লিপ্ত থাকেন, প্রশাসনই তাঁহাদের একমাত্র পরিচয় নহে, তবে বলিতে হয়, গণতন্ত্রের মূল ভিতটিই নড়বড় করিতেছে। গণতন্ত্রের ক্ষয় হয়তো এমন ভাবেই গণতন্ত্রের লয় ডাকিয়া আনে। মার্কিন বাস্তবের বিভিন্ন ছবিতে এখন সেই প্রবণতার ইঙ্গিত। চোখ রাঙাইয়া ব্যঙ্গ করিয়া ইহার মোকাবিলা করা যায় কি? অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁহার সহকারীদের নিকট হইতে আর কী-ই বা আশা করা যায়?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন