বিজয়বার্তা

অন্য দিক হইতে, দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়িবার নহে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিরোধী দলনেতাদের অভিযোগ, এই বারের নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত ছিল না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৫
Share:

শেখ হাসিনা অতএব তৃতীয় বারের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার নাতিদীর্ঘ ইতিহাসে ইহা রেকর্ড। আওয়ামী লীগ যে ব্যবধানে বিরোধী দলগুলিকে পরাস্ত করিয়াছে, তাহাও অবশ্য রেকর্ড। বলিয়া দিতে হয় না যে, আওয়ামী লীগ নেত্রীর পিছনে প্রবল জনসমর্থন রহিয়াছে। ভোটবাক্সে তাহার প্রতিফলনও ঘটিয়াছে। এক দিক হইতে এই সুস্পষ্ট জনমতাজ্ঞা বিরাট সুখবর। গত কয়েক বৎসর ধরিয়া যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশকে গ্রাস করিতে উদ্যত ছিল, তাহাতে এই বারের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরিয়া নানা রকমের উদ্বেগ জমা হইয়াছিল। অশান্তি ও সঙ্কটের আশঙ্কা-মেঘ ঘন হইতেছিল। শেষ পর্যন্ত ভোটের ফল আশা দিতেছে যে বিজয়িনী শেখ হাসিনা শক্ত ভাবে দেশের হাল ধরিবেন, রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতির স্থিতির লক্ষ্যে আরব্ধ সংস্কারসমূহকে আগাইয়া লইয়া যাইবেন, দেশকে দৃঢ়তর জমির উপর দাঁড় করাইতে পারিবেন। ইতিমধ্যেই নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি চোখে পড়িবার মতো, বাস্তবিক, অনেক বিষয়ে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে লজ্জায় ফেলিবার মতো— পরবর্তী স্থিতিশীল প্রগতিপন্থী সরকার সেই উন্নতির চাকা সাময়িক ভাবেও স্তব্ধ হইতে দিবেন না, এমন আশা করা যায়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দনবার্তা প্রেরণ করিয়াছেন। পরবর্তী ধাপে, দুই দেশই বর্তমান সুসম্পর্ককে ভবিষ্যতে আরও অর্থবহ করিতে সচেষ্ট হইবে, আশা রহিল।

Advertisement

অন্য দিক হইতে, দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়িবার নহে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিরোধী দলনেতাদের অভিযোগ, এই বারের নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত ছিল না। সে দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে নির্বাচন লইয়া এ হেন চাপানউতোর নূতন ব্যাপার নহে, কিন্তু সেই নিয়মিত পালার বাহিরে যদি অভিযোগগুলিতে কিয়দংশেও সত্যতা থাকে, তবে বলিতে হইবে, ত্রুটিমুক্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য বাংলাদেশের জনসাধারণকে আরও অনেকখানি সতর্ক, সচেতন ও সক্রিয় হইয়া উঠিতে হইবে। গণতন্ত্র যাহাতে নিশ্চিত ও অভ্রান্ত পথে চলে, তাহা দেখা কেবল রাজনৈতিক সমাজের দায় নহে, বৃহত্তর নাগরিক সমাজেরও দায়। প্রসঙ্গত, এশিয়ার যে সব দেশে গণতন্ত্র সুষ্ঠু ভাবে চালিত হইতেছে, তাহাদের অনেকগুলিতেই নাগরিক সমাজ বিশেষ রকম সরব ও সতর্ক বলিয়াই তাহা সম্ভবপর হইয়াছে। বাংলাদেশ সেই পথে আগাইয়া রহিল, না পিছাইয়া— রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক অভিযোগ-অনুযোগ বাদপ্রতিবাদ ইত্যাদির উপরে উঠিয়া বাংলাদেশের নাগরিক সমাজকেই তাহার বিচার করিতে হইবে। পালন করিতে হইবে প্রয়োজনীয় আত্মশুদ্ধির দায়িত্বও।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের দায়টি আরও গুরুতর। কেবল বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নতি সচল রাখাই তাহার কাজ নয়। সার্বিক গণতন্ত্রের পথে দেশকে আগাইয়া লইয়া যাওয়াও তাহার একটি বিশেষ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। মনে রাখা ভাল, কেবল ভোটপ্রক্রিয়ায় নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের গোটা শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হইয়াছে। অবশ্যই, বাংলাদেশের পরিস্থিতিটি বিশেষ রকমের। কট্টরপন্থার ছোবল সেখানে প্রতি পদে ভূমির সামান্য তলদেশে অপেক্ষমাণ। এতৎসত্ত্বেও বলিতে হয়, সেই ছোবলকারীদের বিষদাঁত আরও শক্ত আরও ভয়াল হইয়া উঠিতে পারে যদি সরকারি নিরপেক্ষতার স্খলন ঘটে। সুতরাং প্রগতি ও উন্নতির স্বার্থেই নূতন সরকারকে সতর্কতর থাকিতে হইবে। শেখ হাসিনার দিকে কেবল তাঁহার দেশবাসীই তাকাইয়া নাই, বিশ্বের বহু দেশের সরকার ও নাগরিক সমাজ তাঁহার সাফল্যের আশায় বুক বাঁধিয়াছে। প্রত্যাশা— তৃতীয় বারের প্রধানমন্ত্রী তাঁহার বর্ধিত দায় বিষয়ে তিন গুণ সচেতন থাকিবেন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন