আমাদের দেশের সামনে খুব বড় সমস্যা সন্ত্রাসবাদ। কিন্তু চমকে উঠতে হল এ কথা জেনে যে, তার চেয়েও বড় ‘সন্ত্রাস’ আমরা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে। নীরবে, নিশ্চুপে, বায়ুভূত অবস্থায় জীবনে মিশছে সে, বিষিয়ে দিচ্ছে শরীর, আর আমরা অকাতরে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করছি নিজেদের।
ধূমপান সবচেয়ে বেশি প্রাণ নেয় বিশ্বের যে চারটি দেশে, তার মধ্যে ভারত অন্যতম। এ দেশের ৬৩ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধূমপানে আসক্ত। সে বিষাক্ত ধোঁয়া প্রাণও নিচ্ছে দেদার। বলছে সমীক্ষা। একে প্রাণের ভয়ঙ্কর অপচয় ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?
সম্প্রতি আর এক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, সন্ত্রাসবাদ যত মানুষের প্রাণ নেয় ভারতে, প্রতি বছর তার চেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ যায় প্রণয়ঘটিত কারণে। সে-ও প্রাণের অপচয়ই বটে এবং প্রাণের কোনও ধরনের অপচয়ই মেনে নেওয়া যায় না। তবু প্রণয়ঘটিত প্রাণপাতের মধ্যে কোথাও কোথাও যেন ভালবাসায় নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার একটা ধারণা নিহিত থাকে। কিন্তু, ধূমপানে আসক্ত হয়ে মারা পড়ার মধ্যে তেমন কিছুও কি থাকে?
ধূমপানে মৃত্যুর হার যে আমাদের দেশে এত বেশি, সে কথা জানতে পেরে কিন্তু মনে আতঙ্ক জাগছে, ত্রাসের সঞ্চার হচ্ছে। সন্ত্রাসকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি, কিন্তু ধূমায়িত সন্ত্রাস কী ভাবে কুরে কুরে খাচ্ছে ভিতরটাকে, বুঝতেই পারি না সে কথা। প্রাণ যদি দিতেই হয়, দেশের জন্য দিতে পারি, দশের জন্য দিতে পারি। বিষাক্ত ধোঁয়ার জন্য কেন লুটিয়ে দেব মহামূল্যবান জীবন? এই প্রশ্নটা যদি সবাই জিজ্ঞাসা করতে পারি নিজেদের, ভারতের আকাশ থেকে ধোঁয়ার মেঘ অনেকটা কমবে, হলফ করে বলে দেওয়া যায়।