Flight Delay

দোলা সেনদের এই প্রবণতা নিতান্তই ঔদ্ধত্য-জনিত

আইন প্রণেতা বা আইনসভার সদস্যরা কি ভাবেন যে তাঁরা দেশের আইনের ঊর্ধ্বে? তাঁরা কি ভাবেন যে প্রচলিত ব্যবস্থাকে কোনও ভাবে অসুবিধাজনক মনে হলেই আইন হাতে তুলে নেওয়া যায়, যথেচ্ছাচার করা যায়? দোলা সেন প্রশ্নটা আবার উস্কে দিলেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৪০
Share:

আইন প্রণেতা বা আইনসভার সদস্যরা কি ভাবেন যে তাঁরা দেশের আইনের ঊর্ধ্বে? তাঁরা কি ভাবেন যে প্রচলিত ব্যবস্থাকে কোনও ভাবে অসুবিধাজনক মনে হলেই আইন হাতে তুলে নেওয়া যায়, যথেচ্ছাচার করা যায়? দোলা সেন প্রশ্নটা আবার উস্কে দিলেন।

Advertisement

সাংসদের অসুস্থ মায়ের জন্য বিমানে বরাদ্দ হওয়া আসনটিকে ঘিরে জট। তৃণমূলের সাংসদ দোলা সেন সম্পূর্ণ অকারণে অনড় হয়ে রইলেন। বেশ কিছু ক্ষণ আটকে রইল উড়ান, দুর্ভোগ পোহাতে হল অন্য সব যাত্রীকে, দুর্ভোগ পোহাতে হল উড়ান সংস্থাকে, দুর্ভোগের আঁচ নিশ্চয়ই লাগল এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলেও। সাংসদ নিজে কি জানতেন না, তাঁর অনড় জেদ সমস্যা তৈরি করবে এতগুলি স্তরে? তাঁর পদাধিকারের কথা মাথায় রাখলে ধরে নিতে হবে, তিনি নিশ্চয়ই জানতেন। তা সত্ত্বেও বিমানে উঠে এমন কাণ্ড কী ভাবে ঘটালেন!

আগেও পুলি‌শকর্মীর উপর চড়াও হওয়া এবং তাঁকে চড় মারার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন, সে নিয়ে বিস্তর বিতর্কও সয়েছেন। কিন্তু দোলা সেন যে দোলা সেনেই রয়েছেন, বদলাননি একটুও, তা আবার তিনি বুঝিয়ে দিলেন। উড়ানের কর্মীদের সঙ্গে এক সাংসদের অভব্য আচরণ এবং অসহযোগিতার অভিযোগকে ঘিরে গোটা ভারতের রাজনীতিতেই গুঞ্জন চলছে এখন। শিবসেনার ওই সাংসদ রবীন্দ্র গায়কোয়াড় বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচিত হয়েছেন, উড়ান সংস্থার সঙ্গে তাঁর টানাপড়েনও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তার মাঝেই তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন খানিকটা একই রকম কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন! বিস্ময়টা এখানেই। শিবসেনা সাংসদকে নিয়ে বিতর্ক যে কারণে, বিতর্ক চলাকালীনই প্রায় একই রকম কাণ্ড কী ভাবে ঘটালেন দোলা? দু’টি ব্যাখ্যা থাকতে পারে। হয়তো দোলা জানতেনই না রবীন্দ্র গায়কোয়াড়কে নিয়ে কী বিতর্ক চলছে এবং কেন চলছে, জানলে নিশ্চয়ই সতর্ক থাকতেন— কেউ এমন দাবি করতেই পারেন। কিন্তু চপ্পল-কাণ্ডের পর রবীন্দ্র গায়কোয়াড় গোটা দেশে এখন এতই পরিচিত নাম যে দোলা সেন তাঁর কীর্তির কথা জানতেন না, অতি বড় তৃণমূল সমর্থকও সম্ভবত এমন সাফাই দেবেন না। অতএব, ধরে নিতে হবে, দোলা সেন সব জানতেন এবং তা সত্ত্বেও তিনি গোলমাল পাকিয়েছেন। তাই যদি হয়, তা হলে বলতে হচ্ছে যে জাতীয় আইনসভার সদস্য হওয়া সত্ত্বেও দেশের প্রচলিত আইন-কানুন বা বিধি-বন্দোবস্তের প্রতি দোলা সেনের শ্রদ্ধা নেই। আইন হাতে তুলে নেওয়াকে তিনি অধিকার বলেই ভাবেন।

Advertisement

দোলা সেন এবং তাঁর মতো মানসিকতার সাংসদদের এই ভাবনা যে ঔদ্ধত্য-জনিত, সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাঁর মতো আইন-প্রণেতারা নিজেদের দলের মাথা হেঁট করার পাশাপাশি ভারতীয় গণতন্ত্রের মাথাও যে হেঁট করিয়ে দেন, সে নিয়েও সংশয় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন