বিচারের সর্বোচ্চ পীঠ জানাল, এ বিবাদের মীমাংসা বিচারসভার বাইরে হওয়াই ভাল। রাম জন্মভূমি, নাকি বাবরি মসজিদ? বিবাদ ঝুলে আড়াই দশক প্রায়। কিন্তু শেষ কথাটা বলতে চাইল না দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আলোচনায় যদি মেলে সমাধান, সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার— পর্যবেক্ষণ স্বয়ং প্রধান বিচারপতির।
অযোধ্যার বিতর্কিত কাঠামো কার, আলোচনা তথা মধ্যস্থতায় সে প্রশ্নের জবাবে পৌঁছনোর প্রস্তাবনা কিন্তু এই প্রথম নয়। প্রস্তাব এসেছে আগেও, বৈঠক হয়েছে, আলোচনা চলেছে। কিন্তু রফা অধরাই থেকে গিয়েছে বার বার। আলোচনা বা মধ্যস্থতার নানা স্তর পেরিয়েই শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট। ইলাহাবাদ হাইকোর্ট রায়ও দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে সে রায় স্থগিত হয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত ফের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার পরামর্শ এসেছে।
খুব অসময়ে এই পরামর্শটা এল। বিতর্কিত বিষয় নিয়ে দু’পক্ষে ফলপ্রসূ আলোচনা তখনই সম্ভব, যখন দু’পক্ষের অবস্থানই অভিন্ন সমতলে। সেই অভিন্নতা মুছে যেতে শুরু করেছিল নব্বই-এর দশকের শুরু থেকেই। মেরুকরণের ক্ষেত্র ক্রমশ প্রসারিত হতে শুরু করেছিল সেই সময় থেকেই। আজ বিজেপির তুমুল জয়ধ্বনি দেশজুড়ে, আজ নরেন্দ্র মোদীর মতো নেতা দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে, আজ যোগী আদিত্যনাথের মতো রাজনীতিক উত্তরপ্রদেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। মেরুকরণের ক্ষেত্র যে আজ আরও অনেক বেশি প্রসারিত, সে কথা উচ্চারণের প্রয়োজনই পড়ে না। এমন এক আবহে দু’পক্ষ অভিন্ন সমতলে দাঁড়িয়ে আলোচনায় অংশ নিতে সক্ষম, এ কথা মেনে নেওয়া কঠিন।
মন্দির-মসজিদের এই বিবাদ যত কম প্রলম্বিত হয়, ততই যে মঙ্গল, তা নিয়ে সংশয় নিশ্চয়ই কারওরই নেই। কিন্তু আদালতের বাইরে এই বিবাদ মিটিয়ে নেওয়ার যত রকম পন্থা রয়েছে, সেই সব রকমের পন্থাতেই এই বিবাদ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এই কথাটা মাথায় রাখা উচিত ছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালতের। কারণ রাম জন্মভূমি আর বাবরি মসজিদের মধ্যে চলতে থাকা টানাপড়েন আরও প্রলম্বিত হলে লাভ শুধু মেরুকরণের কারবারিদেরই, আর কারও নয়।