সম্পাদকীয় ২

আত্মপ্রত্যয়ের লক্ষণ

ধূ‌ম্রাৎ বহ্নি। প্রাচীন ন্যায়শাস্ত্র মানিয়া চলিলে মানিতেই হয় যে চিনের বিদেশমন্ত্রক যে ভঙ্গিতে ভারতকে সতর্কবার্তা শুনাইয়াছে, চিনের প্রচারমাধ্যম যে ভাবে মোদীর তীব্র সমালোচনায় মুখর, তাহা অকারণ নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share:

ধূ‌ম্রাৎ বহ্নি। প্রাচীন ন্যায়শাস্ত্র মানিয়া চলিলে মানিতেই হয় যে চিনের বিদেশমন্ত্রক যে ভঙ্গিতে ভারতকে সতর্কবার্তা শুনাইয়াছে, চিনের প্রচারমাধ্যম যে ভাবে মোদীর তীব্র সমালোচনায় মুখর, তাহা অকারণ নহে। নরেন্দ্র মোদীর ভারত যে ভাবে তিব্বত প্রশ্নটিকে (এবং সেই সূত্রে চিন প্রশ্নটিকে) দেখিতেছে, আগেকার ভারতের সহিত তাহার তফাত আছে। অরুণাচল প্রদেশে দলাই লামাকে যাইবার অনুমতি দিয়া মোদীর ভারত নিশ্চিত ভাবে কূটনৈতিক সাহসিকতার পরিচয় দিয়াছে। দুই বৎসর আগেও প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই সিদ্ধান্ত লইত কি না সন্দেহ। চিনকে না চটাইবার ভাবনাটি তখন অনেক জোরালো ছিল ভারতের কূটনীতিতে। পরিস্থিতি পাল্টাইয়াছে। চিন ইতিমধ্যে এতগুলি বিষয়ে ভারতকে বিরক্ত ও বিব্রত করিয়াছে যে ভারতের দিক হইতেও কূটনৈতিক সাহস দেখাইবার বাধা কমিয়াছে। এখানেই পরিবর্তন। চিনের আস্ফালনও তাহাই প্রমাণ করে। সফর চলাকালীন কড়া বার্তাতেই তাহাদের ক্ষোভ মিটে নাই, সফর শেষ হইবার পরও কার্যত নজিরবিহীন অবস্থান লইল চিন। দলাই লামাকে অরুণাচল প্রদেশে যাইবার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ভারত ও চিনের সীমান্ত-বিতর্কে আলোচনার পথে সমাধানের সম্ভাবনা কমাইবে, কতিপয় ভারতীয় রাজনীতিক চিনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য করিয়াছেন— চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্রের মুখে এই সব শুনিলেই বোঝা যায়, চিনের দাদাগিরি কতটাই মাত্রাছাড়া। ভারত যে ভয়ে টলিয়া যায় নাই, তিব্বত এবং দলাই লামা বিষয়ে চিনের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার সামনে কাঁটা হয় নাই, ইহা প্রশংসাযোগ্য।

Advertisement

বাড়াবাড়ি না করিয়া আত্মপ্রত্যয়ে স্থিত থাকিবার মধ্যে যে সম্মান, তাহাই এই সিদ্ধান্তে পরিস্ফুট। দলাই লামাকে অরুণাচলে যাইবার অনুমতি দিয়া ভারত এমন কিছু করে নাই যাহা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে আপত্তিকর। অরুণাচল সার্বভৌম ভারতের অঙ্গরাজ্য, চিনারা যতই সে রাজ্যে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করুক না কেন। দেশের ভিতর কে কোথায় যাইবার অনুমতি পাইবেন, তাহা একান্ত ভারতের নিজস্ব বিবেচনা। চিনের তর্জনগর্জন আন্তর্জাতিক স্তরে কলিকা পাইবে না। সম্প্রতি চিন পাকিস্তান ইকনমিক করিডর লইয়া ভারতের আপত্তিতে কেহ কর্ণপাত করে নাই, সুতরাং চিনের আপত্তিতেই বা ভারতকে কান দিতে হইবে কেন।

গত কয়েক বৎসরে চিন যে ভাবে চলিতেছে, বিশেষত দক্ষিণ চিন সমুদ্রে যে আগ্রাসী মনোভাব দেখাইতেছে, তাহাতে এমনিতেই এখন তাহার প্রতি আন্তর্জাতিক মনোভাব বেশ কঠোর। কেবল পাকিস্তান নামক বন্ধুর উপর ভর করিয়া এবং অন্য সব দেশের স্ট্র্যাটেজিক সমর্থন ও অর্থনৈতিক প্রলোভনের গাজর দেখাইয়া আগ্রাসী কূটনীতির খেলা খেলিয়া আন্তর্জাতিক মিত্রতা আদায় করা কঠিন। ভারত সেই দিক হইতে এমনিতেই কয়েক পা আগাইয়া। তিব্বত লইয়া আজ পর্যন্ত ভারত এমন কিছু করে নাই যাহা কূটনীতির নিয়মমতে আপত্তিকর হইতে পারে। এ দেশের বহু স্থানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস, এবং তাঁহাদের বহু গোষ্ঠীর কাছেই দলাই লামা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগুরু। তিব্বতি স্বশাসনের বিপ্লবী হিসাবে তিনি ভারত ভ্রমণ করিতেছেন না, ধর্মগুরু হিসাবেই করিতেছেন। অন্তত এই ক্ষেত্রে কুযুক্তির ফাঁদে ভারতকে কাবু করা চিনের পক্ষে কঠিন, প্রায় অসম্ভব।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন