নিশ্চিত বিপর্যয়

নূতন তথ্য বটে। এ-যাবৎকাল বলা হইত, উষ্ণায়নের কারণে হিমবাহ গলিবে, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাইবে, উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি সমুদ্রে নিমজ্জিত হইবে। প্রভাবিত হইবে জলবায়ুও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০০:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

তিন কোটি চল্লিশ লক্ষ চাকুরি খোয়াইতে চলিয়াছে ভারত। সময়, মাত্র এগারো বৎসর। প্রবল অর্থনৈতিক মন্দা নহে, কারণটি বিশ্ব উষ্ণায়ন। ‘দি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজ়েশন’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্ব জুড়িয়া সর্বমোট কাজের সময় কমিবে বৎসরপ্রতি দুই শতাংশেরও অধিক হারে। উৎপাদনশীলতার দিক হইতে বলা যায়, শুধুমাত্র উষ্ণায়নের কারণেই বিশ্বে সম্মিলিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াইবে ২,৪০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার। হয় অত্যধিক গরমে কাজ করা অসম্ভব হইয়া পড়িবে, অথবা মানুষের কাজের গতি হ্রাস পাইবে। এবং বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হইবে ভারত। কৃষিক্ষেত্রে বিপুল প্রভাব পড়িবে তো বটেই, সঙ্কট ঘনাইবে নির্মাণশিল্পেও। কারণ, দুই ক্ষেত্রেই মূলত খোলা জায়গায় কাজ করিতে হয়। ফলে তাপজনিত অসুস্থতার শিকার হইবার সম্ভাবনাটিও অধিক।

Advertisement

নূতন তথ্য বটে। এ-যাবৎকাল বলা হইত, উষ্ণায়নের কারণে হিমবাহ গলিবে, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাইবে, উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি সমুদ্রে নিমজ্জিত হইবে। প্রভাবিত হইবে জলবায়ুও। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ক্রমান্বয় সাবধানবাণী সত্ত্বেও সেই প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হইবে, সাধারণ মানুষের ধারণা তত স্পষ্ট ছিল না। সেই ধারণা ক্রমে স্বচ্ছ হইতেছে। বিশ্বের সঙ্গে ভারতেও প্রতি বৎসর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাইতেছে, ঋতুচক্রে বিরাট পরিবর্তন ঘটিতেছে, এক রাজ্য বৃষ্টির অভাবে জলের জন্য হাহাকার করিতেছে, অন্য রাজ্যে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি বন্যা ডাকিয়া আনিতেছে— ইহা যে কোনও আশ্চর্য সমাপতন নহে, তাহা বোধগম্য হওয়া জরুরি। আন্তর্জাতিক স্তরে নেতারা যতই চুক্তি স্বাক্ষর করুন, উষ্ণায়নকে সম্পূর্ণ রোখা যাইবে না। রুখিতে হইলে বিশ্বকে শিল্পবিপ্লব-পূর্ববর্তী সময়ে ফিরিয়া যাইতে হয়। তাহা কার্যত অসম্ভব। হয়তো সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্বার গতিটিকে আটকানো যাইতে পারে, প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা, তাহা কিছু কম হইতে পারে। কিন্তু উষ্ণায়ন বন্ধ হইবে না। বরং, আগামী দিনে উষ্ণ, অসহনীয় এবং বিপর্যস্ত পৃথিবীই ভবিতব্য।

এবং সেই বিপর্যয় যে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নহে, অর্থনৈতিকও বটে, সাম্প্রতিক রিপোর্টটি তাহা স্পষ্ট করিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয় রুখিবার কৌশল মানুষের হাতে নাই, কিন্তু অর্থনৈতিক বিপর্যয় রুখিবার কৌশলটি আছে। তাহার জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা। নূতন পরিস্থিতিতে নীতিগুলি নির্মাণ করিতে হইবে আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি এবং পরিবেশ কল্যাণ— দুই দিককে সমান গুরুত্ব দিয়া। গরিবকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য জোগাইবার জন্য শুধুমাত্র কৃষককে অধিক চাষে উৎসাহিত করিলে চলিবে না। ভাবিতে হইবে, অধিক কৃষিকার্যে অধিক পরিমাণে সেচের জল প্রয়োজন। তাহাতে জলস্তর আরও দ্রুত নামিবে। সুতরাং, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ লইয়া এমন ফসল ফলাইতে হইবে, যাহাতে জল কম লাগে। অতিরিক্ত গরমে শ্রমিকের শ্রমদিবস নষ্ট হইলে, দৈনিক রোজগার যাহাতে না কমে, দৃষ্টি দিতে হইবে সেই দিকেও। শিল্পের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানেরও পূর্বে ভাবিতে হইবে তাহাতে পরিবেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে। উষ্ণায়নের ধোঁয়া এখন গৃহের অন্দরে। মূল আগুনটিকে রুখিবার দায়িত্ব সরকারের। সময় দ্রুত ফুরাইতেছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন