রোদ উঠতে অনেক দেরি, তবে মেঘটা বোধহয় সরছে

পাহাড়ের জন্য স্বাভাবিকতা খুঁজতে ২২ জুন সর্বদল বৈঠক ডাকছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব। শিলিগুড়িতে বৈঠক বসার কথা, পাহাড়ের সব দল ডাক পাচ্ছে, মোর্চাও পাচ্ছে। মাত্র কয়েক দিন আগেও কিন্তু এই নমনীয়তা দেখাচ্ছিল না প্রশাসন। সর্বদল বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই ছিল না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৪:৪১
Share:

গরুবাথানে মোর্চা সমর্থকদের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

মেঘটা সামান্য সরার ইঙ্গিত যেন। পাহাড়ি বাঁকটার ও পারে কী রয়েছে, দেখা যাচ্ছিল না একেবারেই। অশান্তির ঘন মেঘে পথটা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ছিল। সেই অবরোধ সামান্য ফিকে হয়ে আসার আভাস। প্রশাসন এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা— কোনও পক্ষই আগ্রহী ছিল না আলোচনায়। কিন্তু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে প্রশাসনই এ বার আলোচনার বার্তা দিল। পাহাড়ের অচলাবস্থা কাটাতে সর্বদল বৈঠকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল। আন্দোলনরত মোর্চা এখনও একবগ্গা যদিও। আলোচনায় এখনও অনীহাই দেখাচ্ছেন গুরুঙ্গরা। কিন্তু রবিবার পাহাড়ের পথে নামল যে মিছিল, তা থেকে পুলিশের দিকে আর ইট-পাথর উড়ে এল না। মৃত মোর্চা-কর্মীর দেহ কাঁধে নিয়ে মিছিল বলল, শান্তি চাই পাহাড়ে। প্রশাসনের নতুন অবস্থান এবং মোর্চার পরিবর্তিত মেজাজ যদি কোনও প্রবণতা হয়, তা হলে সে প্রবণতায় আগুন নিভে আসার আভাস রয়েছে।

Advertisement

পাহাড়ের জন্য স্বাভাবিকতা খুঁজতে ২২ জুন সর্বদল বৈঠক ডাকছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব। শিলিগুড়িতে বৈঠক বসার কথা, পাহাড়ের সব দল ডাক পাচ্ছে, মোর্চাও পাচ্ছে।

মাত্র কয়েক দিন আগেও কিন্তু এই নমনীয়তা দেখাচ্ছিল না প্রশাসন। সর্বদল বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই ছিল না। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব আসছিল কোনও কোনও শিবির থেকে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই তা খারিজ করে দিচ্ছিলেন।

Advertisement

বিমল গুরুঙ্গ-রোশন গিরিরা পাল্টা বেপরোয়া হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন পাহাড়ের পথে-পথে, অলিতে-গলিতে। প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ধুলিসাৎ করার চেষ্টা চলছিল, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে অবর্ণনীয় সঙ্ঘাত চলছিল।

এই সঙ্ঘাতের কোনও শেষ যে নেই, অপরিসীম অনিশ্চয়তা আর নিশ্চিত রক্তপাত-প্রাণহানিই যে সঙ্গী হয়ে উঠতে চলেছে, সে কথা বুঝে নেওয়ার দরকার ছিল অভ্রান্ত ভাবে। বিলম্বে হলেও সে বোধোদয় কিঞ্চিৎ সম্ভবত হয়েছে দুই শিবিরেই। তাই এক দিকে সর্বদলের প্রয়াস শুরু। অন্য দিকে ইটবৃষ্টি, হামলা, অগ্নিসংযোগ থামিয়ে শান্তির দাবিতে পথে নামা।

পাহাড়ে শান্তি ফিরুক যত শীঘ্র সম্ভব, ফিরুক স্বাভাবিকতা— কাম্য অবশ্যই এমনই। ঘটনা পরম্পরার গতিপ্রকৃতি আশা জাগাতে শুরু করেছে সবেমাত্র। উপযুক্ত সতর্কতা এবং পরিমিত পদক্ষেপ গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে নির্বিঘ্নে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই উচিত নিজের নিজের ভাগের দায়িত্বটুকু যথাযথ বুঝে নেওয়া।

রাজ্য সরকার আলোচনার ডাক দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছে, আলোচনাই পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর একমাত্র পথ এবং আলোচনায় বসতেই হবে। বল তাই এ বার মোর্চার কোর্টেই। বিমল গুরুঙ্গরা বুঝতে পারছেন আশা করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন