Editorial News

অপদার্থতা ঢাকতে এমন আস্ফালন সঙ্কটে ফেলবে সংবিধানকে

যে কাণ্ড ইউআইডিএআই কর্তৃপক্ষ ঘটালেন তার দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমত, কর্তৃপক্ষ বুঝলেনই না যে, আরও নিশ্ছিদ্র করা প্রয়োজন আধার সংক্রান্ত তথ্যের ভাণ্ডারকে। দ্বিতীয়ত, কর্তৃপক্ষ সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫১
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

একুশে আইনের আদর্শ দৃষ্টান্ত বটে। যে সিন্দুককে নিশ্ছিদ্র এবং দুর্ভেদ্য বলে দাবি করছেন শাসক, সে সিন্দুক যে অত্যন্ত সহজেই খুলে ফেলা যায়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এক সাংবাদিক। প্রত্যাশিত ছিল, ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন শাসক এ বার। কিন্তু ঘটল অপ্রত্যাশিত কাণ্ড, যত রোষ গিয়ে পড়ল সাংবাদিকের উপরেই।

Advertisement

৫০০ টাকা খরচ করলেই ঢুকে পড়া যায় আধার তথ্য ভাণ্ডারে, হাতিয়ে নেওয়া যায় গোপনীয় তথ্য— দেখিয়ে দিয়েছিলেন সাংবাদিক। আধার কর্তৃপক্ষ ইউআইডিএআই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন। প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, চৌর্যবৃত্তি এবং আরও নানা অভিযোগ আনা হল। যাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত ছিল কর্তৃপক্ষের, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা! স্তম্ভিত হয়েছে গোটা দেশ।

যে কাণ্ড ইউআইডিএআই কর্তৃপক্ষ ঘটালেন তার দু’টি দিক রয়েছে। প্রথমত, কর্তৃপক্ষ বুঝলেনই না যে, আরও নিশ্ছিদ্র করা প্রয়োজন আধার সংক্রান্ত তথ্যের ভাণ্ডারকে। দ্বিতীয়ত, কর্তৃপক্ষ সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায়। মত প্রকাশের স্বাধীনতার যে মৌলিক অধিকার সংবিধান দিয়েছে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে, সেই মৌলিক অধিকারে আঘাত হানার চেষ্টা করলেন। সরকারি পদে থেকে ইউআইডিএআই-এর যে কর্তা এই কাণ্ড ঘটালেন, অভিযোগটা তাঁর বিরুদ্ধেই দায়ের হওয়া উচিত নয় কি?

Advertisement

এডিটরস গিল্ড তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে আধার কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া ফৌজদারি মামলা যাতে অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে গিল্ড। ইউআইডিএআই কর্তা এ বার বুঝছেন কি, কত বড় ভুল পদক্ষেপ করেছেন তিনি?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আধার সংক্রান্ত তথ্যের নিরাপত্তা কতখানি, তা নিয়ে দেশজোড়া বিতর্ক রয়েছে। আদালতও সে বিতর্ককে তথা সংশয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। জনসাধারণের সংশয় যখন কিছুতেই কাট‌ছে না, আর আধার কর্তৃপক্ষ যখন কোনও সংশয়কেই গুরুত্ব দিতে নারাজ, তখন সংবাদমাধ্যম সক্রিয় হল। জনসাধারণের সংশয় যে অমূলক নয়, সামান্য খরচেই যে হাতিয়ে নেওয়া যাচ্ছে আধার সংক্রান্ত গোপন তথ্য, তা দেখিয়ে দ‌েওয়া হল। ছিদ্রটা ঠিক কোথায়, গলদ রয়েছে কোন স্তরে, তা স্পষ্ট ভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হল। যে কাজ ইউআইডিএআই-এর করার কথা ছিল, সেই কাজটা সংবাদমাধ্যম করে দিল। সংবাদমাধ্যমের এই ভূমিকা যে জনস্বার্থেই, সে নিয়ে কোনও মহলেই সংশয় থাকার কথা নয়। প্রশাসনের উচিত ছিল, ত্রুটি মেনে নিয়ে তার সংশোধনে অবিলম্বে সক্রিয় হওয়া, আধার তথ্য ভাণ্ডারের সমস্ত্র রন্ধ্রপথ বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়া। কিন্তু ইউআইডিএআই-এর উপ-অধিকর্তা সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতেই সবচেয়ে বেশি সক্রিয়তা দেখালেন। ব্যর্থতা প্রকট হতেই আধার কর্তৃপক্ষের এই আস্ফালন আরও বেশি করে প্রকট করল অপদার্থতাকেই।

আরও পড়ুন
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এফআইআর আধার কর্তৃপক্ষের

এডিটর্স গিল্ড অভ্রান্ত অবস্থান নিয়েছে। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করেছে আধার কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের। সরাসরি মন্ত্রকের হস্তক্ষেপও চাওয়া হয়েছে। ইউআইডিএআই কর্তারা যে অত্যন্ত ভ্রান্ত পথ নিয়েছেন এবং গর্হিত পদক্ষেপ করেছেন, মন্ত্রক সে কথা যত দ্রুত বোঝে, ততই মঙ্গল। এক অপদার্থতা ঢাকতে আর এক অনৈতিক পদক্ষেপ কখনওই কাম্য নয়, তা মেনে নেওয়াও হবে না। সরকার সে কথা বুঝতে পারবে আশা করা যায়।

ইউআইডিএআই কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ করলেন, তা কিন্তু অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা। সরকার যদি অবিলম্বে রাশ না টানে এই প্রবণতায়, যদি প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে এই আস্ফালনের প্রবণতা বাড়তে দেওয়া হয়, অচিরেই সঙ্কটে পড়বে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন