সংবাদের রাজনীতি

ডিজিটাল মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর সরকারি নজরদারিকে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ আখ্যা দিয়াছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের বক্তব্য, যখন তখন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখিবার বিরুদ্ধে আইন আনিবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share:

গণমাধ্যম। প্রতীকী চিত্র।

ঘনকৃষ্ণ মেঘের চারিপাশে রজতরেখার আভাস। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা স্থান পাইয়াছে রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারে। কংগ্রেস এবং সিপিআইএম সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিপন্ন বলিয়া উদ্বেগ জানাইয়া তাহার মর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়াছে। সাংবাদিকের সামাজিক নিরাপত্তা লইয়া সরব হইয়াছে তৃণমূল কংগ্রেসও। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার এই সঙ্কল্প আশা জাগায়। সংবাদের সঙ্কট নূতন নহে। সংবাদপত্রের সূচনার সঙ্গে সঙ্গেই সাংবাদিকের বিপন্নতার সূচনা হইয়াছিল, জেমস অগস্টাস হিকির কারাদণ্ড তাহারই প্রমাণ। স্বাধীন ভারত জরুরি অবস্থায় তাহার কটু স্বাদ পাইয়াছে। কিন্তু এই জমানায় নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য ভয়াবহ ভাবে বিপন্ন। বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম এবং বৃহৎ সংবাদপত্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করিবার ধারাবাহিক চেষ্টা, সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করিয়া ভ্রান্ত সংবাদ বিদ্বেষ ও উদ্বেগ প্রচার, ভিন্ন স্বর ও ভিন্ন মত ক্রমাগত আক্রান্ত। কখনও নাগরিক, কখনও সংবাদমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করিয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্ত। নেতা বা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করিলে মানহানির মামলা হইয়াছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকের প্রতি কোনও দলই সদয় নহে, কিন্তু বাক্‌স্বাধীনতার এমন দুর্দিন ইতিহাসে বিরল। সঙ্কট এত তীব্র বলিয়াই প্রতিকারের অঙ্গীকার করিয়াছে একাধিক দল। বিজেপির ইস্তাহার অবশ্য এই বিষয়ে একটি বাক্যও ব্যয় করে নাই। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

Advertisement

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লইয়া নানা দলের নানা ভাবনা। সিপিআইএমের প্রতিশ্রুতি: দূরদর্শন, আকাশবাণীর উপর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হইবে, রাজ্যগুলির মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হইবে। ইন্টারনেটকে মুক্ত করিতে চাহে তৃণমূল কংগ্রেস। ডিজিটাল মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের উপর সরকারি নজরদারিকে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ আখ্যা দিয়াছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের বক্তব্য, যখন তখন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখিবার বিরুদ্ধে আইন আনিবে। আবার, সিপিআইএমের আগমার্কা প্রস্তাব: ইন্টারনেটকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ এবং বহুজাতিক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ হইতে বাঁচাইয়া ‘জনকেন্দ্রিক’ করা হইবে। তবে, লক্ষণীয়, সংবাদের রাশ সম্পূর্ণ সংবাদসংস্থার হাতে ছাড়িতে কেহই রাজি নহে। ‘স্বাধীনতার অপব্যবহার’ রুখিতে কংগ্রেস প্রেস কাউন্সিল আইনকে আরও পোক্ত করিবে, সিপিএম নূতন ‘মিডিয়া কাউন্সিল’ করিবে। মন্তব্য, আবারও, নিষ্প্রয়োজন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

কংগ্রেস ও সিপিআইএম, উভয় দলই সাংবাদিকের নিরাপত্তার অঙ্গীকার করিয়াছে। কংগ্রেস রাজ্যগুলির সহিত পরামর্শ করিয়া প্রয়োজনে কর্মরত সাংবাদিকদের পুলিশ-সুরক্ষা নিশ্চিত করিবার প্রয়োজনটিও উল্লেখ করিয়াছে। তৃণমূল কংগ্রেস মনে করাইয়াছে, পশ্চিমবঙ্গে সাংবাদিকদের পেনশন ও স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা হইয়াছে। সিপিআইএম আইন পরিবর্তন করিয়া কাজে নিরাপত্তা এবং বর্ধিত বেতনের ব্যবস্থা করিবে। এত আশ্বাসবাক্যে সাংবাদিক ভরসা পাইবেন কি? প্রাণ ও ক্যামেরা বাঁচাইয়া সাধারণ নির্বাচনের খবর করিতে পারিলে হয়তো তাহা চিন্তা করিবেন। তবে সংবাদের স্বাতন্ত্র্য, সাংবাদিকের মর্যাদা, এই সব বিষয় যে রাজনীতির প্রচারে গুরুত্ব পাইল, তাহা গণতন্ত্রের পক্ষে সুখবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন