গুরু মাহাত্ম্যের আবরণের আড়ালে হিন্দি ফিল্মে দেখা ভিলেনের চেয়েও কদর্য কাণ্ডকারখানা চালিয়ে এসেছে রাম রহিম। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্নটা এখন সর্বত্রই ঘুরছে। এ হেন যে ‘বাবা’ রাম রহিম, তাঁর এত কোটি ভক্ত হয় কী ভাবে? এবং ভক্তির মাত্রা এতই তীব্র যে, শহরে শহরে আগুন ছড়িয়ে দিতে এক নিমেষও লাগে না?
এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত বা আছে আজ থেকে পনেরো বছর আগে লেখা এক চিঠিতে। সেই চিঠির প্রতিটি ছত্র মর্মান্তিক, বস্তুতই শিউরে উঠতে হয় পড়লে। এক আশ্রমের দুর্ভেদ্য অন্দরমহল থেকে কোনও ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ওই চিঠি পাঠাতে পেরেছিলেন এক তরুণী। লিখেছিলেন, কী ভাবে রাতের পর রাত তিনি এবং তাঁরই মতো আরও অনেক তরুণী গুরুজির লালসার শিকার হচ্ছেন। হচ্ছেন ধর্মের নামে, পারিবারিক ভক্তির নামে এবং সামনে রাখা রিভলভারের নামে, ওই গুরুই বাবা রাম রহিম, শিষ্য তরুণীর গোটা পরিবারই। বছরের পর বছর এই কারবার চালিয়ে এসেছেন এই জালিয়াত, এই গুরুগিরিকে মূলধন করেই।
এই তরুণীর চিঠি মর্মান্তিক এই কারণেই যে, তাঁর উপর দিনের পর দিন এই অত্যাচারের বিবরণ বিশ্বাস করতে চায়নি তাঁর পরিবারও। বরং জুটেছিল ভর্ৎসনা এই অভিযোগ তোলার জন্য। অবিশ্বাসের পিছনে কোনও যুক্তি ছিল না, ছিল অপার বিশ্বাস। যে বিশ্বাসে মিলয়ে বস্তু। আর কে না জানে ভারতীয় সংস্কৃতি শেখায় এই বিশ্বাসেরই চর্চা, তর্কের নয়। বস্তুত সেই কারণেই এই গুরু ব্যবসায় লগ্নিও বিশেষ করতে হয়নি এই রাম রহিমকে, মূলধন ছড়ানো আছে এ ভারতের প্রান্তরে প্রান্তরে। এতএব এই গুরু মাহাত্ম্যের আবরণের আড়ালে হিন্দি ফিল্মে দেখা ভিলেনের চেয়েও কদর্য কাণ্ডকারখানা চালিয়ে এসেছে শুধু রাম রহিম নয়, এ দেশের অনেক বাবাজি। এবং গুরুমহিমার মোহজাল এমনই যে ভক্তসংখ্যা দিনে দিনে আরও বেড়ে ওঠে। সমানুপাতিক ভাবে বাড়ে রাজনৈতিক প্রভাবও।
অতএব দায় আছে আমাদেরও। কারণ আমরা ভুলে গিয়েছি, এ দেশের সংস্কৃতিতে তর্কেরও একটা যোগ্য স্থান ছিল। কোষ্টিপাথরে যাচাই করার প্রবণতাই হারিয়ে ফেলেছি আমরা তর্ককে দূরে সরিয়ে রাখার কারণে। এক সামূহিক বিশ্বাসে ভর করে গড্ডালিকা প্রবাহে নিয়ত প্রবহমান আমরা। তর্কের আবহ ফিরুক, যুক্তির চর্চা হোক। এই ভণ্ড গুরুদের দিন না হলে কোনও দিনও শেষ হবে না।