লন্ডন ডায়েরি

বাকিংহ্যামের ‘রয়াল কিচেন’

বাকিংহ্যাম প্যালেসের ‘রয়াল কিচেন’-এ সচরাচর ভারতীয় খাবারের দেখা মেলে না। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তিতে ‘ব্রিটেন-ভারত সংস্কৃতি বর্ষ’ উদ্‌যাপন হচ্ছে, সেখানে রানি আর ডিউক অব এডিনবরা-র দেওয়া পার্টিতে ভারতীয় খাবার থাকবে না, তা কি হয়!

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ০১:১৫
Share:

বাকিংহ্যাম প্যালেসের ‘রয়াল কিচেন’-এ সচরাচর ভারতীয় খাবারের দেখা মেলে না। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তিতে ‘ব্রিটেন-ভারত সংস্কৃতি বর্ষ’ উদ্‌যাপন হচ্ছে, সেখানে রানি আর ডিউক অব এডিনবরা-র দেওয়া পার্টিতে ভারতীয় খাবার থাকবে না, তা কি হয়! ‘বীরস্বামী’ রেস্তরাঁর প্রধান শেফ উদয় সালুঙ্খে ‘ক্যানপে’ (ছোট রুটি/পেস্ট্রি) বানাতে হাত লাগালেন রয়্যাল শেফ মার্ক ফ্লানাগান-এর সঙ্গে।

Advertisement

উপলক্ষ যখন ভারত, ‘বীরস্বামী’ তো দায়িত্ব পাবেই। লন্ডনের প্রাচীনতম ভারতীয় খানার এই রেস্তরাঁ ১৯২৬ সাল থেকে রিজেন্ট স্ট্রিট আলো করে আছে। চার্লি চ্যাপলিন, জওহরলাল নেহরুর প্রিয় রেস্তরাঁ। বেলজিয়ামের রাজা খুব ভালবাসতেন এখানকার ‘ডাক ভিন্ডালু’।

উৎসবের দিন সকালে ‘বীরস্বামী’র পাঁচ শেফকে সঙ্গে নিয়ে সালুঙ্খে গেলেন প্রাসাদে। রয়াল কিচেনের দশ জন তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন সেখানে। সমবেত তৎপরতায় তৈরি হল ৫০০০ ক্যানপে। সন্ধেয় অতিথিদের পরিবেশন করা হল। সালুঙ্খে-র রেসিপিতে ছিল ভারতীয়-ব্রিটিশ যুগলবন্দি: রাজ পুরি, পনির স্কোয়্যার ইন হার্ব ক্রাস্ট, তন্দুরি প্রন ককটেল, সয়া গুজিয়া, স্ট্রেন্‌ড ইয়োগার্ট কাবাব, আনারস-আমন্ড হালুয়া টার্ট, বুন্দি চকলেট রক। ব্রিটিশ মেনুতে ছিল স্মোকড স্যামন আর মিনিয়েচার ভেনিসন পাই।

Advertisement

প্রথম নয়

রয়াল কিচেনে ভারতীয় খানা অবশ্য এই প্রথম নয়। একশো বছর আগে উইন্ডসর কাসল আর অসবোর্ন হাউস-এর প্রাসাদে মহারানি ভিক্টোরিয়া ‘ইন্ডিয়ান কারি’ রাঁধতে বলেছিলেন। ১৮৮৭ সালে রানির সিংহাসন প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতীয় খাবার রেঁধেছিলেন আবদুল করিম। করিম ভারত থেকেই গিয়েছিলেন রানির খাওয়াদাওয়া দেখভালের জন্য। ক্রমে হয়ে উঠেছিলেন রানির সচিব, শিক্ষক, সুবন্ধুও। রানি খুব ভালবাসতেন চিকেন কারি আর ডাল।

রাজসূয়: বাকিংহাম প্যালেসের রয়াল কিচেনে প্রস্তুতিপর্বে উদয় সালুঙ্খে

‘সুকন্যা’

রবিশঙ্কর ‘সুকন্যা’ নামে অপেরা লিখে গিয়েছিলেন, তার প্রযোজনা নিয়ে অনুষ্কা শঙ্কর ব্যস্ত। ‘সুকন্যা’-র গল্প মহাভারতের। রবিশঙ্করের মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধু ডেভিড মারফি আর অনুষ্কা মিলে লেখা শেষ করেছেন। প্রযোজনায় রয়াল অপেরা হাউস। লন্ডন ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার ৬০ শিল্পীর বৃন্দবাদন কন্ডাক্ট করবেন ডেভিড নিজে। লিব্রেটো লিখেছেন অমিত চৌধুরী, পরিচালক লেস্টার-নিবাসী শুভ দাস। সোপ্রানো সুসান হারেল-এর সঙ্গে গাইবেন বিবিসি-র গায়করা।

রানিগিরি: তাঁর ভারতীয় পরিচারকদের সঙ্গে রানি ভিক্টোরিয়া

স্মৃতির ছবি

ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট ঘোষণা করেছে, বছরভর নতুন ও পুরনো ভারতীয় ছবি দেখাবে, আর প্রতি মাসে বিএফআই সাউথব্যাঙ্ক-এ হবে একটা করে বলিউড-ছবির প্রিমিয়ারও। এই মরসুমে বিএফআই আর্কাইভের ছবিগুলো ডিজিটাইজ্‌ডও হবে। হ্যান্ডহেল্ড মুভি ক্যামেরায় ব্রিটিশদের তোলা এই ছবিগুলোতে বিশ শতকের শুরুর ভারতবর্ষের জনজীবন ধরা আছে। ৭৫ বা ৩৫ মিলিমিটারে তোলা ছবিগুলোকে বিএফআই-এর প্রধান কিউরেটর রবিন বেকার বিস্মৃতি সরিয়ে তুলে এনেছেন। ভারতে তোলা প্রথম যে ছবিটা পাওয়া গিয়েছে, সেটা ১৮৯৯ সালের। নৌকো থেকে তোলা, বারাণসীর ঘাটগুলোর শট আছে তাতে। ১৮৮৯-১৯৪৭, এই সময়ের ৩০০ ছবি ডিজিটাইজড হবে, দেখানোর ব্যবস্থাও করা হবে ভারতে ও ব্রিটেনে। অনেকগুলো ছবিই রঙিন! ছবিতে ধরা আছে ১৯১৩-র কলকাতা, ১৯৩৪-এর দার্জিলিংগামী ট্রেন, রাজস্থানের বাজার, দক্ষিণ ভারতে মন্দিরের বাইরে নাচনিদের নাচ, কত কিছু!

সারা বছর ধরেই ভারত নিয়ে আছে নানা অনুষ্ঠান। সায়েন্স মিউজিয়াম থেকে ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ব্রিটিশ লাইব্রেরি— আয়োজক-তালিকা সুদীর্ঘ।

শ্রাবণী বসু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন