Bengali News

ইমরান খানকে দেখে করুণা হবে কিছু দিন পরে

৪৭ বছর বয়সী এই খ্রিস্টান মহিলাকে মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর আইনজীবী সইফুল মুলুককেও নিশানা করেছে কট্টরপন্থী রাজনৈতিক ও জঙ্গি সংগঠনগুলি। শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচাতে শনিবার সকালেই দেশ ছাড়লেন তিনি।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ইমরান, তার বিপ্রতীপ দিশাতেই হাঁটছেন তিনি। ফাইল চিত্র।

আজ থেকে কিছু মাস আগে ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। তখনও তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার। ইমরান খান তখন বার বার একটাই কথা বলছিলেন— নতুন পাকিস্তান বানাব। কখনও পাকিস্তানের মাঠে-ময়দানে সে কথা বলছিলেন তিনি, কখনও বলছিলেন গণমাধ্যমের সামনে। তার পর এক মহাবিতর্কিত নির্বাচনে, সেনার প্রত্যক্ষ মদতে ভোটগ্রহণে অবাধ কারচুপির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল ইমরানের তেহরিক। ১৮ অগস্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ইমরান খান। আড়াই মাস কাটতে না কাটতেই স্পষ্ট হয়ে গেল ইমরানের প্রতিশ্রুত ‘নতুন পাকিস্তান’-এর চেহারাটা ঠিক কেমন। স্পষ্ট হয়ে গেল, যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ইমরান, তার বিপ্রতীপ দিশাতেই হাঁটছেন তিনি।

Advertisement

অক্সফোর্ড ফেরত ইমরান খান, বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার ইমরান খান, বিশ্ব নাগরিক ইমরান খান— পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আগে এ ভাবেই চিনত পৃথিবী। সমাজের সর্বাপেক্ষা আলোকপ্রাপ্ত অংশটার প্রতিনিধি হিসেবেই পরিচিতি ছিল ইমরানের। রাজনীতির স্বার্থে যত আপোসই করুন না কেন, ইমরানের সামাজিক অবস্থান প্রদত্ত শিক্ষা তাঁর শাসনকালকে খানিকটা ইতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করবেই— এমন বিশ্বাস ছিল অনেকেরই। ইমরান খানকে ধন্যবাদ, তিনি বিশ্বাসের সঙ্গে বেশি দিন প্রতারণা করলেন না। বিশ্ব যা আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রী ইমরানের কাছ থেকে, তার ঠিক উল্টোটাই যে ঘটবে, এটা বুঝিয়ে দিতে ইমরান খুব একটা দেরি করলেন না।

পাকিস্তানের কুখ্যাত ধর্মদ্রোহিতা আইনে মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়েছিল এক খ্রিস্টান মহিলার। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট শেষ পর্যন্ত দণ্ড বাতিল করে দিয়েছে। খ্রিস্টান মহিলা নির্দোষ বলে সুপ্রিম কোর্টে রায় দিয়েছে। এতেই উত্তাল হয়ে গিয়েছে গোটা পাকিস্তান। বিভিন্ন কট্টরবাদী সংগঠন এবং জঙ্গি সংগঠন দখল নিয়েছে গোটা পাকিস্তানের। রাস্তাঘাট, পরিবহণ, অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়— সবই প্রায় বিপর্যস্ত। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিরপরাধ প্রমাণিত হওয়া খ্রিস্টান মহিলার ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে। যে আইনজীবী ওই খ্রিস্টান মহিলার হয়ে আদালতে লড়লেন, কট্টরবাদীদের রোষানলে তিনিও। আইনজীবীরও ফাঁসি হোক, এমন দাবি উঠে গেল পাকিস্তানে। বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন তিনি।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটা রায় দিয়েছে। কিন্তু কট্টরবাদী এবং উগ্রপন্থীদের গ্রাসে চলে যাওয়া পাকিস্তান নিজের দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে মানতেও আজ রাজি নয়। অতএব গোটা পাকিস্তানে অশান্তির আবহ। কট্টরবাদীদের রোষে পড়া আইনজীবী পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য হলেন। আর এই গোটা অশান্তির নেতৃত্বে ইমরানের দলের শরিক তেহরিক-ই-লাবায়িক।

সরকারের শরিক দল প্রকাশ্যে ময়দানে নেমেছে, আসিয়া বিবির ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছে। এই বিক্ষোভ গণতান্ত্রিক পথে চলছে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কট্টরবাদীদের দাবিদাওয়ার সামনে অনায়াসে আত্মসমর্পণ করেছেন। পাকিস্তানের ছবিটা অনেকটা এই রকমই এখন। সরকারের শরিককে চটাতে চান না ইমরান। কট্টরবাদীরা বা উগ্রবাদীরা রুষ্ট হোক, এমন কিছু চান না তিনি। বিবেচক এবং প্রগতিশীল জনমত রুষ্ট হল কি না তা নিয়ে ইমরানের ভাবনা কম বরং।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ফের কট্টরপন্থীদের দাপট, প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগী আসিয়া বিবির আইনজীবী

ইমরান খানকে দেখে আজ হাসি পায়। রাজনীতির স্বার্থে নিজেকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করতেও ইমরান খান দ্বিধা করলেন না। বহু চর্চিত আসিয়া বিবি মামলায় কট্টরবাদীদের যাবতীয় দাবিদাওয়া মেনে নিলে গোটা বিশ্বে যে তিনি সমালোচিত হবেন, এ সবে ইমরান খানের আর কিছু যায়-আসে না। তিনি কী ভাবে নির্বাচনে জিতেছেন, তা নিয়ে নানা বিরূপ আলোচনা হয়। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি যা যা করছেন, এ বার তা নিয়েও বিরূপ আলোচনা শুরু হয়ে গেল। কিন্তু ইমরান ভুল করছেন, মারাত্মক ভুল। কট্টরবাদ বা উগ্রবাদ প্রশ্রয় পেলে প্রশমিত হয় না, তা আরও বেড়ে যায়। গোটা পাকিস্তানে অন্ধ কট্টরবাদীদের ভয়াবহ দাপট দেখেও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার মোকাবিলার চেষ্টা করলেন না। অসহায়ের মতো আচরণ করে কট্টরবাদীদের সঙ্গে সমঝোতা করলেন। ইমরান হয়তো ভাবছেন, এই সমঝোতা তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়াবে। ইমরান ভাবতে পারছেন না যে, যাঁদের সঙ্গে আজ তিনি সমঝোতা করলেন, সেই শক্তি কাল থেকেই গোটা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার উদগ্র চেষ্টা শুরু করে দেবে।

ইমরান খানকে দেখে হাসি পাচ্ছে বলেছিলাম। ভবিষ্যতের দিকে একটু তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, এ হাসি মিলিয়ে যেতে সময় লাগবে না। যে পথে ইমরান খান পা বাড়ালেন আজ, তাতে অচিরেই ইমরান খানকে দেখে করুণা হবে। শুধু নিজেকে নয়, পাকিস্তানকেও বিপন্ন করে তুলছেন সে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন