দাদাগিরি

পশ্চিমি মিত্রদের সহায়তা প্রার্থনা করিয়াছে ইউক্রেন। ইদানীং আন্তর্জাতিক সঙ্কটে পশ্চিমি প্রতিক্রিয়া যথোপযুক্ত নহে। বস্তুত, ইউরোপের দেশগুলি অভ্যন্তরীণ সঙ্কট লইয়া এত ব্যতিব্যস্ত যে, রাশিয়াকে ভর্ৎসনা করিবার সময় তাহাদের নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩০
Share:

ইউক্রেনের রাস্তায় রুশবিরোধী মিছিল। ছবি: এএফপি।

পুরাতন সঙ্কট ফের পাকাইয়া উঠিল। চার বৎসর পূর্বে ক্রাইমিয়া অধিকারের পর হইতেই রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব অহর্নিশ। মে মাসে কার্চ প্রণালীর উপর সেতু চালু হইবার পরে তাহা জটিলতর হয়। নভেম্বরের শেষে কিয়েভের তিনটি জাহাজ ও চব্বিশ জন নৌসেনাকে আটকের অভিযোগ উঠে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণের ‘মোকাবিলা’য় দেশে সামরিক শাসন জারি করিয়াছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাল্টা হুঙ্কার: ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির প্রস্তুতি’ লউক ইউক্রেন। তবে দুই প্রতিবেশীর চাপানউতোরের ইতিবৃত্ত ইতিহাসের গর্ভে নিহিত। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে রুশ সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট দ্বারা কোসাক হেটমানেট আক্রান্ত হইবার পর সঙ্কটের উদ্ভব। অক্টোবর বিপ্লবের পর তাহা শিথিল হইলেও পুনরায় উপনিবেশ গড়িতে পাঁচ বৎসর সময় নেয় সোভিয়েত। ১৯৯১ সালে সঙ্কট দূরীভূত হইলেও সাম্প্রতিক অতীত জানাইয়াছে, উহা চিরস্থায়ী নহে। আধুনিক রাশিয়া প্রথম বার কোনও রূপ ‘ছায়া’ ব্যবহার না করিয়া সরাসরি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বাহিনী প্রেরণের সত্যতা মানিয়া লইয়াছে ক্রেমলিন। তবে ক্ষমতার টানাপড়েনে ধর্মীয় প্রেক্ষাপটটিও গণ্য করিতে হয়। সম্প্রতি রুশ অর্থোডক্স চার্চের ছত্র হইতে স্বতন্ত্র হইয়াছে ইউক্রেনের চার্চ। সুতরাং, জ্যেষ্ঠের মুষ্টি ক্রমশ আলগা হইবার আশঙ্কা অমূলক নহে।

Advertisement

এমতাবস্থায়, পশ্চিমি মিত্রদের সহায়তা প্রার্থনা করিয়াছে ইউক্রেন। ইদানীং আন্তর্জাতিক সঙ্কটে পশ্চিমি প্রতিক্রিয়া যথোপযুক্ত নহে। বস্তুত, ইউরোপের দেশগুলি অভ্যন্তরীণ সঙ্কট লইয়া এত ব্যতিব্যস্ত যে, রাশিয়াকে ভর্ৎসনা করিবার সময় তাহাদের নাই। অনুমান করা চলে, তাহাদের নিকট কিছুই আর ব্রেক্সিট অপেক্ষা অধিক গুরুত্ব পাইতেছে না। এমনকী, রাশিয়ার সমালোচক আঙ্গেলা মের্কেলও পুতিনের সহিত আলাপচারিতায় সংঘর্ষের প্রতিবাদ করেন নাই। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনের সহিত বৈঠকে গররাজি হইয়া জানাইয়াছেন, মুক্তি দিতে হইবে জাহাজ ও নৌসেনাদের। তবে মূল সঙ্কট ক্রাইমিয়া লইয়া যে হেতু বারাক ওবামার স্কন্ধেই দোষের ভার ন্যস্ত করেন তিনি, অতএব রাশিয়ার অন্যায্য পদক্ষেপে ট্রাম্প কিঞ্চিৎ একদেশদর্শী হইবেন, ইহা স্বাভাবিক। সেই অনুসারে বর্তমান সঙ্কটে কেবল অনুশোচনা প্রকাশ করিয়া ‘উভয়ত’ দোষের তত্ত্ব খাড়া করিয়াছেন ট্রাম্প। সুতরাং, পুতিনের পক্ষে সময়টি সুসঙ্গত। আসন্ন নির্বাচনে ইউক্রেনে মসৃণ ক্ষমতার হস্তান্তর হইবার সম্ভাবনা। উহাতে পুতিনের লাভ নাই। ক্রাইমিয়া দখল জনপ্রিয়তার যে শৃঙ্গে তাঁহাকে আসীন করিয়াছিল, বয়স্কদের ভাতা সংস্কারে অবরোহণের পথে তিনি। চাকা ঘুরাইতে গেলে সীমান্তে ‘সঙ্কট’ ঘনাইয়া তোলা তাঁহার নিকট আবশ্যক। ধুরন্ধর রাজনীতিক পুতিন তবেই মসিহা হইয়া উঠিবেন। বিপ্রতীপে, মৎস্য উল্টাইয়া ভক্ষণ করিতে বিলক্ষণ জানে ইউক্রেনও। উত্তেজনার আঁচ বাড়াইতে ষোলো হইতে ষাট বৎসর বয়সি রুশ নাগরিকদের আপন দেশে প্রবেশের অধিকার রদ করিয়াছে ইউক্রেন। অতএব, রাজনীতির স্বার্থেই সঙ্কট মিটিবার নহে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সুযোগসন্ধান এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবহেলার দ্বৈত রথে সওয়ার হইয়া আগুয়ান হইবে দুই দেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন