একমত

এপ্রিলের গোড়ায় রেপো রেট (রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নিকট কোনও ব্যাঙ্ক ধার লইলে যে হারে সুদ মিটাইতে হয়) ৬.২৫ শতাংশ হইতে কমাইয়া ৬ শতাংশ করিবার সিদ্ধান্তটিও সেই ধারার অনুসারী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share:

ভারতের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আপন স্বাধীনতা কত দূর বজায় রাখিতে পারিবে, নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে সেই প্রশ্ন কেবল ওঠে নাই, ইতিমধ্যে পুরানো হইয়াছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সচিব হিসাবে দিনের পর দিন মোদী-কৃত নোট বাতিলের অভিঘাতে ক্রমাগত সংশোধিত হইতে থাকা বিবিধ নিয়মকানুন ব্যাখ্যা করিবার দায়িত্ব পালনের পরে শক্তিকান্ত দাস যখন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলের ‘অকস্মাৎ’ ছাড়িয়া যাওয়া আসনে অধিষ্ঠিত হন, দিকে দিকে আশঙ্কার বার্তা রটিয়াছিল— তিনি পূর্বাশ্রমের অভ্যাসই অনুসরণ করিয়া চলিবেন, অর্থাৎ নূতন আশ্রমেও সরকারের ইচ্ছা পূরণে ব্রতী থাকিবেন, সুতরাং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্বক্ষমতা খর্বিত হইবে, এমনকি বিনষ্টও হইতে পারে। সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হইয়াছে, এমন কথা বলিলে তাঁহার প্রতি অবিচার হইবে। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণারও সময় আসে নাই যে, তিনি আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করিয়া সরকারি আধিপত্যের গ্রাস হইতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বাধীনতাকে রক্ষা করিয়াছেন। এ যাবৎ নর্থ ব্লকের সহিত মিন্ট স্ট্রিটের বড় বিরোধের নূতন কোনও কারণ ঘটে নাই, সুতরাং শক্তিকান্ত দাসের জমানায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতার যথার্থ কোনও পরীক্ষাও হয় নাই।

Advertisement

এপ্রিলের গোড়ায় রেপো রেট (রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নিকট কোনও ব্যাঙ্ক ধার লইলে যে হারে সুদ মিটাইতে হয়) ৬.২৫ শতাংশ হইতে কমাইয়া ৬ শতাংশ করিবার সিদ্ধান্তটিও সেই ধারার অনুসারী। ফেব্রুয়ারিতেও রেপো রেট কমিয়াছিল সমপরিমাণে। আপাতবিচারে কেহ এই দুই সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব খুঁজিতে পারেন। অনেক দিন যাবৎ অর্থ মন্ত্রক সুদের হার কমাইবার পক্ষে সওয়াল করিয়া আসিতেছিল, কারণ সুদ কমিলে বিনিয়োগ তথা চাহিদা উৎসাহিত হইবার সম্ভাবনা, তাহাতে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। কিন্তু রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সহজে সুদ কমাইতে চাহে না, কারণ তাহা আবার— ওই চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমেই— মূল্যবৃদ্ধিতে উৎসাহ দিতে পারে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পর পর দুই বার সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত কি সরকারি প্রভাবের প্রমাণ নহে?

দুইটি কারণে তাহা বলা কঠিন। এক, রেপো রেট সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত একা কেহ স্থির করেন না, স্থির করে একটি কমিটি, গভর্নর তাহার অন্যতম সদস্য। এবং সেই কমিটি এ যাত্রা ৪-২ ভোটে সুদের হার কমাইবার সিদ্ধান্ত করিয়াছে। তবে এই যুক্তি ঈষৎ দুর্বল, কারণ ভোটদাতাদের উপর সরকারি প্রভাব বিস্তার করিয়া মনোমত ভোটের ফল আদায় করার চেষ্টা, অবাঞ্ছিত হইলেও, অসম্ভব নহে। দ্বিতীয় যুক্তিটি প্রবলতর। তাহা অর্থনৈতিক বাস্তবতার যুক্তি। মূল্যবৃদ্ধির হার এখন কম, এবং অন্তত আগামী ছয় মাসে তাহা তিন হইতে সাড়ে তিন শতাংশের বলয়ে সীমিত থাকাই প্রত্যাশিত। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চার শতাংশ অবধি মূল্যবৃদ্ধি মানিয়া লইতে প্রস্তুত। অন্য দিকে, জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বলয় ছাড়াইয়া বিশেষ উঠিতে ব্যর্থ, বস্তুত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাবেই তাহা প্রত্যাশিত বৃদ্ধি-হার ৭.৪ হইতে ৭.২ শতাংশে নামিয়াছে। সুতরাং আপাতত সুদের হার কমাইবার যুক্তি জোরদার। আপাতত এই বিষয়ে নর্থ ব্লক এবং মিন্ট স্ট্রিটের সহমত না হইবার কারণ নাই। সুদের হার কমানোর ফলে সত্যই বিনিয়োগ এবং জাতীয় আয় বাড়িবে কি না, তাহা অবশ্য অন্য প্রশ্ন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন