দ্বিত্ব অনিত্য

এই বৎসরের ‘এমটিভি মুভি অ্যান্ড টিভি অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠিত হইল গত সপ্তাহে, এবং অভিনয়ের জন্য পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ-নারী বিভাজন করা হইল না। অর্থাৎ, শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাইলেন পুরুষ অভিনেতা ও নারী অভিনেতারা পাশাপাশি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০২:০৭
Share:

এই বৎসরের ‘এমটিভি মুভি অ্যান্ড টিভি অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠিত হইল গত সপ্তাহে, এবং অভিনয়ের জন্য পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ-নারী বিভাজন করা হইল না। অর্থাৎ, শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাইলেন পুরুষ অভিনেতা ও নারী অভিনেতারা পাশাপাশি। মূল ধারার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা এই প্রথম। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, কে ভাল অভিনয় করিতেছেন, তাহা দেখিতে গেলে তাঁহার লিঙ্গ দেখিতে হইবে কেন? কী কারণে পুরুষ-অভিনেতার একটি বিভাগ হইবে এবং নারী-অভিনেতার অন্য একটি? উভয়েই অভিনয় করিয়াছেন, তাঁহাদের মধ্যে যাঁহারটা ভাল লাগিবে তাঁহাকে বাছিয়া লও, মিটিয়া গেল। শুনিয়া সত্যই চমক লাগে, ইদানীং অভিনেতা বা অভিনেত্রী উভয়কেই বুঝাইতে ‘অ্যাক্টর’ শব্দটি ব্যবহার করা হইতেছিল, ইহাকে তাহারই যৌক্তিক অথচ অভিনব পরিণতি বলিয়া বোধ হয়। যদি লম্বা মানুষদের মধ্যে কে ভাল অভিনয় করিয়াছেন, ফরসা মানুষদের মধ্যে কে ভাল অভিনয় করিয়াছেন, গুম্ফবান মানুষদের মধ্যে কে ভাল অভিনয় করিয়াছেন— এমন ভাগ না করা হয়, তবে নারীদের মধ্যে কে ভাল বা পুরুষদের মধ্যে কে ভাল, এই বিভাজনের কারণ কী? অথচ এত কাল যখন প্রতিটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের পৃথক বিভাগে মনোনয়ন দেওয়া হইয়াছে, প্রায় কাহারও খটকা লাগে নাই, ইহাকেই স্বাভাবিক ও সঙ্গত মনে হইয়াছে। হয়তো পুরুষদের অভিনয় বিচার করিবার সময় সাধারণ মানুষ (ও সমালোচকরাও) যে দৃষ্টিতে তাহা দেখেন, নারীদের অভিনয় বিচার করিবার সময় অন্য কিছু দেখেন। হয়তো পুরুষ ও নারীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং সমাজ-নির্ধারিত ব্যবহারবিধি সেই বিবেচনাগুলিকে প্রভাবিত করে। এমটিভি-র অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারটি পাইয়াছেন এমা ওয়াটসন, তিনি পুরস্কার নিতে উঠিয়া বলিয়াছেন ইহার তাৎপর্যের কথা, আর তাঁহাকে পুরস্কার তুলিয়া দিয়াছেন এশিয়া কেট ডিলন, যিনি এক ‘নন-বাইনারি’ বা ‘দ্বিত্বহীন’ অভিনেতা। ‘বিলিয়নস’ নামক টিভি-সিরিজে তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করেন, তিনি নারী না পুরুষ তাহা বুঝা যায় না। ডিলন সর্বনামে ‘হি’ বা ‘শি’ ব্যবহার করেন না, ‘দে’ ব্যবহার করেন। অর্থাৎ তাঁহার সম্পর্কে লিখিতে গেলে লিখিতে হইবে, ‘তাঁহারা’ অমুক কলেজ হইতে পাশ করেন ও ‘তাঁহাদের’ বসন্তকালে অসুখ হইয়াছিল। কারণ, তিনি পুরুষ বা নারী কেহই নহেন, বা পুরুষ নারী উভয়ই, বা কখনও নারী কখনও পুরুষ। নির্দিষ্ট কোনও লিঙ্গে আত্মপরিচয়কে সীমায়িত না করিতে চাওয়ার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা এই সমাজে স্বীকৃতি পাইতেছে, ইহা সত্যই এক নূতন।

Advertisement

অন্য দিকে, গত সপ্তাহেই এক টিভি-সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলিয়াছেন, তাঁহাদের সংসারে ‘পুরুষের কাজগুলি’ স্বামী করেন ও ‘নারীদের কাজগুলি’ করেন স্ত্রী। প্রবল সমালোচনা হইয়াছে, কারণ এই বিভাজনটি লিঙ্গবৈষম্যকে প্রকট করে, সমর্থনও করে। যে যুগে শিশুসন্তানের যত্ন করার বিবিধ কাজগুলির দায়িত্ব অবধি পিতা ও মাতা সমান ভাগে পালন করিতেছেন, মাতা সকল কাজ করিবেন ও পিতা আসিয়া সন্তানকে দুই বার নাচাইয়া আদর করিয়া সংসার সার্থক করিয়া দিবেন— এই সরল গণিত চলিতেছে না, স্ত্রী গর্ভিণী থাকিবার সময় দম্পতির বলিবার চল হইয়াছে ‘উই আর প্রেগনান্ট’, সেই যুগে কিনা ব্রিটেনের প্রবল গুরুত্বপূর্ণ নেতা এমন মন্তব্য করিয়া বসিলেন। অধুনা প্রগতিশীলরা ক্রমাগত প্রচার করিতেছেন যে কাজ বা আচরণের প্রতি লিঙ্গনির্দিষ্টতা আরোপ সংকীর্ণতা ও বিষমদৃষ্টির পরিচায়ক। তাই টুইটারে ঝড় উঠিতে বিলম্ব হইল না, কেহ বলিলেন দেশের শিশু-কিশোরেরা কী শিখিবে, কেহ মে-কে স্মরণ করাইয়া দিলেন ২০১৭ আসিয়া পড়িয়াছে, কেহ বলিলেন দেশচালনার ভার যাঁহার হস্তে তিনিই যদি রক্ষণশীল হন, ব্রিটেন নিশ্চিত পিছাইয়া পড়িবে। ইহাতে যেমন বুঝা যাইল লিঙ্গবৈষম্য মানুষের মনে এমনই ভিত্তি গাড়িয়া বসিয়া আছে যে সর্বোচ্চ দায়িত্ব ও পদমর্যাদাও তাহাকে পূর্ণ বিলুপ্ত করিতে সক্ষম নহে, ইহাও বুঝা যাইল যে ইদানীং সার্বিক সচেতনতা প্রবল বৃদ্ধি পাইয়াছে, কারণ তীব্র ও তিক্ত আপত্তিগুলি নিক্ষিপ্ত হইল মন্তব্যের কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই। প্রধানমন্ত্রীকে কেহ হয়তো এই পরামর্শও দিতে পারিতেন, অশেষ ব্যস্ততার মধ্যেও একটি মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান দেখিয়া লওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী!

Advertisement

যৎকিঞ্চিৎ

চিন ঠিক করেছে, একটি গ্রহাণুকে ক্যাঁক করে ধরবে। তার ঘাড়ে চড়ে বসে, তা থেকে প্রচুর ধাতু তুলে, বেচে, সেই টাকায় মহাকাশ মিশন চালাবে। চাঁদেও আস্তানা তৈরি হবে, গ্রহাণুটাকে রকেট দিয়ে চাঁদের কক্ষপথে ঠেলে দেওয়ারও প্ল্যান হচ্ছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়! নোবেল নয়, অলিম্পিক মেডল নয়, পোষা গ্রহাণু! বিশ্বের সব বস্তুকে ৬৫ টাকায় বেচা যায়, তার পরেও অধিক স্পর্ধিত ফন্দি ভাঁজা যায়, দেখিয়ে তাক লাগাল চিন। বাকিরা মাও সামলাও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন