Editorial News

এই ফোটোফ্রেম থেকে শিক্ষা নিতে পারেন আমাদের রাজনীতিকরা

স্বর্ণপদক জয়ী ভারতীয় সাইনা নেহওয়াল এবং রজতপদক জয়ী ভারতীয় পি ভি সিন্ধু একসঙ্গে সুউচ্চে তুলে ধরলেন তেরঙা পতাকা, মুখমণ্ডলে অনাবিল হাস্য, অবয়বে অপার উচ্ছ্বাস-গৌরব-তৃপ্তি।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩৪
Share:

ছবি: রয়টার্স।

আক্ষরিক অর্থেই সোনা-রুপোয় মোড়া একটা দৃশ্য। সাইনা নেহওয়াল এবং পি ভি সিন্ধু জাতিকে সে দৃশ্য উপহার দিলেন।

Advertisement

কমনওয়েলথ ব্যাডমিন্টনে স্বর্ণপদক পেলেন ভারতের মেয়ে সাইনা। ফাইনালে যাঁকে হারিয়ে সোনা আনলেন সাইনা, তিনিও ভারতেরই মেয়ে, পি ভি সিন্ধু। পরাজয় ফাইনালে পৌঁছে, অর্থাৎ সিন্ধু রানার আপ। তাই সিন্ধুর গলায় রৌপ্যহার।

কমনওয়েলথ গেমসের মতো মঞ্চে কোনও ইভেন্টের চূড়ান্ত লড়াইতে দুই প্রান্তেই অবস্থান করছেন ভারতীয়রা— এমন দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয় বই কি! কিন্তু তার চেয়েও অনন্য কোনও একটা ফ্রেম কল্পনার আড়ালে আকার নিচ্ছিল। সামনে এসে সে চমকে দিল সব শেষে। স্বর্ণপদক জয়ী ভারতীয় সাইনা নেহওয়াল এবং রজতপদক জয়ী ভারতীয় পি ভি সিন্ধু একসঙ্গে সুউচ্চে তুলে ধরলেন তেরঙা পতাকা, মুখমণ্ডলে অনাবিল হাস্য, অবয়বে অপার উচ্ছ্বাস-গৌরব-তৃপ্তি।

Advertisement

জাতীয়তাবাদ নিয়ে অনেক কথা, অনেক চর্চা চলে আজকাল আমাদের দেশে। দেশপ্রেম নিয়ে বড়াই হয় বিস্তর। সে সব চর্চায় জাতীয় গৌরব বাড়ে কি না, জানা যায়নি। সে সব বড়াইয়ে দেশের প্রতি প্রেম কী ভাবে প্রতিভাত হয়, তাও স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু সাইনা-সিন্ধু যে ফোটোফ্রেমটার জন্ম দিলেন গোল্ডকোস্টে, জাতীয়তাবাদের অপার ঔজ্জ্বল্যে সে ছবি উদ্ভাসিত।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে। কিন্তু শত্রুতা থাকতে পারে না কোনও মতেই। কারণ দিনের শেষে গন্তব্যটা অভিন্নই— ত্রিবর্ণা ধ্বজাটাকে সুউচ্চে ধারণ করার যোগ্যতা অর্জন করা। কমনওয়েলথের আসরে সাইনা এবং সিন্ধু সে কথা বুঝলেন। কিন্তু দেশের মাটিতে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেম ‘দেখভাল’ করার দায়িত্ব যাঁদের উপরে, তাঁরা আদৌ কোনও শিক্ষা নিলেন কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

ভারতের দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রবাহ নিঃসন্দেহে বিজেপি ও কংগ্রেস। দু'টি দলই জাতীয়তাবাদী। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে দুই দলই দেশপ্রেমের বিপুল বড়াই করে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে দেশের প্রভূত ক্ষতি করার অভিযোগ তোলে। রাজনীতিতে এই ধরনের প্রতিযোগিতা বা সঙ্ঘাত নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রাজনীতির ময়দানে এই রকম সঙ্ঘাতের সাক্ষী থাকে। কিন্তু কোনও সভ্য রাষ্ট্রে এই সঙ্ঘাত এমন কোনও চেহারা নিতে পারে না, যাতে বহির্বিশ্বের কাছে দেশের নাম অনুজ্জ্বল হয়।

আরও পড়ুন: রেষারেষি ছাপিয়ে কমনওয়েলথের মঞ্চে ঝান্ডা উঁচিয়ে সাইনা-সিন্ধু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মডেলের দিকে লক্ষ্য রাখলেই স্পষ্ট হয়, জাতীয় স্বার্থে কী ভাবে কাছাকাছি আসতে পারে দুই যুযুধান শিবির। ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান, মার্কিন রাজনীতিতে দুই দলের সঙ্ঘাত বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে গিয়ে ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে বা রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন, এমনটা দেখা যায় না। এটাই পরিণত গণতন্ত্রের কাঙ্খিত ছবি।

নিজেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে দাবি করা ভারত কিন্তু এই গণতান্ত্রিক পরিণতমনস্কতা দেখাতে পারেনি। বিদেশ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বার বার বিরোধী দলকে আক্রমণ করবেন, ভারতের পূর্বতন মন্ত্রিসভাগুলি দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল, এমন অভিযোগ তুলবেন— এ মোটেই কাম্য নয়। এতে গণতান্ত্রিক রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।

একই দোষে দুষ্ট বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ রাহুল গাঁধীও। বিদেশে গিয়ে সম্প্রতি তিনি যে সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, তার অনেকগুলিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বা মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে তিনি বিষোদ্গার করেছেন। এই ছবিও কাম্য নয় একেবারেই।

মার্কিন উদাহরণ চোখের সামনে ছিল দীর্ঘদিন ধরে। গণতান্ত্রিক সৌজন্য বজায় রাখা শুধু নয়, জাতীয় স্বার্থে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা দলীয় নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন, এমন দৃষ্টান্তও বহুবার তৈরি হয়েছে। সে দৃষ্টান্ত থেকে নরেন্দ্র মোদী বা রাহুল গাঁধী যে শিক্ষা নিতে পারেননি, শিক্ষা যে নিতে পারেননি ভারতের অন্য রাজনীতিকরাও, তা বেশ স্পষ্ট। এ বার শিক্ষা নেওয়ার অবকাশ তৈরি করলেন দেশেরই দুই মেয়ে। মোদীরা এবং গাঁধীরা ভেবে দেখতে পারেন, এ বার থেকে এই মডেল অনুসরণ করবেন কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন