Editorial News

সংশয়ের কুয়াশা কেটেছে, বাকিটা মোদীর উপর নির্ভর করছে

উইলিয়াম জেফারসন ক্লিন্টন এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং মনমোহন সিংহ, বারাক ওবামা এবং নরেন্দ্র মোদী— গত কয়েক দশক ধরে দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যে ভাবে হাতে হাত রেখে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে, তাতে ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমেরিকার কোনও প্রেসিডেন্ট আরও এক বার বৈঠকে বসছেন শুনলে ভারতবাসীর উৎফুল্লই হওয়ার কথা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০৫:০৯
Share:

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য ওয়ার্কিং ডিনারের আয়োজন করালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত।

আশা এক রাশ। কিন্তু আশঙ্কাও কম ছিল না। অতএব অবধারিত দোলাচল ছিল, কী হয়-কী হয় প্রশ্ন ছিল, ফলাফল নিয়ে সংশয়ের কুয়াশা ছিল। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় পা রাখার আগেই সব কুয়াশা অন্তর্হিত, দৃশ্যপট বেশ স্বচ্ছ। আদ্যন্ত ইতিবাচক আবহেই যে শুরু হতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক, সে নিয়ে কোনও শিবিরেই সংশয়ের লেশমাত্র নেই আর।

Advertisement

কিন্তু সংশয়ের প্রশ্ন উঠল কেন? ভারত আর আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন যে যুগে উপনীত, তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আর আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বৈঠক ইতিবাচক আবহে শুরু হবে কি না, সে নিয়ে কি আদৌ কোনও সংশয় থাকার কথা? উইলিয়াম জেফারসন ক্লিন্টন এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং মনমোহন সিংহ, বারাক ওবামা এবং নরেন্দ্র মোদী— গত কয়েক দশক ধরে দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যে ভাবে হাতে হাত রেখে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে, তাতে ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমেরিকার কোনও প্রেসিডেন্ট আরও এক বার বৈঠকে বসছেন শুনলে ভারতবাসীর উৎফুল্লই হওয়ার কথা। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প— এই একরোখা বাস্তবটাই উৎফুল্ল হতে দিচ্ছিল না, এই একরোখা বাস্তবটাই আমেরিকার ভারত-নীতি সম্পর্কে সংশয় কাটতে দিচ্ছিল না। ট্রাম্প নিজেই সে সংশয় কাটিয়ে দিলেন। মোদীর আমেরিকা সফর শুরু হওয়ার আগেই ভারতকে প্রিডেটর ড্রোন বিক্রির প্রস্তাবে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিলেন। টুইট করে মোদীকে স্বাগত জানালেন, ভারতকে প্রকৃত মিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। তিনি হোয়াইট হাউসের দখল নেওয়া ইস্তক কোনও বৈদেশিক রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য হোয়াইট হাউস যা করেনি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য সেই ওয়ার্কিং ডিনারের আয়োজন করালেন। এর পরে সংশয় কেটে যাওয়াই স্বাভাবিক ছিল।

মতানৈক্যের ক্ষেত্রও কিন্তু রয়েছে। এইচ-ওয়ানবি ভিসা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন যে নীতি নিয়েছে, তা শিথিল করতে বলুক ভারত— চাপ রয়েছে মোদীর উপর। পাশাপাশি, পরিবেশ তথা বিশ্ব উষ্ণায়নের মোকাবিলা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতের অবস্থান যে রকম, তাতে মোটেই খুশি নন ট্রাম্প। সে অসন্তোষ তিনি খোলাখুলি প্রকাশও করেছেন ইতিমধ্যেই। সর্বোপরি, ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি যে ভাবে বেড়েছে সম্প্রতি, তা ট্রাম্পের না-পসন্দ বলেই খবর। এই সব বিষয়কে কেন্দ্র করেই তিক্ততা হানা দিতে পারত এ বারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায়। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা অন্তত তেমনই ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেজাজ বুঝিয়ে দিল, আশঙ্কা অমূলক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একবগ্গা বেশ। মার্কিন প্রশাসন তাঁর অধীনে আরও বেপরোয়া স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমীকরণের বাধ্যবাধকতাও ঘোর বাস্তব। তাই নরেন্দ্র মোদীর এই আমেরিকা সফরে ইতিবাচক অনেক কিছু ঘটবে বলেই আশা করা যায়। গোটা ভারত তাকিয়ে রয়েছে সে দিকে। বাকিটা নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর পারিষদবর্গের হাতে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন