সম্পাদকীয় ২

অহেতুক নিয়ন্ত্রণ

ন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুলস অ্যালায়েন্স’ যদি সত্যই সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-র বিরুদ্ধে মামলা ঠোকে, তবে কোন পক্ষে পার্শ্বে দাঁড়ানো বিধেয়?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৬
Share:

ন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুলস অ্যালায়েন্স’ যদি সত্যই সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-র বিরুদ্ধে মামলা ঠোকে, তবে কোন পক্ষে পার্শ্বে দাঁড়ানো বিধেয়? সিবিএসই তাহার অধীনে থাকা ১৬,০০০ স্কুলকে আরও কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করিতে চাহে। যেমন, স্কুলের বেতনক্রমের সহিত তাহার পরিকাঠামোর সাযুজ্য আছে কি না, শিক্ষকদের বেতন কত, কী ভাবে বেতন দেওয়া হয় ইত্যাদি সিবিএসই জানিতে চাহিয়াছে। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তথ্য না জানাইলে জরিমানা হইবে। তাহা ভিন্ন, স্কুল হইতে ইউনিফর্ম, পুস্তকাদি বিক্রয় করা চলিবে না বলিয়াও সিবিএসই নির্দেশ দিয়াছে। স্কুলগুলির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বোর্ড কার্যত ‘মাইক্রো-ম্যানেজ’ করিবার চেষ্টা করিতেছে, যাহা স্কুলের স্বশাসনের অধিকারকে সম্পূর্ণ রূপে খর্ব করে। এক্ষণে প্রশ্ন, সিবিএসই-র নির্দেশনামা যদি সত্যই পড়ুয়াদের স্বার্থরক্ষা করে, তবুও কি সেই হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানানো চলে?

Advertisement

এই প্রশ্নের উত্তরে বাজারের যুক্তি পেশ করা চলে, কিন্তু তাহাতে দুইটি আপত্তি উঠিতে পারে। প্রথমত, উন্নত মানের স্কুলের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় কম, ফলে স্কুলগুলির হাতে অসম ক্ষমতা আছে। দ্বিতীয়ত, সন্তানকে কোনও স্কুলে ভর্তি করাইবার পর ফের অন্য স্কুলে লইয়া যাইবার প্রক্রিয়াটি রীতিমত জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং দুষ্কর। অতএব, উপভোক্তার (বর্তমান ক্ষেত্রে অভিভাবক) পক্ষে এক বিক্রেতা হইতে অন্য বিক্রেতার (এই ক্ষেত্রে স্কুল) নিকট যাওয়া সহজ নহে। কিন্তু, তাহা বোর্ডের অহেতুক হস্তক্ষেপের অজুহাত হইতে পারে না। বোর্ডের এক্তিয়ার সুনির্দিষ্ট। বেসরকারি স্কুল তো বটেই, এমনকী সরকারি স্কুল পরিচালনাও তাহার কর্তব্যসীমায় পড়ে না। স্কুল পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করিতে চাহিবার এই বাসনাটি আসলে রাষ্ট্রবাদী মনের প্রতিফলন। যে মন লইয়া স্মৃতি ইরানি-প্রকাশ জাবড়েকররা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রাশ টানিয়া ধরিতে চাহেন, সিবিএসই-র নিয়ন্ত্রণেচ্ছাও সেই মনেরই কথা। এখনই দৃঢ় ভাবে সেই প্রবণতাকে প্রতিরোধ না করিলে রাশ আরও কঠোরতর হইবে। এবং, ইতিহাস সাক্ষী, যাবতীয় অন্যায় নিয়ন্ত্রণ চিরকালই মানুষের কল্যাণের অজুহাতেই আসিয়াছে।

স্কুলের বাজারটি প্রকৃত প্রতিযোগিতার বাজার নহে, এই কথাটি যেমন সত্য, তেমন শেষ অবধি বাজারটি যে বাজারের নিয়ম মানিয়াই চলে, তাহাও সত্য। কেন প্রতিটি শহরেই এমন কিছু স্কুল থাকে, যেখানে ভর্তির মরশুমে অভিভাবকদের দীর্ঘ লাইন পড়িয়া যায়, আর কিছু স্কুল তখনও মাছি তাড়ায়, সেই কারণটি বিশ্লেষণ করিলেই বাজারের ধর্ম বোঝা যাইবে। পঠনপাঠনে, অন্যান্য কার্যক্রমে, পরিবেশে বা অন্য কোনও মাপকাঠিতে এই স্কুলগুলি এমন কিছু দেয়, যাহা অন্য স্কুল দিতে পারে না। বাজারের নিয়মেই তাহার চাহিদা বেশি। এই স্কুলগুলিরও যে কিছু অন্যায় দাবি থাকে না, তাহা নহে— কিন্তু অভিভাবকরা সব দিক বিচার করিয়াই সিদ্ধান্ত করেন। বাজারে যদি সমমানের স্কুল আসে, যেখানে এই অন্যায় দাবিগুলি থাকিবে না, তখন নিশ্চয়ই এই স্কুলগুলির চাহিদাও কমিবে। সরকারি নিয়ন্ত্রণের পথে না হাঁটিয়া বরং তেমন স্কুল তৈরি করিবার পরিবেশ গঠন করা বিধেয়। বাজারের গলায় লাগাম পরানো নহে, বাজারের কুশলতা বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করাই সরকারের কাজ।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন