দরজাগুলো কি সত্যিই বন্ধ হয়ে যাবে, নাকি আরও চমক অপেক্ষায়?

বৈপরীত্যের এক অদ্ভুত সমাপতন ঘটল, সাক্ষী থাকল ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখটা। এই তারিখে পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধে বাংলা নামে এক ক্ষুদ্র প্রান্তের প্রশাসক তাঁর দরজা-জানালাগুলো খুলে দিলেন, দেশ-বিদেশের লগ্নিকারীদের নিজের উঠোনে ডাকলেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাচ্ছেন মিশেল ও বারাক ওবামা। ছবি: এপি

বৈপরীত্যের এক অদ্ভুত সমাপতন ঘটল, সাক্ষী থাকল ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখটা।

Advertisement

এই তারিখে পৃথিবীর পূর্ব গোলার্ধে বাংলা নামে এক ক্ষুদ্র প্রান্তের প্রশাসক তাঁর দরজা-জানালাগুলো খুলে দিলেন, দেশ-বিদেশের লগ্নিকারীদের নিজের উঠোনে ডাকলেন।

এই তারিখেই পশ্চিম গোলার্ধে আমেরিকা নামে এক সুবিশাল রাষ্ট্রের শীর্ষ প্রশাসক হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নামে এক ব্যক্তি শপথ নিলেন, আমেরিকা অবশিষ্ট পৃথিবীর জন্য নিজেদের দরজা-জানালাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিল, বিশ্বায়নের বিপরীত দিশায় রাষ্ট্রটির এক নতুন যাত্রার সূচনা হল।

Advertisement

নির্বাচনী প্রচারেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছিলেন, হোয়াইট হাউসের দখল নিতে পারলে আমেরিকার দরজা-জানালাগুলো বহির্বিশ্বের জন্য আর হাট-খোলা থাকতে দেবেন না। দশকের পর দশক ধরে গোটা বিশ্বকে আপন করে নিয়েছে আমেরিকা, অচিরেই বিশ্বের অঘোষিত রাজধানীতেও পরিণত হয়েছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিন্তা-ভাবনার পরিসরটা বিশ্ব জুড়ে পরিব্যাপ্ত নয়। আমেরিকার সীমান্ত থেকেই তাঁর চিন্তার স্ফূরণ ঘটে, আমেরিকার সীমান্তেই তাঁর চিন্তার নির্বাপণ হয়। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সদর্প ঘোষণা— আমেরিকা এবং আমেরিকার নাগরিকই এক ও একমাত্র অগ্রাধিকার। অতএব, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ চিন্তায় রাখছে গোটা বিশ্বকেই।

আমেরিকার দীর্ঘ দিনের সামরিক, অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক মিত্র যে সব রাষ্ট, তাদের আকাশে আজ চিন্তার মেঘ। আমেরিকার সাম্প্রতিক মিত্র ভারতও কিন্তু খুব স্বস্তিতে নেই। উচ্চশিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্নে দশকের পর দশক ধরে ভারতীয় মেধার অন্যতম গন্তব্য আমেরিকা। ট্রাম্পের নীতি যে সে পথও কঠিন করে তুলবে, কেমন ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।

বিশ্বায়নের শ্রেষ্ঠ ধারক এবং বাহক হয়ে গোটা বিশ্বকে এত দিন পথ দেখিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি আচমকা সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ দিশায় দৌড় শুরু করতে পারবে?

আমেরিকার ভোটই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজে পৌঁছে দিয়েছে। অর্থাৎ আমেরিকার এক বিরাট অংশ আজ বিপ্রতীপ দিশায় নিবদ্ধ সেই ভয়ঙ্কর দৌড়টাই শুরু করতে উৎসুক। প্রসারণই যে জীবন আর সঙ্কোচনই যে মৃত্যু, সে আপ্তব্যাক্য কি তা হলে ভুলে গিয়েছে আমেরিকা? ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে এ বার কি তা হলে সত্যিই এমন এক পথে যাত্রা শুরু, যার শেষ প্রান্ত সমৃদ্ধির বিপরীত মেরুকে ছুঁয়েছে? নাকি আরও এক বার চমকে দিয়ে খোদ ট্রাম্পের গতিপথকেই বদলে দেওয়ার অপেক্ষায় মার্কিন দেশ?

চমকে আমেরিকা দিতেই পারে। আমেরিকায় সবই সম্ভব। বারাক ওবামাকে হোয়াইট হাউজে পৌঁছে দিয়ে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল এই দেশ। আবার সেই ওবামার মেয়াদ ফুরোতেই এমন এক জনকে হোয়াইট হাউসে পাঠাল মার্কিন মুলুক, যা বিশ্বের কাছে আরও বড় চমক, ধাক্কাও। কিন্তু ভবিষ্যতের গর্ভে আরও চমক থাকতেই পারে আর সে চমকটা ইতিবাচকও হতেই পারে। আপাতত সেই সম্ভাব্য ইতিবাচক চমকটার দিকেই তাকিয়ে থাকবে গোটা বিশ্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন