সম্পাদকীয় ২

জনস্বার্থের বিচার

বৃহত্তরের স্বার্থে কোনও কারণে আঘাত আসিলে ক্ষতিগ্রস্তের পক্ষ লইয়া যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা এই মামলা করিতে পারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২৬
Share:

জনস্বার্থ কথাটি মূল্যবান। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে তাহার মূল্য সমধিক। জনস্বার্থ, অর্থাৎ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ। সেই বৃহৎ স্বার্থ যাহাতে আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকে, সেই উদ্দেশ্যেই জনস্বার্থ মামলার সূত্রপাত। ইহা এক বিশেষ ক্ষমতার প্রকরণ। নাগরিকের ক্ষমতা, যাহা বিচারবিভাগ তাহার হাতে অর্পণ করিয়াছে। বৃহত্তরের স্বার্থে কোনও কারণে আঘাত আসিলে ক্ষতিগ্রস্তের পক্ষ লইয়া যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা এই মামলা করিতে পারে। ইহার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের সশরীরে আদালতে উপস্থিত হইবারও প্রয়োজন নাই। সামান্য চিঠি বা টেলিগ্রামকেও এই ক্ষেত্রে আদালত মামলা হিসাবে গ্রহণ করিতে পারে। ভারতের মতো দেশে, যেখানে সকলের মামলা করিবার বা আদালতে উপস্থিত হইবার সামর্থ্যটুকুও নাই, সেখানে জনস্বার্থ মামলার গুরুত্ব সহজে অনুমেয়। এই কারণেই ক্রমশ ইহা অন্যায়ের প্রতিরোধে ও মোকাবিলায় নাগরিকদের, বিশেষত দুর্বল মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হইয়া উঠিয়াছে।

Advertisement

কিন্তু সঙ্কটের পথ সদিচ্ছা দিয়া বাঁধানো। ভাল জিনিস মন্দ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হইয়াই থাকে। জনস্বার্থ মামলারও অনেকটা সেই হাল। প্রায়শই তাহার অপব্যবহার হইয়া চলিতেছে। সম্প্রতি লোয়া-মামলার রায় শোনাইতে গিয়া মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট জনস্বার্থ মামলার এ হেন অপব্যবহারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করিয়াছে। রায়টির বিষয় বা প্রতিপাদ্য সম্পর্কে মন্তব্য করিবার স্থান ইহা নহে। কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে সর্বোচ্চ আদালত জনস্বার্থ মামলার বর্তমান অবস্থা লইয়া যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছে, তাহা যথাযথ। উদ্বেগের কারণ, বহিরঙ্গে ‘সাধারণের জন্য’-র মুখোশটি পরিয়া থাকিলেও প্রায়শই দেখা যাইতেছে, ইহাতে মামলাকারীর অন্যবিধ স্বার্থের পাল্লাই বেশি ভারী। সত্য কথা। তদুপরি, অনেক সময়েই, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় নহে, বরং সংকীর্ণ ক্ষুদ্রস্বার্থ পূরণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হইতেছে এই বিশেষ অধিকার। উদ্বেগের কারণ আরও আছে। জনস্বার্থ মামলার অতি ব্যবহার। এমন অনেক মামলা হইতেছে, যাহা আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নহে। অপ্রয়োজনীয় মামলা স্তূপীকৃত হইতেছে। যে কোনও বস্তুই অতি ব্যবহারে জীর্ণ হইয়া পড়ে, মূল্য হারায়। জনস্বার্থ মামলার ধারণাটিও সেই কারণে বিপন্ন।

অবনমন ঠেকাইবার উপায় কী? মামলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা অবলম্বন। অর্থাৎ কোন মামলাটি গ্রহণ করা হইবে, কোনটি নহে— এই পদ্ধতিটি কঠোর করিতে হইবে। ইহাতে আরও একটি সুবিধা আছে। বকেয়া মামলার পাহাড়ও কিছুটা হ্রাস পায়। এই দেশের বিচারবিভাগ এমনিতেই অগণিত মামলার ধারে ও ভারে ন্যুব্জ। বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা দীর্ঘ কাল পড়িয়া থাকায় সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার পান না, অপরাধীর শাস্তি হয় না। এই সমস্যা দূর করিতে বহু কাল ধরিয়া বিচারের কাজে গতি আনিবার প্রসঙ্গটি নাড়াচাড়া হইতেছে। কিন্তু কার্যে পরিণত করা যায় নাই। এখন মামলার নির্বাচন কঠোর হইলে কিছু মূল্যবান সময় বাঁচে। প্রকৃত জনস্বার্থও সুরক্ষিত হয়। কোন মামলা বিচারের যোগ্য, কোনটি নহে, তাহা নির্ধারণের একমাত্র অধিকার মহামান্য আদালতের। সেই কারণেই তাঁহাদের নিকট সবিনয় ও সসম্মান আবেদন— সমস্যাটি বিবেচনা করা হউক।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন