National News

অসংবেদনশীলতা এ সমাজের শিকড় থেকেই উৎসারিত, প্রমাণ দিলেন উপাচার্যও

লহমায় অগ্নিতে ঘৃতাহূতি। একগুচ্ছ প্রশ্ন তীক্ষ্ণ বাণের মতো বিঁধতে শুরু করেছে নতুন করে। ইভ-টিজিং তা হলে কি অপরাধ নয়? নাকি অপরাধমূলক হলেও অপরাধের মাত্রা তাতে এত কম যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ইভ-টিজিং চলতে দেওয়া যেতেই পারে?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৪
Share:

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সরব ছাত্রীরা। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

আজ মহাসপ্তমী। উৎসবের প্রবাহে ভরা জোয়ার। উৎসবের কেন্দ্রে কী? উৎসবের কেন্দ্রে দৈব নারীশক্তির মহতী আরাধনা। নারীশক্তির এই মহিমান্বিত জয়ধ্বনি যেমন বাস্তব, বিস্ময়কর বৈপরীত্য নিয়ে তেমনই বাস্তব বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ও। দৈব নয়, মানবিক নারীত্বের চূড়ান্ত অবমাননা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। প্রতিকার চাওয়ায় জুটেছে পুলিশের লাঠি। স‌র্বশেষ সংযোজন উপাচার্যের অভাবনীয় অসংবেদনশীলতা। দূর্বাদলকে দুর্গপ্রাকার হিসেবে দেখানো হচ্ছে— মূল্যায়ন উপাচার্যের। শ্লীলতাহানি ঘটেনি, ঘটেছে ইভ-টিজিং ‘মাত্র’— মন্তব্য তাঁর এমনও।

Advertisement

লহমায় অগ্নিতে ঘৃতাহূতি। একগুচ্ছ প্রশ্ন তীক্ষ্ণ বাণের মতো বিঁধতে শুরু করেছে নতুন করে। ইভ-টিজিং তা হলে কি অপরাধ নয়? নাকি অপরাধমূলক হলেও অপরাধের মাত্রা তাতে এত কম যে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ইভ-টিজিং চলতে দেওয়া যেতেই পারে? নারীর সম্মান এবং অধিকার সম্পর্কে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ধারণা আদৌ স্পষ্ট তো? ইভ-টিজিং-এ কি উপাচার্য ততটা দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না, যতটা ছাত্রীদের প্রতিবাদে খুঁজে পাচ্ছেন?

আরও পড়ুন:উপাচার্যের দাবি, নিছক ইভ টিজিং!

Advertisement

প্রত্যেকটি প্রশ্নই অত্যন্ত অস্বস্তিকর হবে উপাচার্যের জন্য নিঃসন্দেহে। তিনি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা হয়তো করবেন, কিন্তু সদুত্তর দিতে পারবেন না একটি প্রশ্নেরও, সে-ও আগে থেকেই বলে দেওয়া যায়। এতটা অসংবেদনশীল মন্তব্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছ থেকে আসা বেশ বিস্ময়কর। যতটা সহজে এই নয়া তত্ত্ব খাড়া করতে চেয়েছেন উপাচার্য, পরিস্থিতিটা আর ততটা সরল নেই। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্যের ইভ-টিজিং সংক্রান্ত মন্তব্যটা সমাজের আয়না হয়ে ধরা দিয়েছে যেন। নারীর সম্মান, নারীর সুরক্ষা, নারীর অধিকার নিয়ে ‘প্রগতিশীল’ আলোচনা যতই হোক, এ সমাজের মনের গভীর থেকে নারীর অস্তিত্বের প্রতি অশ্রদ্ধা বা অবহেলার ভাবটা নিঃশেষে মুছে ফেলা যায়নি। শুধু সাধারণ ও নিতান্ত নগণ্য সামাজিক জীবদের ধারণায় নয়, তথাকথিত আলোকপ্রাপ্তদের, সামাজিক ভাবে অগ্রগণ্যদের, এমনকী প্রথম সারির শিক্ষাবিদদের ধারণাতেও গ্লানি যে রয়ে গিয়েছে, বেশ অসুন্দর ভাবে প্রকাশ্যে এসে পড়েছে সে সত্য।

এই গ্লানির অস্তিত্বটা যে আমাদের মাটির গভীরেই, তা অস্বীকার করার উপায় আর নেই। এই মাটিতেই হয়তো মিশে রয়েছে মানব ধর্মের আহ্বান, বিপ্লবের আগুন, ঔদার্যের শিক্ষা। কিন্তু উর্বর জমিতে যেমন ক্ষতিকর বা বিষাক্ত খনিজের উপস্থিতিও থাকে অনেক সময়ই, তেমনই আমাদের মাটিতেও রয়ে গিয়েছে এই অস্বস্তিকর গ্লানির নিহিত অনেকাংশেই। শিকড় বেয়ে উঠে আসে সে বিষ গভীর থেকে মাঝেমধ্যেই, বিষিয়ে দেয় গোটা সমাজ-মানসকে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজে সে বিষের অন্যতম শিকার, বোঝাই যাচ্ছে। বিষটা যেন সংক্রামিত না হয় আর, খেয়াল রাখতে হবে আমাদের সকলকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন