অলিম্পিক্স নিয়ে যত উৎসাহ ছিল, যত উদ্দীপনা ছিল, যত ধুমধাম ছিল, তার ভগ্নাংশও নেই আজকের রিওতে। ছবি: এএফপি।
কয়েকটা দিন আগে পর্যন্তও আলোয় আলো হয়ে ছিল ব্রাজিলের রিও শহর। এ গ্রহের সেরা আসর বলে যাকে জানি, সেই অলিম্পিক্স উপলক্ষে। আরও একটা অলিম্পিক্স শুরু হয়েছে এ বার। ওই রিওতেই। যাঁরা একটু বিশেষ ভাবে সক্ষম, তাঁদের নিয়ে এই আসর— প্যারালিম্পিক্স। কিন্তু বলাই বাহুল্য, সেই উৎসব আলোকবৃত্তে নেই মোটেই। অলিম্পিক্স নিয়ে যত উৎসাহ ছিল, যত উদ্দীপনা ছিল, যত ধুমধাম ছিল, তার ভগ্নাংশও নেই আজকের রিওতে। কারা প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশের, তাও ভাল করে জানি না। এমনকী আমাদের দেশে এবং আরও অনেক দেশে প্যারালিম্পিক্সের টিভি সম্প্রচারটুকুও নেই!
আসলে আলোকিত বৃত্তগুলোর দিকেই আরও আলো নিয়ে বার বার ছুটে যাই আমরা। যেখানে আঁধার, আলোর আবশ্যকতা সেখানেই যে আগে, তা মনে থাকে না কিছুতেই।
সদ্যসমাপ্ত অলিম্পিক্সের কথাই ধরা যাক। বহু তোড়জোড়, বিপুল তৎপরতা, অংশগ্রহণও অনেক। কিন্তু অলিম্পিক্স পর্যন্ত যে যাত্রাপথ, তার নেপথ্যে কার লড়াইটা কেমন ছিল, সে সবের কতটুকু খোঁজ নিয়েছি? অলিম্পিক্স থেকে ফিরে আসার পরই বা ক’জনকে নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছি? খোঁজ রেখেছি, মেতে উঠেছি, উৎসব করেছি তাঁদের নিয়েই, যাঁরা সেই মহতি সমাগমটাতে গিয়ে আলোকবৃত্তে ঢুকতে পেরেছেন। পুষ্পবৃষ্টি মাথায় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন যাঁরা, যাবতীয়, ফুল-মালা-অর্ঘ নিয়ে গিয়ে তাঁদের চার পাশেই স্তূপীকৃত করেছি। উজ্জ্বল বৃত্তে আরও চড়া আলোকপাত ঘটিয়েছি। কিন্তু তথাকথিত আলোকবৃত্তে ঢুকতে পারেননি যাঁরা, তাঁদের আলোয় আনার প্রয়াসে মন দিতে পারিনি।
অতএব প্যারালিম্পিক্স নিয়েও এই ঔদাসীন্যই কাম্য ছিল। অক্ষমতার পাহাড় ভেঙে বিশেষ কোনও সক্ষমতার চুড়োয় যাঁরা, তাঁদের জন্যও দেশজোড়া করতালি জরুরি, সে কথা ভুলে যাওয়াই প্রত্যাশিত ছিল।
এ গ্রহে জীবনের অনন্ত পরিক্রমায় পিছিয়ে পড়েছেন যে যেখানে, মনুষ্যত্বের বাহু তো তাঁদের দিকেই প্রসারিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় আর কোথায়!
‘ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’— আবৃত্তির মঞ্চে এ পঙ্ক্তি হয়তো এখনও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কখনও কি জুটবে জগৎ সভার সে শ্রেষ্ঠ আসন, যত দিন না সবাই মিলে এগিয়ে যাওয়ার একটা সঙ্কল্প হাতে হাত রেখে মানববন্ধন গড়ে তুলছে আসমুদ্রহিমাচলে?