Newsletter

আরও কত ক্ষতি সয়ে বোধোদয় হবে!

সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে গিয়ে কেন আমরা বার বার এই সাধারণ বোধগুলো হারিয়ে ফেলি, তা বোঝার জন্যই একটা গবেষণা হওয়া জরুরি বরং।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০০:৪৮
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

আর কত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে সতর্ক হব আমরা? স্বাভাবিক সতর্কতাটুকুও অবলম্বন করতে ভুলে যাব কেন আমরা বার বার? গড়িয়াহাটের এক অভিজাত আবাসনের বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়ায় পাতানো ‘বন্ধুত্বে’ আস্থা রেখে ৯০ লক্ষ টাকা খোয়ানোর পরে আবার উঠে আসছে এই প্রশ্ন।

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়াটা যতটা বাস্তব, ততটাই যে বায়বীয়, সে কথা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে গেলে চলে না। তাই আলাপ যাঁদের সঙ্গে শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাঁদের পরিচয়ের পাথুরে প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্বাস অর্পণ করা চলে না। এটা অত্যন্ত সহজ-সরল এবং স্বাভাবিক কথা বা নীতি। এটা জানা বা বোঝার জন্য কোনও সংবিধান বা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানুয়াল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে গিয়ে কেন আমরা বার বার এই সাধারণ বোধগুলো হারিয়ে ফেলি, তা বোঝার জন্যই একটা গবেষণা হওয়া জরুরি বরং।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হল গড়িয়াহাটের ওই বাসিন্দার, যিনি লন্ডন প্রবাসী হিসেবে নিজের পরিচয় দিলেন। আলাপ জমল বেশ। ‘প্রবাসী বন্ধু’ নিশ্চয়ই নিজের সামাজিক ওজনটা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন গড়িয়াহাট-বাসিনীর কাছে। নচেৎ তাঁর কথায় নিশ্ছিদ্র বিশ্বাস রেখে লক্ষ লক্ষ টাকা এ ব্যাঙ্ক থেকে সে ব্যাঙ্ক, এ শাখা থেকে সে শাখায় ঢেলে দিতেন না ওই মহিলা। কিন্তু প্রশ্ন হল, দৈনন্দিন জীবনে আমাদের আশেপাশে যাঁদের দেখি রোজ, কোনও বিষয়ে পাথুরে প্রমাণ অনুভব না করা পর্যন্ত তাঁদের সম্পর্কেও কি আমরা এত নিশ্চিত হই কখনও? কর্মসূত্রে বা দৈনন্দিনতার সূত্রে যাঁদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় আমাদের রোজ বা প্রায়শই, তাঁদের ক’জনকে আমরা পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করি? তাঁদের ক’জনকে আমরা জানতে দিই যে, আমাদের ঠিক কত টাকা আছে বা ঠিক কতটা উপার্জন করি? সামনাসামনি মেলামেশা যাঁদের সঙ্গে, তাঁদের ক’জনের সঙ্গে আমরা ব্যক্তিগত তথ্যাদি ভাগ করে নিতে পারি? সংখ্যাটা নিশ্চয়ই হাতে গোনা। স্বাভাবিক সতর্কতার বোধ থেকেই আমরা একটু আড়াল ধরে রাখি। সম্পর্কের গভীরতার ভিত্তিতে সে আড়াল বাড়ে বা কমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্পর্ক তৈরির সময়ে কেন আমরা সেই স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলছি বার বার? অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির গোটা অস্তিত্বটাই বায়বীয় যেখানে, নিবিড় সম্পর্কের মাঝেও একটা অপরিচিতির পর্দা যেখানে, সেই পরিসরে এত অসতর্ক ভাবে কাউকে বিশ্বাস করা চরম নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কী?

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বার বার প্রতারিত হচ্ছি আমরা। কারও টাকা-পয়সা নষ্ট হচ্ছে, কারও সম্মানহানি ঘটছে, কেউ ব্ল্যাকমেলিং-এর শিকার হচ্ছেন, কারও জীবন চলে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কি কোনও ঘোর লেগে যাচ্ছে আমাদের চোখে? মগজটা কি কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে? না হলে বাস্তবের রাস্তায় যে সব বিপদ আমরা এড়িয়ে চলছি, সামাজিক মাধ্যমের পথে হাঁটতে গিয়ে সেই সব ফাঁদেই পা দিচ্ছি কী ভাবে?আবার বলছি, সতর্কতাই শেষ কথা। অযথা অবিশ্বাস করা বা সংশয়ের বাতাবরণে বাঁচাটা কোনও কাজের কথা নয়। কিন্তু অকারণে প্রশ্নাতীত বিশ্বাস অর্পণও কোনও সুস্থ বুদ্ধির পরিচয় দেয় না।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে ভাব হওয়া ‘বন্ধু’র সৌজন্যে ৯০ লাখ টাকা খোয়ালেন কলকাতার মহিলা​

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন