Dalit

এই দলিত বিদ্রোহ মোদীকে যথেষ্ট উদ্বেগে রাখবে

সে দিন দলিত কণ্ঠস্বর নীরবে নিভৃতে কাঁদত। আজ দলিত মানুষ চিত্কার করে বিদ্রোহ করছে। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালসে দিন দলিত কণ্ঠস্বর নীরবে নিভৃতে কাঁদত। আজ দলিত মানুষ চিত্কার করে বিদ্রোহ করছে। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০০:১০
Share:

দলিত বিদ্রোহে উদ্বেগে প্রধানমন্ত্রী। ফাইল চিত্র।

রাজঘাটে রাহুল গাঁধী অনশন করলেন দেশের দলিত সমাজের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে। গাঁধীর স্মৃতি বিজড়িত রাজঘাটে গাঁধীবাদী স্টাইলে রাহুল গাঁধীর প্রতিবাদ গোটা দেশের মানুষের নজর কেড়েছে। একটা বিষয় স্পষ্ট, ২০১৪ সালে হিন্দু ভোটকে সুসংহত করে মোদী বিজেপিকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখন দেখছি দেশের নানা প্রান্তে দলিত বিদ্রোহের আগুন। তফসিলি জাতি ও উপজাতির উপর অত্যাচার নিরোধক আইন ১৯৮৯ নিয়ে সম্প্রতি যে বিতর্ক হয়ে গেল তাতেও বোঝা গেল দলিত সম্প্রদায় এখন টগবগ করে ফুটছে। সরকার বাহাদুর চুপচাপ শীর্ষ আদালতে সংশোধন এনে বলতে চায় যে এই আইনের অপব্যবহার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। দলিত হলেই সাত খুন মাফ হতে পারে, সরকারি দলিত কর্মী ইমিউন হতে পারে না। পাল্টা আওয়াজ ওঠে এই আইনের সংশোধনের মাধ্যমে দলিতদের উপর আরও বেশি অত্যাচারের সরকারি ব্যবস্থা হচ্ছে। সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়, তবে আদালতে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করাও এখন আইনগত দিক থেকে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে। তাতে সরকার আরও বিপদে পড়েছে। রাহুল গাঁধী অনশনের মঞ্চ থেকে বলেছেন মোদী নিজে একজন দলিত বিরোধী।

Advertisement

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ২০১০ সালের রিপোর্ট বলছে, প্রতি ১৮ মিনিটে এক জন দলিতের উপর শারীরিক অত্যাচারের অপরাধ হচ্ছে। প্রতি দিনে গড়ে তিন জন দলিত মহিলা ধর্ষিত হন। দু’জন দলিত খুন হয়। দু’জন দলিতের বাড়িতে আগুন জ্বালানো হয়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিহারের এক প্রাক্তন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব কে বি সাক্সেনা জানিয়েছেন, শতকরা ৩৭ ভাগ দলিত দারিদ্র সীমারেখার নীচে আছে। শতকরা ৫৪ ভাগ অপুষ্টির শিকার। দলিত পরিবারে জন্ম নেওয়া এক হাজার জনের মধ্যে ৮৩ জন তাদের জীবনের দ্বিতীয় জন্মদিন দেখতে পায় না। তার আগেই মারা যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: দলিতদের ক্ষোভের কারণটা কোথায়?

১৯৫৫ সালে সরকারি ভাবে অস্পৃশ্যতাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। তার পরেও যে ভাবে দলিত বিরোধী মানসিকতা দেখা যাচ্ছে তাতে এই বিদ্রোহ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ২০১৬-য় হায়দরাবাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দলিত পিএইচডি ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে মোদী সরকারের প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।

প্রতিবাদ। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

গোটা দেশের জনসংখ্যায় ৩০ কোটি দলিত আছে। আজ দলিত সমাজও বুঝতে পারছে এ দেশে তারা এক বিপুল সংখ্যায়। তাই উত্তরপ্রদেশে চন্দ্রশেখর আজাদ, গুজরাতে জিগ্নেশ মেবাণীর মতো স্থানীয় নেতারা উঠে আসছেন। আবার বাড়ছে দলিতদের উপর অত্যাচার। কেউ কেউ বলছেন দলিত বিরোধী অত্যাচার বরাবরই ছিল না। ঠাকুর সম্প্রদায় যে ভাবে ফুলন দেবীর উপর অত্যাচার করেছিল তা কিন্তু আজও হয়ে চলেছে। তফাত্ একটাই, সে দিন দলিত কণ্ঠস্বর নীরবে নিভৃতে কাঁদত। আজ দলিত মানুষ চিত্কার করে বিদ্রোহ করছে। ফলে মহারাষ্ট্রের ভীমাকোরেগাঁও এলাকায় এক দলিত যুবকের মৃত্যু হলে সেই আক্রমণের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণও গড়ে ওঠে।

মোট ভারতীয় জনসংখ্যার প্রায় ২৫ ভাগ এখন দলিত। ১৯৬১-তে দলিতদের শিক্ষার হার ছিল শতকরা ১০ ভাগ, ২০১১-তে ৭৪ শতাংশ।

২ এপ্রিল অরাজনৈতিক দলিত গোষ্ঠীগুলি মিলে ভারত বন্‌ধের ডাক দেয়। হিন্দি বলয়ে তার প্রতিক্রিয়া ছিল যথেষ্ট। এই যে মাঝেমধ্যেই মোহন ভাগবত বলছেন পৃথক দলিত সংরক্ষণের পক্ষে তাঁরা নন, তাতেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ১৯৮৯ সালে যে মণ্ডল বনাম কমণ্ডল দেখেছি তার ফায়দা নেয় বিজেপি, আর আজ হিন্দু ভোটের ভাঙন চাইছে না। কিন্তু সমাজের এক দিকে দলিত বিদ্রোহ অন্য দিকে উচ্চবর্ণের হিন্দু জাতির পাল্টা ভারত বন্‌ধ পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলেছে।

নরেন্দ্র মোদীর উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন