সংকীর্ণ বিজ্ঞান

এই কথাটি পুনরায় মনে করাইয়াছেন নোবেলজয়ী রসায়ন বিজ্ঞানী বেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণণ। সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভারত এখন চিনের তুলনায় অনেক পিছাইয়া আছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে আরও বেশি টাকা না বরাদ্দ না করিলে দূরত্ব আরও বাড়িবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২৭
Share:

বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের প্রতিভা বিশ্বের দরবারে দেশকে উচ্চস্থান দিয়াছে। কিন্তু ভারতে বিজ্ঞানচর্চার চিত্রটি দেখিলে লজ্জায় মাথা নত হইয়া আসে। উৎকর্ষের নিরিখে বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রটি অত্যন্ত সংকুচিত। দশ-বারোটি গবেষণা সংস্থার মধ্যেই তাহা সীমাবদ্ধ। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগগুলি যেন মাঝারিয়ানার আড়ত। দুই শতের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক-ছাত্রেরা নেহাত ‘এলেবেলে’। এই সত্যটি পুনরায় স্পষ্ট হইল স্বর্ণজয়ন্তী বৃত্তির সমীক্ষায়। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের এই বৃত্তিটি গুরুত্বপূর্ণ, ইহার প্রাপকেরা অনেকেই পরবর্তী কালে উৎকর্ষের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ভাটনগর পুরস্কার’ পাইয়াছেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা সাফল্যের নিদর্শন রাখিয়াছেন। কিন্তু সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, এই বৃত্তির প্রায় অর্ধেক পাইয়াছেন কেবল দুইটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এবং মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ। তাহার পর স্থান পাইয়াছে পাঁচটি আইআইটি। কিন্তু গোটা দেশেরই মাত্র দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় স্থান পাইয়াছে। যে দেশে আট শতের অধিক প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানের গবেষণা হয়, সেখানে গোটা পঁচিশ প্রতিষ্ঠান উৎকর্ষের দাবি করিতে পারে, এই তথ্য উদ্বেগজনক।

Advertisement

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠিবে, এই দৈন্যদশা কেন? তাহার একটি কারণ ভারতে বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য যথেষ্ট বিনিয়োগ করে নাই সরকার। এই কথাটি পুনরায় মনে করাইয়াছেন নোবেলজয়ী রসায়ন বিজ্ঞানী বেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণণ। সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভারত এখন চিনের তুলনায় অনেক পিছাইয়া আছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে আরও বেশি টাকা না বরাদ্দ না করিলে দূরত্ব আরও বাড়িবে। শিল্পেরও প্রয়োজন মানবসম্পদ, কেবল সুলভ শ্রম দিয়া শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব নহে। অতএব দেশের অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞানের শিক্ষার প্রয়োজন। তাঁহার গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ সতর্কবাণী, কে কী মাংস খাইতেছে, তাহা লইয়া সংঘর্ষকে যাঁহারা দেশপ্রেমের নমুনা বলিয়া মনে করিতেছেন, তাঁহারা হয় মূর্খ অথবা কুচক্রী। সমাজকে আধুনিক না করিলে, বিজ্ঞানে বিনিয়োগ না করিলে দেশের উন্নতি অসম্ভব।

বিজ্ঞানের গবেষণায় যৎসামান্য বিনিয়োগ যেমন একটি সংকট, তেমনই সমস্যা সেই বিনিয়োগের বিতরণে অসাম্য। মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তাহা সীমাবদ্ধ থাকিবার অর্থ, বহু ছাত্রছাত্রী সুযোগের অভাবে উদ্ভাবনী কাজ করিতে পারিবে না। এই আক্ষেপ নূতন নহে। গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করিয়াছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে ভারত বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলির সমকক্ষ হইবে। ফেব্রুয়ারিতে বাজেট ঘোষণা হইল, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির জন্য বরাদ্দ বাড়িল অতি সামান্য। বর্তমানে ভারতে বিজ্ঞানের জন্য বিনিয়োগ মোট জাতীয় উৎপাদনের এক শতাংশেরও কম। আইআইটি-র সংখ্যা বাড়িয়াছে, বরাদ্দও বাড়িয়াছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগগুলির দশা তথৈবচ। তাহাদের গবেষণার মান মন্দ হওয়াতেই নানা আন্তর্জাতিক মূল্যায়নে তাহারা পিছাইয়া পড়িতেছে। বিদ্যালয় হইতে বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বস্তরে বিজ্ঞানচর্চা লইয়া নূতন করিয়া চিন্তার প্রয়োজন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন