সম্পাদক সমীপেষু

এই অশ্রদ্ধা কেন

আমি চিত্রশিল্পী। জীবিকার কারণে আমাকে প্রতিদিনই কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় যেতে হয়। আর আসাযাওয়ার পথে বিশ্বখ্যাত এক চলচ্চিত্রকার ও অভিনেতার প্রতি চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন দেখে ব্যথিত হই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০০:১৭
Share:

চাই পুনর্বাসন। চ্যাপলিন স্কোয়ার, কলকাতা, মে ২০১৬। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আমি চিত্রশিল্পী। জীবিকার কারণে আমাকে প্রতিদিনই কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় যেতে হয়। আর আসাযাওয়ার পথে বিশ্বখ্যাত এক চলচ্চিত্রকার ও অভিনেতার প্রতি চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন দেখে ব্যথিত হই। শহরের প্রাণকেন্দ্রে কলকাতা পুরনিগমের প্রধান কার্যালয়ের ঠিক বিপরীতে চ্যাপলিন স্কোয়ারের প্রধান ফটক জুড়ে কয়েক জন ফুটপাথবাসী একেবারে ঘর গেরস্থালি পেতে বসেছেন। ফটকটির উপরে চার্লির টুপি, দু’ধারে ছড়ি, নীচে জুতো জোড়া এবং গ্রিলের নকশায় উৎকীর্ণ করা আছে চার্লি চ্যাপলিনের বিভিন্ন ভঙ্গির একাধিক অবয়ব। কিন্তু এই অসাধারণ শিল্পকর্মগুলি আচ্ছাদিত হয়ে আছে ওই ফুটপাথবাসীদের ব্যবহৃত ছেঁড়া ব্যাগ, প্লাস্টিক, কম্বল ইত্যাদি নানা জিনিসে।

Advertisement

কিছু দিন আগে এক বিকেলে দেখলাম, এক দল বিদেশি বিদেশিনি ওই ফটকের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছেন। তাঁদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে বিস্ময় এবং বিরক্তি। লজ্জায় সে দিন আমার মাথা নুয়ে গিয়েছিল। চার্লি চ্যাপলিনের মতো এক জন অনন্যসাধারণ শিল্পীর প্রতি এই কি আমাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন? বিশ্বের কাছে সংস্কৃতির শহর কলকাতার কী বার্তা পৌঁছল?

যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে না পারি, কিন্তু অপমান করার অধিকার আমাদের আছে কি?

Advertisement

কলকাতার মহানাগরিক এবং অন্যান্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কর্মকর্তার কাছে আবেদন, হয় অবিলম্বে ওই ভবঘুরে মানুষগুলিকে ওই ফটক থেকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসিত করুন, নয়তো এই পার্কটির অন্য নামকরণ করে এবং চার্লি চ্যাপলিনের স্মারকগুলি সরিয়ে ওই ব্যক্তিত্বকে অশ্রদ্ধা থেকে মুক্তি দিন।

তরুণ চক্রবর্তী। কলকাতা-৩০

প্রেমেন্দ্র মিত্র

• শুধু সিনেমা পরিচালনাই নয়, প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন একাধারে কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রসম্পাদক এবং গীতিকার। (‘নেশা ছিল পালিয়ে যাবার’, আশিস পাঠক, পত্রিকা, ২৩-৪) নাট্যচর্চাতেও আগ্রহী ছিলেন তিনি। ১৯৩৫-৩৬ সালে শখের অভিনয়ও করেছেন। বেঙ্গল ইমিউনিটির প্রচার সচিব থাকাকালে সিনেমার প্রচার কাজের সূত্রে সিনেমা জগতের সঙ্গে প্রেমেন্দ্র মিত্রের যোগাযোগ শুরু হয়। পরবর্তী কালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘...কলম আমাদের প্রয়োজনের ভাত-কাপড় দিতে পারেনি। তাই ভাতকাপড়ের তাগিদেই আমরা কলম থেকে ছবিতে আসি।’ ১৯৩৭ সালে চারু রায়ের পরিচালনায় ‘গ্রহের ফের’ ছবির চিত্রনাট্য লেখার মধ্য দিয়ে তাঁর চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ। এর পর সুশীল মজুমদারের ‘রিক্তা (১৯৪০) ছবির জন্য তিনি যে গানগুলি লেখেন সেগুলি ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের সুরে খুব খ্যাতি লাভ করে। ১৯৪৩ সালে ‘সমাধান’ ছবির পরিচালক রূপে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। তিনি মোট ১৪টি ছবি পরিচালনা করেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রকে বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ ছবির জনক বললেও অত্যুক্তি হয় না।

১৯৪৮ সালে ‘বসুমিত্র’ ব্যানারে নিজের কাহিনি ও চিত্রনাট্যের উপর প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছবি ‘কালোছায়া’ তখনকার দিনে সফলতম এক রহস্য ছবি। হৃদয়াবেগের নয়, বুদ্ধির দৌড়ের ছবি। রুদ্ধশ্বাস ছবির একেবারে শেষ মুহূর্তে জানা বা বোঝা যেত আসল অপরাধী কে। প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক দুর্বল তখনকার দিনে উনি তাতে অভিনেতা ধীরাজ ভট্টাচার্যকে দিয়ে দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করিয়ে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিলেন। এর পর ‘নতুন খবর’ (১৯৪৭), ‘কুয়াশা’ (১৯৫০), ‘কাঁকনতলা লাইট রেলওয়ে’ (১৯৫০), ‘হানাবাড়ি’ (১৯৫২), ‘ময়লা কাগজ’ (১৯৫৩), ডাকিনীর চর’ (১৯৫৫) ... এমন অনেক ছবি তিনি পরিচালনা করেছেন। অভিনেতা ধীরাজ ভট্টাচার্যকে এত বিবিধ চরিত্রে প্রেমেন্দ্র মিত্র ছাড়া আর কোনও পরিচালক ব্যবহার করেছেন বলে মনে পড়ে না।

পরবর্তী কালের অনেক প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা যেমন সুখেন দাস, অনিল চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায় তাঁর ছবিতেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁর পরিচালিত শেষ ছবি ‘চুপি চুপি আসে’ (১৯৬০)–তে আমরা প্রথম অভিনেতা তরুণকুমারকে অ্যান্টি হিরোর ভূমিকায় পাই। তাঁর কাহিনিনির্ভর ছবি করেছেন ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায় (ডিজি), অসিত সেন, দেবকীকুমার বসু, পূর্ণেন্দু পত্রী, সত্যজিৎ রায়, তরুণ মজুমদার, মানু সেন, মৃণাল সেনের মতো বহু খ্যাতিমান পরিচালক।

শুভায়ু সাহা। খাগড়া, মুর্শিদাবাদ

প্রবাহ থেকে বিচার

• জনপ্রিয় অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার সূত্রে (‘আমার প্রথম ছবি’, রবিবাসরীয়, ১৭-৪) চিত্রপরিচালক অজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা। তিনি আমার জনপ্রিয় বেতারনাটক ‘প্রবাহ’ শুনে প্রচারের পর দিনই দেখা করেন আমার সঙ্গে। সঙ্গে ছিলেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। অজিতবাবু আমার সম্মতি নিয়ে প্রবাহের নাম দেন ‘বিচার’। এতে অভিনয় করেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, কালী ব্যানার্জি এবং আরও অনেক নামকরা শিল্পী। নায়কনায়িকার ভূমিকায় ছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায় ও তনুশ্রী শঙ্কর।

পরানদার কথায় একটু ভুল আছে। আমি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশন ডিরেক্টর। অবশ্য কয়েক দিন পরেই আমি স্টেশন ডিরেক্টর হয়ে গ্যাংটক রেডিয়ো স্টেশনে যোগদান করি। আর, ‘বিচার’ ছবির গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুরকার অজয় দাস।

সূর্য সরকার। কলকাতা-৭৮

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন