Editorial news

নেতাজির সাম্প্রদায়িকতা বিরোধিতা কি মোদী-শাহ জুটি মানতে পারবেন?

দু’টি ক্ষেত্রেই যিনি আদ্যোপান্ত আপসহীন। সুভাষচন্দ্রের জ্বলন্ত দেশেপ্রমের সঙ্গে এই প্রখর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধিতা মেনে নিতে পারবেন কি মোদি-শাহ জুটি?

Advertisement

শিবাজীপ্রতিম বসু

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫২
Share:

দেশপ্রেম আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, দু’টি ক্ষেত্রেই যিনি আদ্যোপান্ত আপসহীন ছিলেন। —ফাইল চিত্র।

কংগ্রেস কবে ‘বন্দেমাতরম্’-এর প্রথম দু’টি স্তবক ছাড়া বাকি গান গাওয়া বন্ধ করে? ১৯৩৭ সালে, সংখ্যালঘু মানুষ ওই গানের বাদবাকি অংশে দেবী দুর্গার যে বন্দনা আছে, সে ব্যাপারে আপত্তি করেছিলেন, তাই এই সিদ্ধান্ত। কার্যসমিতির যে উপসমিতি ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে তার মধ্যে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে অন্যতম সদস্য ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু, যাঁর ঐতিহ্যের উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে বিজেপি লোকসভায় বাংলা থেকে ভোট চাইছে। কিন্তু নেতাজি তো এমনটাই ছিলেন— দেশপ্রেম আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, দু’টি ক্ষেত্রেই যিনি আদ্যোপান্ত আপসহীন। সুভাষচন্দ্রের জ্বলন্ত দেশেপ্রমের সঙ্গে এই প্রখর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধিতা মেনে নিতে পারবেন কি মোদি-শাহ জুটি?

Advertisement

আসলে সুভাষচেন্দ্রর দেশপ্রেম ও জীবনদর্শন এমনই আপসহীন দু’ধারী তলোয়ার, যা ঠিকমতো না বুঝে যেমন-তেমন ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীরই বিপদ হতে পারে। অথচ, লোকসভায় ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। কেবল সাভারকর, শ্যামাপ্রসাদ বা দীনদয়াল উপাধ্যায়ে সবার, বিশেষত বাংলার, মন মজছে না। তাই বিবেকানন্দ চাই, নেতাজিও। গরজ বড় বালাই!

তবে ট্র্যাক রেকর্ড দেখলে বোঝা যাবে, মহামানবদের ইমেজ ব্যবহার করার ব্যাপারে বিজেপি বেশ বাছাই-পন্থী। যেমন, গাঁধীজির নিয়েছে চশমা ও ঝাঁটা, পটেলের স্বাধীনোত্তর ভারতে দেশীয় রাজ্যগুলি যুক্তরাষ্ট্রে মিশিয়ে দেওয়ার গৌরব। কিন্তু খেয়াল করেনি, ত্রিপুরী কংগ্রেসে সুভাষচেন্দ্রর সভাপতিত্বের তীব্র বিরোধিতা কেবল গাঁধীজি করেননি, পটেলও করেছিলেন।

Advertisement

সুভাষ ছিলেন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দূত, শাহরা এই জীবনদর্শন কী বুঝবেন?

বস্তুত, পটেলের সঙ্গে সুভাষচেন্দ্রর বিরোধিতার ইতিহাস অতি পুরনো। এতটাই যে, পটেলের দাদা বিঠ্ঠল ভাই, নেতাজির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজকে অর্থসাহায্য করতে চাইলে তার বিরোধিতা করেন বল্লভভাই পটেল স্বয়ং! আর এককালের স্বাধীনতা সংগ্রামী, পরে রাজনৈতিক হিন্দুত্বের উদ্গাতা, সাভারকর যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজদের জন্য সৈন্য সংগ্রহ করছিলেন তখন নেতাজি দাঁতে দাঁত চেপে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অরণ্য-পাহাড়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন।

তাই, একই সঙ্গে পটেল, সাভারকর আর সুভাষচেন্দ্রকে ‘আইকন’ বানানোর তেলে-জলে মেশানোর চেষ্টা শেষ পর্যন্ত হালে পানি পাবে তো!

তবে ওই যে বললাম, গরজ বড় বালাই। সুভাষচেন্দ্রর আত্মত্যাগের ইমেজ কেবল বাংলায় নয়, সারা ভারতে, এমনকি, এশিয়ার নানা দেশে আজও উজ্জ্বল। এই ভাবমূর্তি আত্মত্যাগের, সম্প্রীতির। ইংল্যান্ডে রজনী পাম দত্তকে এক সাক্ষাত্কারে সুভাষবাবু বলেছিলেন, সারা ভারতে ঐক্য বিধান করতে হলে রোমান হরফে লেখা উর্দুকেই জাতীয় ভাষা করতে হবে। এটা মোদি-শাহরা জানেন কি? জানলেও মানবেন কি?

আরও পড়ুন: নানা ভূমিকায় নেতাজি, আনন্দবাজার আর্কাইভে

(লেখক রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement